Homeঅর্থনীতিরাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকসহ সাত প্রতিষ্ঠানের আমানত নবায়নের আবেদন

রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকসহ সাত প্রতিষ্ঠানের আমানত নবায়নের আবেদন

সিনিয়র রিপোর্টার :  রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের মেয়াদী আমানত (এফডিআর) নবায়ন করার অনুরোধ জানিয়েছে আইসিবি। পুঁজিবাজারের নাজুক অবস্থার কথা বিবেচনা করে এই এই অনুরোধ করেছে সরকারি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানটি।

সোমবার (১৬ মে) আইসিবির পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে সময় চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

বেশ কয়েকটি ব্যাংক থেকে নেরওয়া ঋণ ও ঋণের কিস্তি পরিশোধের পাশাপাশি মেয়াদ পূর্ণ হয়ে হয়ে যাওয়া এফডিআরেরর অর্থ ফেরত দিতে চাপে পড়েছে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। অর্থ পরিশোধে শেয়ার বিক্রি করে বিনিয়োগের একাংশ প্রত্যাহার করতে হচ্ছিল। তাতে পুঁজিবাজারে বিক্রি চাপ বেড়ে যাওয়ায় সামগ্রিক বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে যাওয়া, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ, টাকার মূল্য পতন, মূল্যস্ফীতি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব ও শ্রীলংকা পরিস্থিতিজনিত সৃষ্ট ভয়ের কারণে পুঁজিবাজারে এমনিতেই কিছুটা অস্থিরতা চলছে। এমন পরিস্থিতিতে যেখানে বিনিয়োগ বাড়িয়ে বাজারকে আইসিবির সাপোর্ট দেওয়ার কথা, সেখানে উল্টো তারা-ই শেয়ার বিক্রি করতে থাকায় বাজারে বড় দরপতন হয়। এই বাস্তবতায় কোম্পানিটি এফডিআর নবায়নের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো যাতে আইসিবিকে ঋণ পরিশোধে বাড়তি সময় দেয়, এফডিআরের অর্থ ফিরিয়ে না নিয়ে তা নবায়ন করে সে লক্ষ্যে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) কাজ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সাথে টেলিফোন করে এই বিষয়ে অনুরোধ জানিয়েছেন। এর প্রেক্ষিতে ব্যাংকটি আইসিবিকে সময় দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

ঋণ পরিশোধে সময় পেলে ও এফডিআর নবায়ন হলে আইসিবিকে আর শেয়ার বিক্রি করে অর্থ সংগ্রহ করতে হবে না। বরং সম্প্রতি যে শেয়ার তারা বিক্রি করেছে, তা আবার পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারবে।

জানা গেছে, আইসিবি বিভিন্ন সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটিতে পেট্রোবাংলা ও পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানিসহ সরকারী বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের এফডিআর রয়েছে।

সম্প্রতি কিছু ঋণ ও এফডিআরের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ায় সেগুলোর অর্থ পরিশোধ করতে হবে। এছাড়া নিয়মিত কিস্তিও আছে। অন্যদিকে সোনালী ব্যাংক সম্প্রতি আইসিবিকে দেওয়া ঋণের পুরো অর্থ ফেরত চেয়েছে। এই ঋণের অর্থ সোনালী ব্যাংকের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগসীমা (Exposure Limit) অতিক্রম করে গেছে মর্মে বাংলাদেশ ব্যাংক সোনালী ব্যাংককে তা সমন্বয়ের জন্য চাপ দেওয়ায় ব্যাংকটি আইসিবির কাছে টাকা ফেরত চেয়েছে। সব মিলিয়ে ঋণ পরিশোধে বেশ চাপের মুখে আছে আইসিবি।

চলতি মে মাসে ঋণ ও ঋণের কিস্তি পরিশোধে প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ৭০০ কোটি টাকা প্রয়োজন বলে জানা গেছে। এই বাস্তবতায় আইসিবি গত কয়েকদিন ধরে স্টক এক্সচেঞ্জের পাবলিক মার্কেট ও ব্লক মার্কেটের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ শেয়ার বিক্রি করেছে, যার চাপ নিতে পারেনি বাজার। এতে বাজারে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। শেয়ারের দাম ও মূল্যসূচকের বড় পতন ঘটেছে।

ঋণ পরিশোধে বাড়তি সময় পেলে আইসিবিকে এখন আর কোনো শেয়ার বিক্রি করতে হবে না। উল্টো সম্প্রতি শেয়ার বিক্রি করে যে বিনিয়োগ তুলে নিয়েছে, ওই টাকা আবার বিক্রি করতে পারবে। নতুন করে শেয়ার কিনতে পারবে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, আইসিবির পাওনা পরিশোধের চাপ যাতে না থাকে সে লক্ষ্যে তারা কাজ করছেন। ইতোমধ্যে আইসিবি এই বিষয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে সময় চেয়েছে। একটি প্রতিষ্ঠান সময় দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

বাকীরাও আইসিবির আবেদনে সাড়া দেবে বলে আমাদের বিশ্বাস। বিএসইসিও প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে যোগাযোগ করে বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় আইসিবি সময় দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছে। ঋণ পরিশোধে আইসিবি যে চাপে ছিল, আগামী দু’তিন দিনের মধ্যে সেই চাপ কমে যাবে। আর আগামীকাল থেকেই তারা বাজারে নতুন বিনিয়োগ বাড়াবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সাত দিনের সর্বাধিক পঠিত