Homeকোম্পানি সংবাদশেয়ার কারসাজির হোতা ‘হিরু’-কে ২ কোটি টাকা জরিমানা

শেয়ার কারসাজির হোতা ‘হিরু’-কে ২ কোটি টাকা জরিমানা

স্টাফ রিপোর্টার : শেয়ারবাজারের বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত বিনিয়োগকারী মো. আবুল খায়ের ওরফে হিরুকে  কারসাজি করে শেয়ার দর বাড়ানোর অভিযোগে ২ কোটি টাকার বেশি জরিমানা করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন।

সম্প্রতি এক কমিশন সভায় হিরুকে জরিমানা করা হয়েছে বলে বিএসইসি’র সূত্রে জানিয়েছে। তবে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার মুখপাত্র এবং শীর্ষ কর্মর্তারা কেউ-ই এই বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বিএসইসি সূত্র জানিয়েছে, এশিয়া ইন্সুরেন্স, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্সুরেন্স ও গ্রিন ডেল্টা ইন্সুরেন্সের শেয়ার কারসাজি করে দর বাড়ানোয় তাকে জরিমানা করা হয়েছে।

তার বিরুদ্ধে বেশ কিছু কোম্পানির শেয়ার দর নিয়ে কারসাজি করার অভিযোগ রয়েছে। এগুলো নিয়ে কমিশন তদন্ত করছে।

হিরু বর্তমানে শেয়ারবাজারের একজন প্রভাবশালী বিনিয়োগকারী হিসেবে পরিচিত হলেও কমিশন কোন কারসাজিকারীকে ছাড় দেবে না জানান বিসেকের এক কর্মকর্তা।

২০২০ সালের জুন থেকে ২০২১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে এশিয়া ইন্সুরেন্সের শেয়ার দর ৬৫৮% বেড়ে ১২৯ টাকা হয়। ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্সুরেন্সের শেয়ার ৮৫৯% বেড়ে ১৬৩ টাকা হয়।

২০২১ সালের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত তিন মাসে গ্রিন ডেল্টা ইন্সুরেন্স ২০০% বেড়ে ১৪৪ টাকা হয়।

গত দুই বছরের ভেতরে এই সময় কোম্পানিগেুলোর শেয়ারের দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানোর পর থেকে এগুলোর শেয়ার দর ধারাবাহিকভাবে কমেছে।

২০২০ সালে বীমা খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ারের হঠাৎ উল্লম্ফনের মূল হোতা হিসেবে এই হিরোর নাম আলোচনায় আসে। এরপর আরোও বেশ কিছু কোম্পানির শেয়ারের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির জন্যও তাকে দায়ী করা হয়।

এদিকে মো. আবুল খায়ের এ বিষয়ে বলেন, আমাকে জরিমানা করা হয়েছে বলে শুনেছি। তবে বিএসইসি থেকে এখনও কোন চিঠি পাইনি।

তিনি আরো বলেন, শেয়ারবাজারে আমি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করছি। বাজারে বড় বিনিয়োগ করতে গেলে কিছু ভুল ভ্রান্তি হয়। আর আইন লঙ্ঘন হলে-তো বিএসইসি সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।

নাটকীয় উত্থান

ডিপার্টমেন্ট অব কো-অপারেটিভসের ডেপুটি রেজিস্ট্রার এই হিরু। ৩১তম বিসিএসে টিকে তিনি এই দপ্তরের কর্মকর্তা হোন।

২০২০ এর আগে তিনি শেয়ারবাজারে পরিচিত কেউ ছিলেন না। ২০২০ এর মাঝামাঝি সময়ে বীমা খাতে বিশেষ করে সাধারণ বীমা কোম্পানির শেয়ার দরে অস্বাভাবিক ঊল্লম্ফনের মূল হোতা হিসেবে তার নাম আলোচনায় আসে। তিনি মূলত সমবায় দপ্তরের তহবিল শেযারবাজারে বিনিয়োগ করেন। তিনি বীমা কোম্পানির শেয়ার কেনা-বেচা করে প্রচুর অর্থ আয় করেন।

তার এই সাফল্যের কারণে অনেকেই তার সাথে যোগ দেন। এই মুহুর্তে তিনি সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিনিয়োগকারী। কথিত আছে, শেয়ারবাজারে তার অধীনে দুই হাজার কোটি টাকারও বেশি ফান্ড রয়েছে।

সমবায় তহবিল ছাড়াও হিরো তার স্ত্রী ও আত্মীয় স্বজনের নামেও শেয়ার ব্যবসা করছেন।

এরই মধ্যে তার স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান মোনার্ক হোল্ডিংস নামে একটি ব্রোকারেজ হাউজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হয়েছেন। ব্রোকারেজটির চেয়ারম্যানের হিসেবে রয়েছেন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। সাকিবের সঙ্গেও হিরুর ভালো সখ্যতা রয়েছে।

এছাড়া, বিপিএলে ক্রিকেট টিম ফরচুন বরিশালের সঙ্গেও তিনি জড়িত। পাশাপাশি বিদেশে বিএসইসি’র আয়োজন করা বিভিন্ন রোড শোতেও তিনি অংশ নিয়েছেন।

জাদুর কাঠি

কোনো শেয়ারে হিরুর বিনিয়োগের প্রভাব কেমন, সেটি বুঝতে সেই শেয়ারের দামের দিকে নজর দিলেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ওটিসি থেকে আসা কোম্পানি সোনালী পেপারের শেয়ারদর গত বছরের ২৭ জুন ছিল ১৯৭. ৪০ টাকা। পরবর্তী ছয় মাসে এর শেয়ার দর ৩৮৬ শতাংশ বেড়ে হয়েছিল ৯৭৫ টাকা।

একই সময়ে জেনেক্স ইনফোসিসের শেয়ারদর ২২৬ শতাংশ বেড়ে ১৭৬ টাকা, ই-জেনারেশনের ৩৫৩% বেড়ে ৬৩ টাকা, এনআরবিসি ব্যাংকের শেয়ার ২৫৫% বেড়ে ৩৮ টাকা হয়েছিল।

একইভাবে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজি করে ২৬২ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল।

এছাড়া, ফরচুন শুজ, হামিদ ফেব্রিকস, সাফকো স্পিনিং, মালেক স্পিনিং ও ন্যাশনাল ফিড  অস্বাভাবিক হারে বেড়েছিল।  এরপর উচ্চ মূল্যের এই শেয়ারগুলো বিক্রি করে হিরো এবং তার সহযোগীরা বেরিয়ে যাওয়ার পর থেকেই দর কমে যায়।

আর এইসব শেয়ারে বিনিয়োগ করে বর্তমানে বিনিয়োগকারীরা বড় লোকসানে রয়েছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সাত দিনের সর্বাধিক পঠিত