সকল মেনু

৯০২ কোটি টাকা বিনিয়োগে টাইলস প্ল্যান্ট করবে আরএকে সিরামিকস

নতুন কারখানা থেকে বছরে গড়ে ৯৩ কোটি টাকা করে মুনাফা আসতে পারে বলে কোম্পানিটি প্রাথমিকভাবে প্রাক্কলন করেছে। দেশে নির্মাণ সামগ্রীর ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে আরএকে সিরামিকস (বাংলাদেশ) লিমিটেড গাজীপুরে টাইলসের নতুন ফ্যাক্টরি নির্মাণে ৯০২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে।

গত সোমবার বিকেলে এক সভায় দেশের শীর্ষস্থানীয় এ টাইলস প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের বোর্ড বিনিয়োগের সিদ্ধান্তটি নেয়।

কোম্পানিটি গাজীপুরের ভুতুলিয়াতে ফ্যাক্টরি নির্মাণ করবে। এর জন্য কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এ কে একরামুজ্জামানের কাছ থেকেই ৬২.৭৩ কোটি টাকায় ৩৩.৯১ একর জমি কেনা হবে। তবে বাংলাদেশ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের যৌথ উদ্যোগের কোম্পানিটিকে জমি ক্রয় করতে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন নিতে হবে। তাই আগামী ৪ আগস্ট একটি বিশেষ সাধারণ সভার আয়োজন করা হয়েছে।

আরএকে সিরামিকসের সূত্র জানায়, নতুন ফ্যাক্টরিতে প্রতিদিন ১৫ হাজার বর্গমিটার টাইলস তৈরি করা যাবে। সেখানে ১,২০০- ১,৫০০ জনের কর্মসংস্থান হবে। তারা আশা করছে, ২০২৫ সালের দিকে নতুন ফ্যাক্টরি বাণিজ্যিক অপারেশনে যাবে। নতুন কারখানা থেকে বছরে গড়ে ৯৩ কোটি টাকা করে মুনাফা আসতে পারে বলে কোম্পানিটি প্রাথমিকভাবে প্রাক্কলন করেছে।

নতুন বিনিয়োগের বিষয়ে কোম্পানিটির প্রধান পরিচালনা কর্মকর্তা সাধন কুমার দে বলেন, নতুন কারখানায় ভ্যালু এডেড প্রিমিয়াম ক্যাটাগরির টাইলস উৎপাদন করা হবে। এখনও আমাদের দেশে প্রিমিয়াম ক্যাটাগরির টাইলস আমদানি করা হয়। আমরা সে বাজার ধরতে চাই।

সাধন কুমার, যিনি কোম্পানির  প্রধান আর্থিক কর্মকর্তাও আরও জানান, সারা বিশ্বে আরএকে টাইলসের সুনাম রয়েছে। যেসব দেশে আরএকের কারখানা রয়েছে; সব জায়গায় একই মানের টাইলস প্রস্তুত করা হয়।

অর্থায়নের উৎস নিয়ে তিনি বলেন, জুলাইয়ে কোম্পানিটির আরেকটি বোর্ড সভা হবে। সেখানে অর্থায়নের উৎস নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

তবে কোম্পানির একটি সূত্র জানায়, এ ক্ষেত্রে এফডিআই অর্থাৎ আমিরাতের বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা নেই। বিনিয়োগের সংস্থান দেশ থেকেই হবে। তবে ব্যাংক থেকে এ অর্থ নেওয়া হবে না- পুঁজিবাজার থেকে তোলা হবে সেটা নিশ্চিত হবে কোম্পানির বোর্ড সভায়।

প্রসঙ্গত, আরএকে সিরামিকস একটি জিরো ডেবিট কোম্পানি আর্থাৎ এর কোনো ব্যাংক ঋণ নেই।

দেশে রিয়েল এস্টেট বা আবাসন খাতে গত এক দশক ধরে ডবল ডিজিটের প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, তার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে টাইলসের বাজার।

ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইডিএলসি ফাইন্যান্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের রিয়েল এস্টেট খাতের আকার প্রায় ৬০,০০০ কোটি টাকা। এবং তা প্রতি বছর ১৫-১৭ শতাংশ হারে বাড়ছে।

আরএকে সিরামিকসের ২০২১- এর বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বর্তমানে ৩০টির মতো কোম্পানি বাংলাদেশে টাইলস উৎপাদন করছে। এ কোম্পানিগুলোর সম্মিলিত উৎপাদন ক্ষমতা প্রতিদিন ৪.৯০ লাখ বর্গমিটার। গত এক দশকে উৎপাদন ক্ষমতা ২০০ শতাংশ বেড়েছে। এ খাতে বিনিয়োগ হয়েছে মোট ৫,২৩৫ কোটি টাকা।

২০১৯-২০ হিসাব বছরে দেশে মোট ৪,৬০০ কোটি টাকার টাইলস বিক্রি হয়েছে। সেখানে স্থানীয় কোম্পানির হিস্যা ছিল ৮৪ শতাংশ।

গত দুই বছরে আকিজ গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, শেলটেক গ্রুপ, ডিবিএল গ্রুপের মতো বৃহৎ প্রতিষ্ঠানগুলো টাইলসের বাজারে বিনিয়োগ করেছে। এতে বাজারে প্রতিযোগিতা অনেক বেড়েছে।

এ বিষয়ে সাধন কুমার দে বলেন, ১৯৯৮ সালে আমরা যখন ব্যবসা শুরু করি তখন টাইলসের বাজার পুরোপুরি আমদানি-নির্ভর ছিল। গত ২৪ বছরে আমাদের ব্র্যান্ডটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া আমরা যে মানের টাইলস তৈরি করি সেটা অন্য কেউ করে না। সে জায়গায় প্রতিযোগিতা বাড়লেও আমাদের ব্যবসায় প্রভাব পড়বে না।

তিনি বলেন, আরএকে প্রিমিয়াম কোয়ালিটির টাইলস তৈরি করে। এর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আমদানি করা টাইলস।

কোম্পানির সূত্রমতে, মূল্যমান অনুসারে দেশের বাজারে টাইলস বিক্রির ১৬ শতাংশের বেশি আরএকের। আর পরিমাণের দিক দিয়ে তাদের বাজার অংশীদারিত্ব ৬ শতাংশের মতো।

২০২১ সালে কোম্পানিটির টাইলস বিক্রি এর আগের বছরের তুলনায় ৩৩ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৬৯৮.৭৮ কোটি টাকা। চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকেও প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ শতাংশ।

আরএকে সিরামিকস টাইলস ছাড়াও স্যানিটারিওয়্যার উৎপাদন করে। সেখান থেকে বছরে ২৫০ কোটি টাকার মতো আয় হয়। তবে এই ব্যবসাটি সম্প্রসারণের পরিকল্পনা নেই।

আরএকে সিরামিকস বাংলাদেশের পরিশোধিত বাজার মূলধন ৪২৭.৯৬ কোটি টাকা। এর মোট শেয়ারের ৬৮.১৩% আরএকে সিরামিকস পিজেএসসি, ইউএই’র কাছে রয়েছে। আর স্থানীয় উদ্যোক্তা এস এ কে একরামুজ্জামানের কাছে রয়েছে ৩.৯৫ শতাংশ শেয়ার। বাদবাকি শেয়ারের মালিক সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top