সকল মেনু

বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিপাকে তিন বিতরণ কোম্পানি

ডেস্ক রিপোর্ট : জ্বালানি সাশ্রয়ের লক্ষ্যে গত মঙ্গলবার থেকে রাজধানীসহ সারা দেশে শুরু হয়েছে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং। সরকারের পক্ষ থেকে ২৪ ঘণ্টায় একবার ১ ঘণ্টা লোডশেডিং করার কথা বলা হলেও তা মানতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে খোদ রাজধানীর বিদ্যুৎ বিতরণে নিয়োজিত দুই সংস্থা ডেসকো ও ডিপিডিসি। লোডশেডিংয়ের শিডিউল ঠিক করতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে সংস্থা দুটি।

পরিস্থিতি সামাল দিতে এরই মধ্যে ১ ঘণ্টার শিডিউলের জায়গায় ২-৩ ঘণ্টা লোডশেডিং করেছে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো)। অন্যদিকে লোডশেডিংয়ের সময়সীমা বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি)।

ডিপিডিসি ও ডেসকোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ না পাওয়ায় এ পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। যে কারণে জটিলতা এড়াতে কয়েকবার লোডশেডিং দেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

গতকাল লোডশেডিং দেয়ার জন্য ডেসকো যে শিডিউল প্রকাশ করেছে, সেখানে দেখা গিয়েছে রাজধানীর বেশকিছু এলাকায় ১ ঘণ্টা করে দু’তিনবার পর্যন্ত লোডশেডিং শিডিউল করা হয়েছে। অথচ এর আগের দিন সংস্থাটির ১ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং দেয়ার শিডিউল দেখা গিয়েছে।

বিষয়টি জানতে চাইলে ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রকৌশলী কাওসার আমীর আলী জানান, চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ বরাদ্দ কম পাওয়ায় শিডিউলে একাধিকবার লোডশেডিং রাখতে হচ্ছে। চেষ্টা সত্ত্বেও ১ ঘণ্টা লোডশেডিং দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা যাচ্ছে না। আগে শুধু সন্ধ্যায় পিক আওয়ারে একবারের জায়গায় দুবার লোডশেডিং রাখা হয়েছিল, এখন থেকে দিনের বেলায়ও একাধিকবার লোডশেডিং রাখতে হবে।

ডেসকো সূত্রে জানা গিয়েছে, সংস্থাটির গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৯৮২ মেগাওয়াট, সরবরাহ পাওয়া গিয়েছে ৮০০ মেগাওয়াট। ফলে এ সময় লোডশেডিং করতে হয়েছে ১৮২ মেগাওয়াট।

এদিকে, বিদ্যুতের আরেক কোম্পানি ডিপিডিসিও শিডিউল করে লোডশেডিং দিতে হিমশিম খাচ্ছে। সংস্থাটির কর্মকর্তারা ১ ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং হচ্ছে না বলে দাবি করলেও গ্রাহকদের অভিযোগ, ২ ঘণ্টা বা তার চেয়ে বেশি সময় লোডশেডিং হচ্ছে।

ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান বলেন, ১ ঘণ্টার বেশি আমরা লোডশেডিং করছি না। তবে চাহিদা অনুযায়ী, এভাবে ১ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ে কোনোভাবেই সামাল দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। গতকালও আমাদের ১৩৫ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হয়েছে। আমরা চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ কম পাচ্ছি বলে এ পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।

অন্যদিকে রাজধানীর বাইরে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাপনা নিয়ে নাজুক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে বিপাকে পড়েছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। একাধিকবার লোডশেডিংয়ে ৬-৭ ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকার অভিযোগ করছেন সংস্থাটির গ্রাহকরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিদ্যুৎ না থাকার বিষয়টি নিয়ে পোস্ট দিচ্ছেন অনেকে।

মফস্বল শহরে ও গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে নিয়োজিত আরইবি সুনির্দিষ্ট করে কতক্ষণ লোডশেডিং করছে তা না জানালেও ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের বিষয়টি স্বীকার করেছে।

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে আরইবির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, আরইবির ৮০টি সমিতির পক্ষ থেকে এলাকাভিত্তিক শিডিউল করা হয়েছে। কিন্তু শিডিউল মেনে লোডশেডিং করার সুযোগ নেই। কারণ গতকাল বিকালেও ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং ছিল। সন্ধ্যার দিকে এ ঘাটতি ছিল ১ হাজার ৮০০ মেগাওয়াটের মতো।

এ কর্মকর্তা জানান, মঙ্গলবার ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগের জেলাগুলোতে সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং ছিল। বুধবার আরইবির বিতরণ এলাকায় সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং করতে হয়েছে ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোতে।

রাজধানীর বাইরে বিভিন্ন জেলার লোডশেডিংয়ের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছে, ময়মনসিংহ নগরীতেই গড়ে ৪ ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। মঙ্গলবার লোডশেডিংয়ের ঘোষণা দেয়ার পর পরই তা আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গিয়েছে বলে জানান সেখানকার গ্রাহকরা। তারা জানিয়েছেন, বুধবার নগরীর একাধিক স্থানে ৩-৪ ঘণ্টার লোডশেডিং হয়েছে। এর মাঝে ১ ঘণ্টা করে লোডশেডিং হয়েছে কমপক্ষে দুবার। লোডশেডিংয়ের সময় বাড়ানোয় গ্রাহকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

ময়মনসিংহ নগরীর সি কে ঘোষ রোড এলাকায় গতকাল সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত পাঁচবার বিদ্যুৎ গিয়েছে। এর মাঝে মধ্যরাতে ১ ঘণ্টার জন্য একবার। দুপুর ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত ১ ঘণ্টার জন্য আরেকবার। এছাড়া ১০-১৫ মিনিটের জন্য একাধিকবার বিদ্যুৎ যাওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে।

লোডশেডিং বেড়েছে সিলেটেও। জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলায় লোডশেডিং হচ্ছে গড়ে ১২ ঘণ্টা। বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এ এলাকায় ১ ঘণ্টা করে মোট ৬ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের কথা বলা হলেও বিয়ানীবাজার গড়ে ১২ ঘণ্টা বিদ্যুিবহীন থাকছে বলে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। ওই অঞ্চলের বিদ্যুৎ গ্রাহকরা অভিযোগ করেছেন, যখন-তখন লোডশেডিং হচ্ছে। এক্ষেত্রে কোনো সময়সূচিই মেনে চলা হচ্ছে না।

পৌরসভার কসবা গ্রামের বাসিন্দা আইনাল হক জানান, দিনে-রাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুত্হীন থাকতে হয়। উল্টো অভিযোগ দিলে যেন আগুনে ঘি ঢালা হয়, সেদিন আরো বেশি বিদ্যুতের আলো থেকে বঞ্চিত থাকেন পুরো এলাকার মানুষ।

দেশের সবচেয়ে বড় বিতরণ কোম্পানি আরইবি। মোট গ্রাহকের ৫৫ শতাংশ বিদ্যুৎ বিতরণ করে সংস্থাটি। ছয়টি বিতরণ কোম্পানির মধ্যে শুধু আরইবি কেন্দ্রীয়ভাবে লোডশেডিংয়ের রুটিন প্রকাশ করেনি। তবে সংস্থাটির অধীনে ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কোনো কোনোটি নিজ উদ্যোগে লোডশেডিংয়ের শিডিউল প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহ ও সিলেট অঞ্চলসহ দেশের ৩০-৩৫টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি রুটিন মেনে লোডশেডিং করতে হিমশিম খাচ্ছে।

অন্যদিকে, লোডশেডিংয়ের বিষয়টি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিকে সংশ্লিষ্ট এলাকার গ্রাহকদের মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে জানানোর নির্দেশ দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। বিদ্যুৎ বিভাগের উপসচিব জাহিদুল ইসলামের স্বাক্ষর করা এক চিঠিতে বুধবার রাতে এ নির্দেশ দেয়া হয়। নির্দেশনায় বলা হয়, দুটি এসএমএসের মাধ্যমে লোডশেডিংয়ের বিষয়টি গ্রাহকদের অবহিত করতে হবে।

বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী দেখা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সারা দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৩ হাজার ৯৬৫ মেগাওয়াট। এ সময় উৎপাদন হয়েছে ১১ হাজার ৮৩৯ মেগাওয়াট। অর্থাৎ এ সময় ১ হাজার ৭১৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি ছিল।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top