আপডেট : জুলাই ৫, ২০২২ , ৫:৪৮ অপরাহ্ণ
শেয়ার করুন-
সিনিয়র রিপোর্টার: ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে উৎপাদন বন্ধ, একযুগ ধরে নেই লভ্যাংশ প্রদানও। এমনকি শিগগিরই উৎপাদনে ফেরার মূল্য সংবেদনশীল তথ্যও নেই ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সংশ্লিষ্টদের কাছে। তবুও শেয়ারপ্রতি দর ১৩৫ টাকা। এটা কীভাবে হয় বেলে বিষ্ময় প্রকাশ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
তবে ঘটনার অনুঘটকদের জানতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
২৬ কোটি টাকার কোম্পানি তিন মাসের ব্যবধানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০১ কোটি ৪৮ লাখ ৬০ হাজার টাকায়।
চট্টগ্রামভিত্তিক পোশাক খাতের বোতাম তৈরি করা কোম্পানি ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে উৎপাদন বন্ধ হয়।
২৬ কোটি টাকার কোম্পানি তিন মাসের ব্যবধানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০১ কোটি ৪৮ লাখ ৬০ হাজার টাকায়। চট্টগ্রামভিত্তিক পোশাক খাতের বোতাম তৈরি করা কোম্পানি ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে উৎপাদন বন্ধ হয়।
উৎপাদন ও বাণিজা না থাকায় উপরের চিত্র অনুসারে শেয়ারপ্রতি ইপিএস লোকসান বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ০.৩৮ পয়সা। সময় গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে শুধুমাত্র ২০১৯ সালের করপরবর্তী লোকসান হয়েছে ৩৭ লাখ ৯৭ হাজার ৮৫৪ টাকা। ২০২০ এবং ২০২১ সালের আর্থিক চিত্র হাতে মেলেনি।
ওষুধ ও রসায়ন খাতের রাষ্ট্রায়ত্ত ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের শেয়ার নিয়ে কারসাজিতে নেমেছে একাধিক চক্র। চক্রের সদস্যরা মাত্র ২৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে তিন মাসের ব্যবধানে শেয়ারের দাম ৫-৬ গুণ বাড়িয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
শতভাগ রপ্তানীকারক প্রতিষ্ঠানটির মোট শেয়ার ৭৭ লাখ এবং পরিশোধিত মূলধন ৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
তিন মাসে ইমাম বাটনের শেয়ারের দাম ৩৪ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৩৫ টাকায় নিয়েছে। তাতে তিন মাসে ২৬ কোটি ৪৮ লাখ ৮০ হাজার টাকার কোম্পানি ১০২ কোটি ১০ লাখ ২০ হাজার টাকায় পরিণত হয়েছে।
বিষয়টি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নজরে এসেছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রাথমিকভাবে কারসাজির প্রমাণও পেয়েছে। যারা এই কারসাজির সঙ্গে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে বিএসইসি, ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
কারসাজি মনে করেন বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ইমাম বাটন কোম্পানির শেয়ারের দাম এক বছরে ২২ টাকা থেকে ১৩৫ টাকা হয়েছে। কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ; তারপরও শেয়ারের দাম এতো বৃদ্ধি সত্যি অস্বাভাবিক। কারা কারসাজি করছে, বিষয়টি জানতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, প্রতিবেদন হাতে পেলেই ব্যবস্থা নেব।
শেয়ারের দাম সর্বোচ্চ ৪০ টাকা হতে পারে বলে মনে করেন ইমাম বাটনের কোম্পানি সচিব গৌতম। তিনি বলেন, কারখানার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। ৩-৬ মাসের মধ্যে উৎপাদন শুরু হওয়ার কোনো খবরও নেই। কিন্তু তারপরও ২০-২২ টাকার শেয়ার ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এটা কীভাবে হয়?
তিনি বলেন, কোনোভাবেই এই শেয়ারের দাম ১৩০ টাকা হওয়ার যোগ্য নয়। আমরা ডিএসইকে জানিয়েছি যে, আমাদের কাছে কোনো সংবেদনশীল তথ্য নেই।
একটি ব্রোকার হাউজের ট্রেডার জাহিদ আনোয়ার বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসে কয়েকজন ক্লায়েন্ট বলেছিল, শেয়ারটিতে বড় চক্র ঢুকছে। ফরচুন, তজিমউদ্দিন টেক্সটাইলের মতো গেম হবে। এই খবরে তিন জন বিনিয়োগকারী কোম্পানিটির ৩ লাখ শেয়ার কিনেছে। গত সপ্তাহে তারা বিক্রি করে দিয়ে এখন তারা কোটিপতি।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসইর তথ্য মতে, চলতি বছরের শুরুতে ইমাম বাটনের শেয়ারের (শেয়ারের সংখ্যা ৭৭ লাখ) দাম ছিল ২৩ টাকা ৯০ পয়সা। ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময়ে ১৪ টাকা ৩০ পয়সা বেড়ে শেয়ারটির দাম দাঁড়ায় ৩৪ টাকা ৪০ পয়সায়।
১০ টাকা অভিহিত মূল্যের ৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকার কোম্পানির বাজার মূল্য বেড়ে দাঁড়ায় ২৬ কোটি ৪৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
এপ্রিল, মে ও জুন- তিন মাসে টানা উত্থানে থাকে শেয়ারদর। ফলে শেয়ারটির দাম ৩৪ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বেড়ে গত ৩০ জুন লেনদেন হয়েছে ১৩৫ টাকা দরে। অর্থাৎ গত তিন মাসে শেয়ারটির দাম বেড়েছে ১০০ টাকার বেশি।
২৬ কোটি টাকার কোম্পানি তিন মাসের ব্যবধানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০১ কোটি ৪৮ লাখ ৬০ হাজার টাকায়। অর্থাৎ মার্চ মাসে যে বিনিয়োগকারী ৩৪ টাকা ৪০ পয়সা দরে অন্তত ৭৬ হাজার শেয়ার কিনেছেন, তিনি এখন কোটিপতি।
এ বিষয়ে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, বন্ধ একটি কোম্পানির শেয়ারের দাম ক্রমাগত বাড়ছে। কিন্তু গত তিন মাসে কর্তৃপক্ষ কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি তা আমার কাছে বোধগম্য নয়।
তিনি বলেন, খালি চোখেই দেখা যাচ্ছে কারসাজি। কমিশনের উচিত দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। কারসাজি বন্ধ করতে জড়িতদের আর্থিক জরিমানার পাশাপাশি কারাগারে পাঠিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনার আহ্বান জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালে ওষুধ ও রসায়ন খাতে তালিকাভুক্ত হয় ইমাম বাটন। কোম্পানির ৭৭ লাখ শেয়ারের মধ্যে ৬১ শতাংশ রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে। আর ৩০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে। বাকি শেয়ার বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে।
২০২০ সালে কোম্পানির সর্বশেষ বোর্ডসভা করা হয় এবং ২০১০ সালে ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দেয় হয়।
শেয়ার করুন-
আপডেট : জুলাই ৫, ২০২২ , ৫:৪৮ অপরাহ্ণ
আমরা কুকি ব্যবহার করি যাতে অনলাইনে আপনার বিচরণ স্বচ্ছন্দ হয়। সবগুলো কুকি ব্যবহারের জন্য আপনি সম্মতি দিচ্ছেন কিনা জানান।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।