সকল মেনু

পুঁজিবাজারে কেন হঠাৎ ঝড়

স্টাফ রিপোর্টার: দেশের পুঁজিবাজারের উপর দিয়ে হঠাৎ ঝড় বয়ে গেছে। সোমবার (১৮ জুলাই) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া প্রায় ৯৪ ভাগ কোম্পানি শেয়ারের দর হারিয়েছে। মূল্যসূচক কমেছে এক শতাংশের বেশি। শেয়ারের দাম কমায় ২ শতাংশ সার্কিটব্রেকার না থেকে স্বাভাবিক সময়ের মতো ১০ শতাংশের ব্রেকার থাকলে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কয়েকশ পয়েন্ট কমে যেতো।

বড় দর পতনের কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে, একদিকে তাদের একাংশ যে কোনো দামে শেয়ার বিক্রি করে দিতে মরিয়া হয়ে উঠেন।

অন্যদিকে নতুন বিনিয়োগ থেকে হাত গুটিয়ে নেন তারা। এ কারণে এক পর্যায়ে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারে ক্রেতা উধাও হয়ে যেতে থাকে। সোমবার দিনের লেনদেন শেষ হওয়ার ১৫ মিনিট আগে প্রায় ২৬০ কোম্পানির শেয়ারে দৃশ্যমান কোনো ক্রেতা ছিল না।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বাজারের এই বিপর্যস্ত অবস্থার প্রধান কারণ হচ্ছে, ব্যক্তি বিনিয়োকারীদের (Retail Investor) উপর অতি নির্ভরতা। এরা অনেক আবেগপ্রবণ। আছে পেশাদারিত্বের অভাব। তাই সামান্য নেতিবাচক খবরেও আতঙ্কিত হয়ে উঠে। এবার তাদের তীব্রভাবে আতঙ্কিত করে তুলেছে তিনটি বিষয়।

বিষয়গুলো হচ্ছে-বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গণনা পদ্ধতি নিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) আপত্তি, জ্বালানি-বিদ্যুৎ সংকট লাঘবে সরকারের নতুন নির্দেশনা ও বাজারে কারসাজি সংক্রান্ত সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরে সৃষ্ট উদ্বেগ।

LankaBangla securites single page

উল্লেখ, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উপর চাপ কমাতে সরকার আইএমএফের কাছে সহযোগিতা চেয়েছে। এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সফর করছে সংস্থাটির একটি প্রতিনিধি দল। তারা বাংলাদেশের রিজার্ভের হিসাবগণনা পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তাদের মতে, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভের হিসাব দিচ্ছে, সেখানে ফাঁকি আছে। প্রকৃতপক্ষে এই রিজার্ভ সাত/আটশ কোটি ডলার কম হবে।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে আইএমএফের এই বক্তব্যে দেশের সাধারণ মানুষের মতো পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়েছে। তারা মনে করছেন, আইএমএফের বক্তব্য ঠিক হয়ে থাকলে, তা দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার জন্য বেশ উদ্বেগজনক।

প্রকৃত রিজার্ভ কম হয়ে থাকলে এক সময় হয়তো জ্বালানি তেল ও খাদ্য পণ্যের মতো অতি জরুরি পণ্য আমদানিকেও ব্যাহত করতে পারে। তাতে গতি হারাবে দেশের অর্থনীতি। মূল্যস্ফীতি ও বেকারত্ব আরও বেড়ে যাবে। মান হারাবে টাকা। এই আতঙ্ক প্রবল হয়ে উঠলে তারা নতুন করে শেয়ার না কিনে হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করতে মরিয়া হয়ে উঠেন। তাতে বাজারে বিক্রির চাপ বেড়ে গেলে তীব্র দর পতন শুরু হয়ে যায়।

অন্যদিকে সোমবার সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে, পরদিন থেকে সারাদেশে লোডশেডিং চলবে। এছাড়া সপ্তাহে একদিন পেট্রোল পাম্প বন্ধ থাকবে। এই খবর বিনিয়োগকারীদের আতঙ্ককে আরও বাড়িয়ে দেয়। লোডশেডিংয়ের চেয়েও পাম্প বন্ধরাখার ঘোষণা বেশি আতঙ্ক ছড়াতে থাকে।

অনেকেই মনে করতে থাকেন, দেশে জ্বালানী তেলের মজুদ হয়তো অনেক কমে গেছে, আর নতুন করে তেল কেনা নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে; নইলে পেট্রোল পাম্প বন্ধ রাখা হবে কেন? তাদের কেউ কেউ বিষয়টির মধ্যে শ্রীলংকার সঙ্কটের প্রথমদিকে অবস্থার আভাস দেখতে পান। এতে শেয়ার বিক্রি করে বিনিয়োগ নগদায়ন করে রাখার হিড়িক শুরু হয়ে যায়।

অপরদিকে গত তিন/চার দিনে  বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে পুঁজিবাজারের নানা কারসাজি নিয়ে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। পুঁজিবাজারে যে কিছু কারসাজি হচ্ছে নানা সময়ে, তা মোটামুটি সব বিনিয়োগকারীরই ধারণা। কিন্তু সংবাদপত্রে খবর প্রকাশের মধ্য দিয়ে বিষয়টি নতুন করে ও আরও মোটাদাগে সবার নজরে এসেছে। এতে কিছুটা হলেও বাজারের প্রতি তাদের আস্থা কমিয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top