সিনিয়র রিপোর্টার : পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত হওয়ার দুই বছরের মাথায় মালিকানা পরিবর্তন হচ্ছে বস্ত্র খাতের কোম্পানি রিং শাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের। ২০১৯ সালে তালিকাভুক্ত এই কোম্পানিটির শেয়ার কিনে মালিকানায় আসছে ইউনিয়ন গ্রুপ। এই গ্রুপটির রিং শাইনের মতোই একই ধরনের টেক্সটাইল কোম্পানিসহ কয়েকটি কোম্পানি রয়েছে।
রিং শাইন কোম্পানির শেয়ার কিনে মালিকানায় আসার লক্ষ্যে গত ১২ এপ্রিল পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) প্রস্তাব জমা দেয় ইউনিয়ন গ্রুপ। প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করে সম্মতি দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
বর্তমানে কোম্পানির শেয়ার সংখ্যা ৫০ কোটি ৩ লাখ ১৩ হাজার ৪৩টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে রয়েছে ৩১ দশমিক ৫৪ শতাংশ শেয়ার। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ১৬ দশমিক ২৩ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে দশমিক ৫ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ৫২ দশমিক ১৮ শতাংশ শেয়ার। কোম্পানিটির মালিকানায় আসতে ৩১ শতাংশ শেয়ার কিনতে হবে ইউনিয়ন গ্রুপকে।
এ বিষয়ে ইউনিয়ন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাকিবুল কবির বলেন, আমরা কারখানাটি পরিদর্শন করেছি। এখানে ম্যানেজমেন্ট ক্রাইসিস রয়েছে। আমাদের গ্রুপের একই ধরনের কারখানা রয়েছে। ফলে এই কারখানা পরিচালনা করতে আমাদের কী করতে হবে তার পরিকল্পনা তৈরি করেছি, নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে দিয়েছি।
এ বিষয়ে বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, নানা জটিলতায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির পর থেকেই কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর কোম্পানির পর্ষদ পরিবর্তন করেছি। এখন উৎপাদনও শুরু করেছে। ভালোভাবে উৎপাদনে ফিরতে কোম্পানিটি অধিগ্রহণ করতে চাচ্ছে ইউনিয়ন গ্রুপ। আমরা সম্মতি দিয়েছি।
কোম্পানির তথ্য মতে, প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে ১৫০কোটি টাকা উত্তোলন করে রিং শাইন। সাভারের ইপিজেডে অবস্থিত এই কোম্পানিটি এই টাকায় ঋণ পরিশোধ এবং মেশিনারিজ কেনার জন্য এই টাকা সংগ্রহ করে। তালিকাভুক্তির প্রথম বছর কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের ১৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দিয়েছিল। এরপর ২০২০ সাল থেকে উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। মালিকরা দেশ ছেড়ে চলে যায়। বর্তমানে ৩০ শতাংশ উৎপাদন চালু করেছে বিএসইসির নতুন গঠিত পরিচালনা পর্ষদ।
চীনের তাইওয়ানের মালিকানাধীন কোম্পানিটি পুরোদমে চালুর জন্য প্রয়োজন ফান্ড। গ্রুপটি সেই ধরনের ফান্ড দিয়ে কোম্পানিটিকে শতভাগ উৎপাদন চালু করবে। এতে বিনিয়োগকারীরা উপকৃত হবেন। পাশাপাশি নতুন করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
ইউনিয়ন গ্রুপের টেক্সটাইল, মোবাইল ফোন, এভিয়েশন, রিয়েল এস্টেটসহ বেশ কয়েকটি কোম্পানি রয়েছে। বিশ্বব্যাপী সোয়েটার শিল্পে সর্বোচ্চ পরিমাণ সুতা সরবরাহ করে থাকে তারা। বর্তমানে আট হাজার লোকের কর্মসংস্থান রয়েছে এ প্রতিষ্ঠানে।
এরআগে গত ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে রিং সাইন টেক্সটাইলের কারখানা পরিদর্শন করেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) গঠিত তদন্ত কমিটি।
তদন্তের বিষয়ে গত ৪ ফেব্রুয়ারি রিং শাইনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন অথরিটির (বেপজা) নির্বাহী চেয়ারম্যানকে এ-সংক্রান্ত চিঠি দিয়েছে বিএসইসি। তদন্তের বিষয়ে ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, রিং শাইনের আর্থিক সক্ষমতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে গঠিত তদন্ত কমিটি ৮ ফেব্রুয়ারি কারখানা পরিদর্শন করবে।
এর আগে গত ২৬ জানুয়ারি রিং শাইনের কোম্পানি পর্ষদ পুনর্গঠন করে বিএসইসি। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৩ ফেব্রুয়ারি কোম্পানির পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদকে ডেকে আর্থিক অবস্থা উন্নয়ন ও সার্বিক বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিয়েছে বিএসইসি।
চিঠিতে তদন্তের সময় কোম্পানির প্রথম সারির কর্মকর্তাদের থাকতে বলা হয়। সে অনুযায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে। ২০১৯ সালে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি বর্তমানে ‘এ’ ক্যাটেগরিতে রয়েছে। ২০১৯ সালে কোম্পানিটি ১৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দেয়।
কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ৫০০ কোটি টাকা। অনুমোদিত মূলধনের পরিমাণ হচ্ছে ৫৪০ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত কোম্পানির মোট শেয়ারের মধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের কাছে ৩১ দশমিক ৫৪ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে ১৬ দশমিক ২৩ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীর কাছে শূন্য দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে ৫২ দশমিক ১৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার ছয় টাকা ৪০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।