Homeঅনুসন্ধানী প্রতিবেদনতাল্লু স্পিনিং ও মিথুন নিটিংয়ের ব্যবসায়িক ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা

তাল্লু স্পিনিং ও মিথুন নিটিংয়ের ব্যবসায়িক ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা

সিনিয়র রিপোর্টার : তাল্লু স্পিনিং মিলস লিমিটেড ও মিথুন নিটিং অ্যান্ড ডায়িং লিমিটেডের ব্যবসায়িক ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে কোম্পানি দুটির নিরীক্ষক। দীর্ঘদিন ধরে ধারাবাহিক লোকসান ও আর্থিক দুর্বলতার কারণে কোম্পানি দুটির সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২০-২১ হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠ এসেছে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের দুই কোম্পানির বিষয়ে এ শঙ্কার কথা জানিয়েছে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান আশরাফ উদ্দীন অ্যান্ড কোম্পানি।

তাল্লু স্পিনিং মিলসের ২০২০-২১ হিসাব বছরে কোম্পানিটির পুঞ্জীভূত ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এদিকে মিথুন নিটিং অ্যান্ড ডায়িং লিমিটেডের চট্টগ্রাম রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (সিইপিজেড) কাছে লিজ, শ্রমিকদের বেতন ও অন্যান্য ব্যয় বাবদ কোম্পানিটির ১০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে।

তাল্লু স্পিনিং মিলসের বিষয়ে নিরীক্ষক তার মতামতে উল্লেখ করেছে, ২০১৮-১৯ হিসাব বছরে ২৪ কোটি ৩০ লাখ, ২০১৯-২০ হিসাব বছরে ৩০ কোটি ৮ লাখ এবং ২০২০-২১ হিসাব বছরে ২৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে কোম্পানিটির। কোম্পানিটির এমন আর্থিক পারফরম্যান্সের কারণে এর ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।

২০২০-২১ হিসাব বছরে কোম্পানিটির সুদ বাবদ আর্থিক ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এর বিপরীতে এ সময়ে কোম্পানিটির ১০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা পরিচালন লোকসান হয়েছে। ফলে কোম্পানিটির ইন্টারেস্ট কাভার রেশিও ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে।

আর্থিক ব্যয় পরিশোধের সক্ষমতা না থাকায় কোনো কারণে যদি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কোম্পানিটির ঋণ পুনঃতফসিল করতে অস্বীকৃতি জানানো হয় তাহলে কোম্পানি চলতি মূলধন ও তহবলি সংকটে পড়বে। এসব কারণে কোম্পানিটির ব্যবসায়িক ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

নিরীক্ষক আরো জানিয়েছে, এরই মধ্যে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আইনি পদক্ষেপ নেয়া শুরু হয়েছে। এসব আইনি পদক্ষেপের ফলাফল কোম্পানির প্রত্যাশা অনুসারে নাও হতে পারে। ২০২০-২১ হিসাব বছরে কোম্পানিটির পুঞ্জীভূত ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। ধারাবাহিক লোকসান সত্ত্বেও কোম্পানির ব্যবসায়িক ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা নেই বলে মনে করছে এর ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ।

তারা নিরীক্ষককে জানিয়েছে বিদম্যান অবস্থা পরিবর্তনে পর্যাপ্ত পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। উৎপাদন সক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে নতুন গ্রাহকদের কাছে বিক্রির পরিমাণ বাড়ানো সম্ভব হয়েছে। বিক্রি বাড়ার বিষয়টি কোম্পানির আর্থিক ব্যয় পরিশোধে সহায়ক হয়েছে। কোম্পানিটির তারল্য অনুপাত চলতি দায় পরিশোধের জন্য সন্তোষজনক অবস্থানে নেই। কোম্পানিটি বর্তমানে পাঁচজন গ্রাহকের সঙ্গে ব্যবসা করছে। ঝুঁকি কমাতে সামনের দিনগুলোয় আরো নতুন গ্রাহকের সঙ্গে চুক্তির চেষ্টা করা হচ্ছে। কোম্পানি বর্তমানে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নিয়ে কিছু সমস্যার মধ্যে রয়েছে। তবে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ঋণ পুনঃতফসিল করার উদ্যোগ নেয়ার মাধ্যমে চলতি মূলধনের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে কাজ করছে।

লোকসানের কারণে ২০১৯, ২০২০ ও ২০২১ হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো লভ্যাংশ না দেয়ার সুপারিশ করেছে তাল্লু স্পিনিং মিলসের পরিচালনা পর্ষদ। এর আগের কয়েক হিসাব বছরেও কোম্পানিটির বিনিয়োগকারীরা কোনো লভ্যাংশ পাননি। ৩০ জুন সমাপ্ত ২০২০-২১ হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৩ টাকা ২১ পয়সা। আগের হিসাব বছরে যেখানে লোকসান ছিল ৩ টাকা ৩৭ পয়সা।

মিথুন নিটিং অ্যান্ড ডায়িংয়ের নিরীক্ষক কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদনে তার মতামতে জানিয়েছে, কোম্পানিটি এর দুটি সাবসিডিয়ারি কোম্পানি পিউর কটন নিটওয়্যারস লিমিটেড ও টয়ো কম্পোজিট নিট গার্মেন্টস লিমিটেডের ৩০ জুন সমাপ্ত ২০২১ হিসাব বছরের নিরীক্ষিত প্রতিবেদনে অগ্রিম, আমানত ও আগাম পরিশোধের বিষয়ে বড় ধরনের ভুল তথ্য দিয়েছে। এতে কোম্পানিটির আর্থিক বিবরণীতে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে।

বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আয়োজন, নিরীক্ষিত হিসাব, অর্ধবার্ষিক ও প্রান্তিক হিসাব এবং তালিকাভুক্তি ফি বিলম্বে পরিশোধের বিষয়টি সিকিউরিটিজ আইনানুসারে জরিমানাযোগ্য অপরাধ। কোম্পানি এসব আইন লঙ্ঘনের বিষয়টি উল্লেখ করেনি। কোম্পানির কার্যক্রম স্থগিতের বিষয়ে কোনো ধরনের পাবলিক ডিসক্লোজার দেয়া হয়নি।

নিরীক্ষক তার মতামতে মিথুন নিটিং অ্যান্ড ডায়িংয়ের বিষয়ে আরো জানিয়েছে, ২০১৮-১৯ হিসাব বছরে ১৫ কোটি ২২ লাখ ও ২০১৯-২০ হিসাব বছরে ২৩ কোটি ৯ লাখ টাকা পরিচালন লোকসান হয়েছে কোম্পানিটির। আলোচ্য দুই হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয়ও (ইপিএস) ছিল ঋণাত্মক। এছাড়া ২০২০ হিসাব বছরে কোম্পানিটির সংরক্ষিত আয়ও ঋণাত্মক ছিল, যা উদ্বেগজনক। এসব কারণে কোম্পানিটির ব্যবসায়িক ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

চট্টগ্রাম রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (সিইপিজেড) কাছে লিজ, শ্রমিকদের বেতন ও অন্যান্য ব্যয় বাবদ কোম্পানিটির ১০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে। এ অর্থ পরিশোধ না করার কারণে এরই মধ্যে সিইপিজেড কর্তৃপক্ষ লিজ চুক্তি বাতিল করেছে এবং লিজকৃত সম্পত্তি হস্তান্তরের আদেশ দিয়েছে।

লোকসানের কারণে ২০১৯, ২০২০ ও ২০২১ হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি মিথুন নিটিং অ্যান্ড ডায়িং। উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ৩০ জুন সমাপ্ত ২০২০-২১ হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি কোনো আয় বা লোকসান ছিল না। তবে আগের হিসাব বছরে শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ৭ টাকা ১১ পয়সা।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সাত দিনের সর্বাধিক পঠিত