সকল মেনু

কনডেন্সড মিল্কের কমেছে বিক্রি, ৪০ শতাংশ বেড়েছে উৎপাদন খরচ

সিনিয়র রিপোর্টার : দেশে উৎপাদিত কনডেন্সড মিল্ক, যা একসময় দুধ চা ও কফির সাথে মিশিয়ে পান করার জন্য জনপ্রিয় ছিলো। তবে বর্তমানে এর থেকে সাশ্রয়ী ও স্বাস্থ্যকর বিকল্প খুঁজছেন গ্রাহকরা।

কয়েক বছর আগে কনডেন্সড মিল্কের বাজার যে হারে সম্প্রসারিত হয়েছিলো এখন তা অনেকটাই বিপরীতমুখি। করোনা মহামারির সময় জনসাধারণ ফুটপাতের দোকানগুলোতেও চা পান বন্ধ করে দিয়েছে এবং গত ২ বছরের তুলনায় বাজারে কনডেন্সড মিল্কের দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। এতে প্রায় ১৫ শতাংশ বিক্রয় কমেছে কনডেন্সড মিল্কের। সেই সাথে অন্য বিকল্পের দিকে ঝুঁকছেন ভোক্তারা।

মেঘনা গ্রুপের সিনিয়র ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (সেলস ও মার্কেটিং) আহসান উল্লাহ বলেন, করোনা পরবর্তী সময়ে জনসাধারণের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সময় ফুটপাতের দোকানগুলোতে চা পানের প্রবণতা কমা এবং উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে কনডেন্সড মিল্কের বাজারে প্রভাব ফেলেছে।

দেশে বর্তমানে ৪টি কনডেন্সড মিল্ক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান রয়েছে- মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের উৎপাদিত ‘নাম্বার ১’, আবুল খায়ের কনডেন্সড মিল্ক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ‘স্টার শিপ’, পারটেক্স গ্রুপের সহযোগী সংস্থা ডেনিশ কনডেন্সড মিল্ক বাংলাদেশ লিমিটেডের ‘ডেনিশ’ এবং এসএ কনডেন্সড মিল্ক লিমিটেডের ‘গোয়ালিনী’।

শিল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, দেশে ৪০ শতাংশ মানুষ যে কোনোভাবে কনডেন্সড মিল্ক খেয়ে থাকে। অর্থাৎ এর বার্ষিক চাহিদা ৫০ লাখ কার্টন, যা প্রায় ১৫০ কোটি টাকা।

ডেনিশের হেড অব মার্কেটিং মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, করোনা মহামারির সময় থেকে জনসাধারণের স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে গ্রাহকরা বিকল্প খুঁজছে। তাই কনডেন্সড মিল্কের বাজার দিন দিন চাহিদা কমছে। এ সময় প্রায় ১৫ শতাংশ বিক্রি কমেছে। তবে কিছু প্রতিষ্ঠানের ৩৫ শতাংশ মার্কেট শেয়ার রয়েছে এবং প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তাদের প্রায় দুই কোটি গ্রাহক রয়েছে। তারা তাদের পণ্যে মানের উপর বেশি নজর দিচ্ছে বলে জানান তিনি।

কনডেন্সড মিল্ক উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামালের জন্য বিশ্ববাজারের ওপর নির্ভরশীল বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, চীন ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বেশিরভাগ উপাদান আমদানি করতে হয়।

শিল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, বিশ্ববাজারে চিনি, পাম ও সয়াবিন এবং দুধের ক্রিমসহ প্রয়োজনীয় উপাদানের দাম বৃদ্ধির কারণে গত দুই বছরে কনডেন্সড মিল্কের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। উৎপাদন খরচ বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ।

দেশীয় বাজারে ক্রমাগত বিক্রি কমার কারণে লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছে বেশিরভাগ কোম্পানি। ফলে অনেক কোম্পানি বাজারে টিকে থাকতে পারছে না।

২০০১ সালে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত হয় মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক ইন্ডাস্ট্রিজ। গত কয়েক বছর ধরে ক্রমাগত লোকসানে রয়েছে কোম্পানিটি। ২০২০ সালের জুনের তথ্য অনুসারে, কোম্পানিটির মোট আয় ছিল ৩.৬১ কোটি টাকা এবং নিট লোকসান ছিল ১২.২৭ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক ইন্ডাস্ট্রিজ এবং মেঘনা পিইটি ইন্ডাস্ট্রিজকে গত বছরের মে মাসে তাদের চলমান লোকসানের ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দিয়েছে।

শিল্পটি ধরে রাখার জন্য করণীয় : এ খাতে প্রতিযোগিতা কম থাকায় কিছু দুগ্ধ কোম্পানি এ ব্যবসায় জড়িত আছে। তারা বর্তমান বাজারের চাহিদা অনুযায়ী তাদের পণ্য আরও আকর্ষণীয় করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে তারা বাজার মন্দা থাকার পরও লাভবান হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যদি উচ্চমানের কনডেন্সড মিল্ক উৎপাদন করতে পারে, তাহলেই এ শিল্প ধরে রাখা যাবে। সেই সাথে রপ্তানি বাজারেও ভূমিকা রাখবে।

বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) রসায়নবিদরা কোম্পানির নমুনা বিশ্লেষণ করে দুধের চর্বির পরিবর্তে এতে উদ্ভিজ্জ চর্বির অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন, যা পেটের রোগের কারণ হতে পারে। ফলে ২০০৩ সালে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হওয়ায় ৪টি স্থানীয় কনডেন্সড মিল্ক কোম্পানির উৎপাদনের লাইসেন্স বাতিল করেছে সরকার।

২০০৭ সালে বিএসটিআই কনডেন্সড মিল্কে পাম বা সয়াবিন চর্বি দেয়ার জন্য একটি নতুন মান নির্ধারণ করার নির্দেশ দিয়েছে। কোম্পানিগুলোকে কমপক্ষে ২০ শতাংশ দুধ ব্যবহার করে কনডেন্সড মিল্ক তৈরি করতেও বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুগ্ধ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোঃ হারুন-উর-রশীদ বলেন, কনডেন্সড মিল্কে দুধের উপাদান থাকা দরকার, কিন্তু এর পরিবর্তে উদ্ভিজ্জ চর্বি ব্যবহার করছে দেশীয় ব্র্যান্ডগুলি। বাইরের দেশে, দুধের বিকল্প হিসেবে কনডেন্সড মিল্ক ব্যবহার করা হয়। কারণ এগুলো বেশিরভাগ দুধ থেকে তৈরি হয়। কিন্তু বাংলাদেশে কনডেন্সড মিল্কের ব্যবহার শুধু চা ও কফিতেই সীমাবদ্ধ।

কনডেন্সড মিল্ক মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তা সম্পূর্ণ নয়, রপ্তানি বাজার বাড়ানোর জন্য স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবারের প্রতি আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top