নানা জটিলতায় প্রায় ৫ বছর বন্ধ ছিল পুঁজিবাজারের খাদ্য খাতের কোম্পানি এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে শেরপুরে অবস্থিত ফ্যাক্টরিতে উৎপাদন শুরু করেছে কোম্পানিটি। সম্প্রতি জাপানি বিনিয়োগে পরিচালিত মিনোরি বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিচালনায় আনুষ্ঠানিকভাবে স্পন্দন রাইস ব্রান অয়েল বাজারজাত শুরু করতে যাচ্ছে কোম্পানিটি।
মঙ্গলবার এ উপলক্ষে রাজধানীর রেডিসন ব্লু ঢাকা ওয়াটার গার্ডেনে স্পন্দন রাইস ব্রান অয়েলের মোড়ক উম্নোচন করা হবে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন স্টাফ রিপোর্টার আনিসুর রহমান সুমন।
২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে মিনোরি বাংলাদেশ নামে জাপানি একটি কোম্পানি এমারেল্ড অয়েলের ৭ দশমিক ৮০ শতাংশ শেয়ার কিনে এমারেল্ড অয়েলের মালিকানায় আসে।
এমারেল্ড অয়েলের নতুন যাত্রা নিয়ে কথা বলেছেন কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল হোসাইন। আলোচনায় এমারেল্ড অয়েলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন পর্যাপ্ত গ্যাসের অভাবে কোম্পানিটির উৎপাদন পক্রিয়া বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।
উৎপাদন শুরুর পর আমাদের দুটি বাঁধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। প্রথমটি হলো গ্যাসের সংকট। দ্বিতীয়টি ব্যাংক লোন পুন:তফসিল। কোম্পানিটি যখন বন্ধ হয়ে যায়, তখন তিতাস গ্যাসের বকেয়া ছিল ৩২ লাখ টাকা। পরবর্তীতে ২০২১ সালে তিতাস গ্যাস লাইনচার্জসহ ১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা বকেয়া বিলের একটি স্টেটমেন্ট দেয়। এ টাকার পুরোটাই শোধ করা হয়েছে।
কিন্তু এরপর তিতাস কর্তৃপক্ষ ওই বকেয়ার উপর ৯৯ লাখ টাকার সুদ দাবি করে। এ টাকার ৫০ শতাংশ ইতিমধ্যেই পরিশোধ করা হয়েছে।
এরপরেও ২৪ ঘন্টা গ্যাস পাই না আমরা। দিনের মধ্যে গ্যাস পাওয়া যায় মাত্র ১০-১২ ঘণ্টা। পর্যাপ্ত গ্যাসের সরবরাহ না পাওয়ায় এলপিজি দিয়ে আমরা তেল রিফাইনের কাজ করি। এক্ষেত্রে আমাদের উৎপাদন খরচ বেশি পড়ে।
দ্বিতীয় প্রতিবন্ধকতা বেসিক ব্যাংকের ঋণ পুন:তফসিল। আগের পরিচালনা পর্ষদ বেসিক ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ নেয়। সুদাসলে এর পরিমাণ ১০০ কোটি টাকার ওপরে। যা পরবর্তিতে খেলাপি হয়ে যায়।
ব্যাংকের কাছে আমাদের দাবি ছিল ২ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১০ বছর মেয়াদে ঋণ পরিশাধের সুযোগ। এতদিন কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ ছিলো তাই ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। এখন যেহেতু উৎপাদন চালু আছে তাই আমাদের সুযোগ দেয়া হলে আমরা সময়মতো ঋণ পরিশোধ করতে পারবো।
এমারেল্ড অয়েলের দুটি প্রোডাকশন ইউনিট আছে। এর একটির ধানের কুঁড়া ক্র্যাশ করার ক্ষমতা ১৮০ টন, অপরটির ক্ষমতা ১৫০ টন। ইউনিট দুটির দৈনিক মোট উৎপাদনক্ষমতা ৩৩০ টন। গ্যাসের অপর্যাপ্ত সরবাহের কারণে শুধু ১৮০ টনের ইউনিটটি সচল আছে। এই ইউনিটে ধানের কুঁড়া ক্র্যাশ করে ৩৫ মেট্রিক টনের মতো অপরিশোধিত তেল পাওয়া যায়। এখান থেকে দৈনিক পরিশোধিত তেল পাওয়া যায় প্রায় ২৬ মেট্রিক টন। এ সক্ষমতা নিয়ে আমরা প্রতিদিন প্রায় ২৬ মেট্রিক টন তেল বাজারজাত করতে পারবো।
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) আন্তরিকতায় এ বছর আমরা উৎপাদন শুরু করেছি। এখন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এবং তিতাস গ্যাস আন্তরিকতার সাথে আমাদের সমস্যাগুলি সমাধান করে দিলে দেশে চলমান ভোজ্যতেলের সংকট সমাধানে ভূমিকা রাখতে পারবে এমারেল্ড অয়েল।
উৎপাদন শুরুর মাত্র ৬ মাসের মধ্যে আমরা ব্রেক ইভেনে চলে আসছি। দিনের পুরো সময় গ্যাস সরবরাহ পেলে আমরা পুরোদমে উৎপাদনে ফিরতে পারব। এমন সহায়তা পেলে আশা করছি খুব শীঘ্রই শেয়ারহোল্ডারদের ভালো ডিভিডেন্ড দিতে পারবো।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।