Homeঅর্থনীতিপ্রতি মাসে কোটিপতি হচ্ছেন ৫৪০ জন

প্রতি মাসে কোটিপতি হচ্ছেন ৫৪০ জন

স্টাফ রিপোর্টার : করোনার প্রভাবে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। করোনার প্রায় দেড় বছরের ভয়াবহ সংকটে নতুন করে দারিদ্র হয়েছেন অসংখ্য মানুষ। কিন্তু অর্থনীতি পুরোপরি স্বাভাবিক হতে না হতেই দেশে কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে।

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে ব্যাংকে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা নতুন করে বেড়েছে ১ হাজার ৬২১টি। সে হিসাবে প্রতি মাসে কোটিপতি হিসাব বা কোটিপতি আমানতকারী বেড়েছে ৫৪০ জন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত প্রথম তিনমাসে দেশে কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার ৫৯৭ জন। যা গত বছর ডিসেম্বর শেষে তথা ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ছিল ১ লাখ ১ হাজার ৯৭৬। সেই হিসাবে তিনমাসে কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা বেড়েছে ১ হাজার ৬২১।

তবে ২০২০ সালে যখন দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হয় তখন এ ধরণের হিসাবের সংখ্যা ছিল ৮২ হাজার ৬২৫টি, তা ডিসেম্বরে হয়েছে ৯৩ হাজার ৮৯০টি।

পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, বিগত ২ বছরে অর্থাৎ ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত কোটিপতি হিসাবধারির সংখ্যা বেড়েছে ২০ হাজার ৯৭২টি।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, করোনাকালেও কোটিপতি ও দারিদ্র্য বৃদ্ধির হার উর্ধ্বমূখী ছিল।

এ বিষয়ে বেসরকারি সংস্থা পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ ভঙ্গুর অর্থনীতি থেকে একটি টেকসই অর্থনীতির দিকে যাচ্ছে, এটা সত্য। কিন্তু সামাজিক বৈষম্য বেড়ে যাওয়ার উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

এখন গবেষণা হওয়া দরকার, এই ধনীদের উত্থান কি অর্থনীতিতে অবদান রাখার মাধ্যমে হচ্ছে, নাকি অনৈতিক উপায়ে হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিক শেষে ব্যাংকগুলোতে কোটিপতিদের আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৬৩ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা। যা গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ছিল ৬ লাখ ৫৩ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা।

সে হিসেবে তিন মাসে কোটিপতিদের আমানত বেড়েছে ৯ হাজার ৬৪৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতিমাসে গড়ে কোটিপতিদের আমানতের পরিমান বৃদ্ধি পেয়েছে ৩ হাজার ২১৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। আর চলতি বছরের মার্চ মাস শেষে ব্যাংক খাতে মোট হিসাবধারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৭৩ লাখ। সবমিলে ব্যাংক খাতে আমানতের পরিমাণ ১৫ লাখ ১৪ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা।

এদিকে ২০২০ সালে ‘এ ডিকেড অব ওয়েলথ’ শীর্ষক এ গবেষণায দাবি করা হয়েছে, এক দশকে ধনকুবেরের সংখ্যা বৃদ্ধির হারে বিশ্বের সব বড় অর্থনীতিকে পেছনে ফেলে শীর্ষে অবস্থানে এখন বাংলাদেশ। মাত্র ১০ বছরে দেশে কোটিপতি ধনকুবেরের সংখ্যা বেড়েছে ১৪ দশমিক তিন শতাংশ হারে। ২০১০ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত যারা ৫০ লাখ ডলারের বেশি সম্পদের অধিকারী হয়েছেন তাদেরকে নিয়ে এ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, কোটিপতির সংখ্যা যেভাবে বেড়েছে, ঠিক তেমনভাবে গরিবের সংখ্যাও বেড়ে যাচ্ছে। এটাই প্রমাণ করে সমাজে আয় বৈষম্য লক্ষ করা যাচ্ছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল পাঁচজন। ১৯৭৫ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৪৭ জনে। ১৯৮০ সাল শেষে কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ৯৮টি, ১৯৯০ সালে ৯৪৩, ১৯৯৬ সালে ২ হাজার ৫৯৪, ২০০১ সালে ৫ হাজার ১৬২, ২০০৬ সালে ৮ হাজার ৮৮৭ এবং ২০০৮ সালে ছিল ১৯ হাজার ১৬৩। ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৯৩ হাজার ৮৯০টিতে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি এক প্রকিবেদনে জানায়, করোনার আগে দেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ৪০ লাখ। ২০২০ সালের বছরের ২৬ মার্চ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ৬৬ দিনের টানা দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়েছে ৬ কোটি ৮০ লাখ। অর্থাৎ করোনার কারণে ৩ কোটি ৪০ লাখ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে।

আর বিবিএস জানায়, করোনায় মানুষের আয় কমেছে ২০ শতাংশ। এছাড়া ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) এবং পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) যৌথ জরিপ অনুযায়ী, করোনাকালে দারিদ্র্যের কারণে দেশের ২৮ শতাংশ মানুষ শহর থেকে গ্রামে চলে যায়।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সাত দিনের সর্বাধিক পঠিত