সকল মেনু

পাকিস্তান কী শ্রীলঙ্কা হওয়ার পথে!

ডেস্ক রিপোর্ট : আইএমএফ থেকে ৩ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চাইছে পাকিস্তান। এ পরিমাণ অর্থ দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে মাত্র দেড় মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো ডলার মজুদ আছে। এ বছরও ৪৫ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্য ঘাটতি ছিল।

ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতি আর জ্বালানির দাম, বিভক্ত রাজনৈতিক পরিবেশ। কয়েক মাস ধরেই অর্থনীতিকে সচল রাখতে লড়ে যাচ্ছে পাকিস্তান। বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশগুলির একটি পাকিস্তানও শ্রীলঙ্কার পথে হাঁটতে পারে এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, শিগগিরই ঋণ খেলাপি হয়ে যেতে পারে দেশটি।

বিনিয়োগকারীরা দুশ্চিন্তায় পড়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের বেইল আউট ছাড়া দ্বিতীয় বারের মতো ঋণ খেলাপি হতে পারে পাকিস্তান। গত বুধবার দোহায় দুই পক্ষের আলোচনা শেষ হওয়ার পর কর্মকর্তারা বলছেন, ঋণ পাওয়া নিশ্চিত করতে কিছু ছাড় দিতে হতে পারে। এরমধ্যে আছে ঊর্ধ্বমুখী জ্বালানির দামের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।

মঙ্গলবার ব্লুমবার্গ টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের ভারপ্রাপ্ত গভর্নর মুর্তজা সৈয়দ বলেন, “শেষ পর্যন্ত যেতে পারবো বলে আমাদের বিশ্বাস আছে”।

এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে মূল্যস্ফীতির বৃদ্ধির হারের দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে এখন পাকিস্তান। নির্ধারিত সময়ের আগে নির্বাচন দেওয়ার জন্য সমর্থকদের নিয়ে রাজধানীতে জমায়েত করতে পারেন দেশটির ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। এমন সংকটকালীন সময়েই এই আলোচনা শুরু হয়।

মহামারি, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন, ক্রমবর্ধমান সুদের হার- এসব কারণে টালমাটাল অবস্থায় দেশটির অর্থনীতি। ঋণের পুনর্গঠনের পথে হাঁটা অন্যতম দেশ পাকিস্তান।

আইএমএফ থেকে ৩ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চাইছে পাকিস্তান। এ পরিমাণ অর্থ দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে মাত্র দেড় মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো ডলার মজুদ আছে। এ বছরও ৪৫ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্য ঘাটতি ছিল।

বন্ডের বাজারেও ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের ছাপ পড়েছে। মঙ্গল ও বুধবার বেড়ে ৬৩ সেন্ট হলেও পাকিস্তানের এই ডলার ভিত্তিক বণ্ড চলতি মাসে ১৪ শতাংশ মূল্য হারিয়েছে। অথচ কোনো দেশের ডলার বন্ডে ৭০ এর নিচের মূল্যায়নকে সাধারণত বিনিয়োগকারীরা বেশ ঝুঁকিরই মনে করেন। কোনো দেশে মূল্যায়ন এত নিচে নামলে দেশটি পরবর্তীতে বন্ডের লভ্যাংশ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পূরণেও সমস্যায় পড়ে।

স্টকহোমের কোয়েলি ফ্রন্টিয়ার মার্কেটস এবি-তে ফ্রন্টিয়ার মার্কেটস ফিক্সড ইনকামের পোর্টফোলিও ম্যানেজার লার্স জ্যাকব ক্র্যাবে বলেন, “কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান”।

সরকার ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মধ্যকার সংকট পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে। সম্প্রতি ইমরানের দল তেহরাক-ই-ইনসাফ পুনরায় ক্ষমতায় যেতে নির্ধারিত সময়ের আগেই নির্বাচনের দাবি করছে। বুধবার ইসলামাবাদে বিক্ষোভের জন্য সমর্থকদের ডাক দিয়েছেন ইমরান খান।

অস্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে ইসলামাবাদ শহর। পার্লামেন্ট, দূতাবাস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ চিহ্নিত রেড জোনে ব্যারিকেড বসিয়েছে পুলিশ। তাণ্ডব ও সামাজিক অস্থিতিশীলতার আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে দেশটির সরকার জানিয়েছে, বিক্ষোভের অনুমতি দেওয়া হবে না।

আইএমএফের বিলম্বের সূত্রপাত সাম্প্রতিক সময়ে না। ইমরান খানের আমল থেকেই এর শুরু। এপ্রিলে ক্ষমতা ছাড়ার আগে জ্বালানি ও গ্যাসোলিনের দাম কমান ইমরান খান, চারমাস পর্যন্ত তা বহাল ছিল।

কিন্তু জ্বালানির ওপর ভর্তুকি উঠিয়ে না নেওয়ায় পাকিস্তানকে আরও অর্থ দিতে বিলম্ব করে আইএমএফ। ভর্তুকির পরিমাণ মাসে ৬০০ মিলিয়ন ডলার হওয়ার পরও দাম বাড়াতে বিলম্ব করছেন ইমরানের উত্তরসূরি শেহবাজ শরীফও। গম-চিনির মতো পণ্য কিনতে হিমশিম খাওয়া জনগণকে আরও ক্ষুব্ধ না করার পথই বেছে নিয়েছে সরকার।

স্টকহোমের তুন্দ্রা ফন্ডার এবি’র প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা ম্যাটিয়াস মার্টিনসন বলেন, “তিন সপ্তাহ আগেও আমি হয়তো বলতাম, পাকিস্তানের পরবর্তী শ্রীলঙ্কা হওয়ার সম্ভাবনা ০%। কিন্তু, নতুন সরকারের নিস্ক্রিয়তা বেশ উদ্বেগজনক”।

পাকিস্তানের কর্মকর্তারা বলছেন, ভর্তুকি বহাল থাকার পরও আইএমএফের সঙ্গে মধ্যস্ততায় পৌঁছানোর ব্যাপারে আতত্মবিশ্বাসী তারা। ব্লুমবার্গ টিভি সাক্ষাৎকারে সৈয়দ বলেন, “ঘাটতি পূরণ হচ্ছে,”। আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, আইএমএফ থেকে অর্থ দিয়ে সহজেই আগামী অর্থবছরের আগ পর্যন্ত বিভিন্ন ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব। ২০১৯ সালের রেসকিউ প্যাকেজ ছাড়াও অতিরিক্ত ২ বিলিয়ন ডলার চাইছে পাকিস্তান।

লন্ডনভিত্তিক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান এবিআরডিএনের এডউইন গুতিরেজ জানান, কিছুটা অস্থিরতা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না তারা, হোল্ডিং বিক্রি করে দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই কোম্পানিটির।

“রাজনৈতিক অবস্থার বিবেচনায় পরিস্থিতি কঠিন হবে, কিন্তু দিনশেষে পাকিস্তান বা আইএমএফ কেউ চলে যাচ্ছে না”, বলেন তিনি।


  •  ব্লুমবার্গ থেকে অনূদিত 

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top