Homeঅর্থনীতিপারফিউম বা সুগন্ধির দাম বেড়ে আকাশচুম্বী কেন

পারফিউম বা সুগন্ধির দাম বেড়ে আকাশচুম্বী কেন

ডেস্ক রিপোর্ট : বিলাসদ্রব্যের ক্ষেত্রে পারফিউম বা সুগন্ধির চাহিদা বরাবরই বেশি। কিন্তু সম্প্রতি বিশ্ববাজারে প্রিমিয়াম মানের পারফিউমের দাম বেড়ে আকাশচুম্বী হয়ে উঠেছে। না, এর প্রধান কারণ মূদ্রাস্ফীতি নয়। বরং আপনি জেনে অবাক হবেন, ভোক্তাদের আচরণের কারণেই এই পণ্যটির দাম তরতর করে বাড়ছে।

মহামারিকালে মানুষের জীবনে যে দুশ্চিন্তা ও অনিশ্চয়তা চলে এসেছে, তা থেকে সাময়িক মুক্তি পেতেই পারফিউমের দিকে ঝুঁকেছেন তারা!

মার্কেট রিসার্চ ফার্ম এনপিডি সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে সুগন্ধি পণ্যের খুচরা গড় মূল্য বেড়েছে ১৫ শতাংশ যা এর আগের দুই বছরের তুলনায় তিনগুণ!

এনপিডি’র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও বিউটি ইন্ডাস্ট্রি উপদেষ্টা লারিসা জেনসেন বলেন, “পারফিউমের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ সাধারণ মুদ্রাস্ফীতি নয়। মহামারিকালে আমরা দেখেছি যে ভোক্তারা প্রিমিয়াম সুগন্ধি কেনার দিকে বেশি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

টিএসি পারফিউমস

আমাদের থিওরি হচ্ছে, মানুষ যখন মহামারিকালে ঘরে-বাইরে খুব কঠিন সময় পার করছিলো, তখন তারা বিলাসদ্রব্যের মাধ্যমে নিজেদের একটু ভালো রাখার বা মন ভালো করার চেষ্টা করেছে। সুগন্ধি আমাদের কিছু সময়ের জন্য এক অন্য দুনিয়ায় নিয়ে যায়, যেন কঠিন বাস্তবতা থেকে দূরে, সৌন্দর্য্য ও আবেগপূর্ণ এক জগতে প্রবেশ করি তখন আমরা।”

তবে আমেরিকান ক্রেতারা এর পাশাপাশি খাবার, আসবাবপত্র, জামাকাপড়, জুতা ও গাড়ির পেছনেও বেশ মোটা অংকের টাকা ব্যয় করে চলেছেন। তাই প্রসাধনী ও সেলফ-কেয়ার এর ক্ষেত্রে এই ব্যয় খুব অবাক হওয়ার মতো বিষয় নয়।

মহামারিকালে যেসব শিল্পে অভাবনীয় প্রসার ঘটেছে, তার মধ্যে একটি হলো সুগন্ধি শিল্প। অ ডি পারফিউম, যার মধ্যে সুগন্ধি তেলের মাত্রা বেশি থাকে এবং একবার দিলেই দীর্ঘ সময় সুগন্ধ বজায় থাকে- এমন পারফিউমের দাম অনেক বেশি এবং বাজারে এর চাহিদাও প্রচুর। ২০২০ সালে শুধুমাত্র পারফিউম (হোম সেন্ট বাদে) বিক্রির পরিমাণই বেড়েছে ৫২ শতাংশ!

এদিকে ইউনিট হিসাবে ২০২১ সালে ১৭৫ ডলারের বেশি দামের পারফিউমগুলোর বিক্রি বেড়েছে দ্বিগুণ।

বিশুদ্ধ বাতাস আর প্রশান্তি : প্রেস্টিজ পারফিউম প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান এস্টে লডার কোম্পানিস-এর গ্রুপ প্রেসিডেন্ট স্টেফানি ডি লা ফেভারি জানান, পারফিউম ব্যবহারে ক্রেতাদের এই ঝোঁকের প্রভাব পড়েছে তাদের বিক্রিবাট্টার উপরেও।

টিএসি পারফিউমস

টিএসি পারফিউম প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান শতাধিক পদের সুগন্ধি বিক্রি করছে। ভোক্তাদের রুচির বৈচিত্র্য ভেদে দেশ এবং দেশের বাইরে বিপনন করছে। মানুষের রুচির বিষয়টি এখানে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

এস্টে লডার ও আইরিন এর গ্লোবাল ব্র্যান্ড প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন ফেভারি। উচ্চমানসম্পন্ন সুগন্ধি, যেমন- জো মেলন লন্ডন, লে লাবো এবং বাই কিলিয়ানসহ এস্টে লডার ও আইরিনের সুগন্ধিগুলোর পোর্টফোলিও দেখাশোনা করেন ফেভারি। যেসব লাক্সারি পারফিউম অন্যগুলোর চাইতে একটু আলাদা এবং বেশি পরিশুদ্ধ, সেগুলোর চাহিদাই সবচেয়ে বেশি।

ডি লা ফেভারি বলেন, “আমরা খুবই আশাবাদী যে আগামী দিনগুলোতেও লাক্সারি পারফিউমের প্রতি ভোক্তাদের চাহিদা থাকবে। এর জন্য নতুন নতুন পারফিউম উদ্ভাবনকে ধন্যবাদ জানাতেই হয়, ভোক্তারা সবসময়ই চায় তাদের কাছে সামান্য হলেও একটা বিলাসদ্রব্য থাকুক।”

ভালো মানের পারফিউমের প্রতি ভোক্তাদের আগ্রহ বাড়তে থাকায় প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের বিভিন্ন বাড়তি সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছে। যেমন- স্যাম্পল বোতলের মাধ্যমে সুগন্ধি পরখ করার সুযোগ, উপহার কিংবা ভার্চুয়াল আলোচনার মাধ্যমে কাস্টমাইজ করার সুবিধা।

ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার জন্য এ ধরনের কিছু কৌশল বেছে নিয়েছে পারফিউম সাবস্ক্রিপশন সার্ভিস ‘সেন্টবার্ড’। মাসিক ১৫ দশমিক ৯৫ ডলারের বিনিময়ে তারা তাদের ৪৫০,০০০ সাবস্ক্রাইবারকে লাক্সারি সুগন্ধিগুলোর ছোট্ট ট্রায়াল সাইজ শিশি পাঠায়। এর মাধ্যমে ভোক্তারা বিভিন্ন ধরনের সুগন্ধি পরখ করে নিজেদের পছন্দমতো একটি ফুল-সাইজ বোতল কিনতে পারেন।

মহামারির প্রথম বছরেই সেন্টবার্ডের সাবক্রাইবার সংখ্যা এক লাফে ৫০ শতাংশ বেড়ে যায় বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির বিজনেস ডেভলপমেন্ট, মার্চেনডাইজিং অ্যান্ড হোলসেল শাখার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট বেটিনা ও’নিল।

তিনি বলেন, “আমরা বুঝতে পারছিলাম যে মহামারির কারণে দীর্ঘদিন মানুষ ঘরবন্দী হয়ে থাকায় তারা এমন কিছু খুঁজছিল যা তাদের একটা সুন্দর অনুভূতি দিবে। তাই তারা নিজেদের জন্য সুগন্ধি ও ঘরের জন্য সুগন্ধি মোমবাতি কিনতে শুরু করে।”

প্রেস্টিজ পারফিউমে সাধারণত তেলের পরিমাণ বেশি থাকে এবং দামি উপাদান ব্যবহার করা হয়, জানালেন বেটিনা। তাই চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন ব্যয়ও বেড়ে যায়।

বেটিনা আরও বলেন, “শ্যানেল নাম্বার ফাইভ হচ্ছে এর সবচেয়ে ভালো উদাহরণ। এই পারফিউম তৈরির একটি মূল উপকরণ হচ্ছে বিরল জাতের একটি ফুল। আরেকটি জনপ্রিয় প্রেস্টিজ পারফিউম হলো ম্যাসন ফ্রান্সিস কুর্কজিয়ানের ব্যাকারা রুশ ৫৪০। এর ২ দশমিক ৪ আউন্সের একটি বোতলের দাম ৩০০ ডলারের উপরে এবং ৬ দশমিক ৮ আউন্স বোতলের ক্ষেত্রে আপনাকে গুনতে হবে ৬০০ ডলারেরও বেশি। এর মধ্যে আছে জুঁই ফুল ও জাফরানের মতো দামি উপাদানের সংমিশ্রণ।

টিকটকে #ব্যাকারারুশ৫৪০ এর ১২৪ দশমিক ১ মিলিয়ন ভিউই প্রমাণ করে দেয় যে এটি কতটা জনপ্রিয়!”

তবে বর্তমানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম আরও বেড়ে যাওয়ায় ভবিষ্যতেও মানুষ সুগন্ধির পেছনে এত টাকা খরচ করবে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ হয়েছে এনপিডি’র উপদেষ্টা লারিসা জেনসে্নের।

  • সূত্র: সিএনএন
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সাত দিনের সর্বাধিক পঠিত