স্টাফ রিপোর্টার : ফিরে এলো আবার সার্কিট ব্রেকার। মুমূর্ষু পুঁজিবাজারকে বাঁচাতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। সার্কিট ব্রেকারে বাঁধা হলো পুঁজিবাজারকে। আগামী ৩১ জুলাই (রোববার) থেকে মৃতপ্রায় পঁজিবাজারকে জাগিয়ে তুলতে এই ‘সীমাবন্ধনী’ কাজ করবে।
এক কার্যদিবসে একটি কোম্পানির শেয়ারের মূল্য পরিবর্তনের গ্রহণযোগ্য সীমায় পরিবর্তন আনতে এই পদ্ধতি চালু করা হবে। এর ফলে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি দাম সর্বোচ্চ ২ শতাংশ নিম্নমূখী এবং ১০ শতাংশ ঊর্দ্ধমূখী হতে পারবে। তবে স্বাভাবিক সময়ে তা থাকে মাত্র ১০ শতাংশ।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সার্কিটব্রেকার সংক্রান্ত এ নির্দেশনা জারি করেছে। ২০২০ সালের শুরুর দিকে করোনাভাইরাস অতিমারি শুরু হলে বাজারকে ধস থেকে রক্ষা করতে প্রথমে ফ্লোর প্রাইস ব্যবস্থা চালু করা হয়।
সর্বশেষ চলতি বছরের ২৫ মে জারি করা নির্দেশনায়, সার্কিটব্রেকারের নিম্নমুখী সীমা ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। আর উর্ধসীমা ১০ শতাংশই বহাল থাকে। অর্থাৎ সর্বশেষ সার্কিটব্রেকার অনুসারে, একদিনে একটি কোম্পানির শেয়ারের দাম সর্বোচ্চ ২ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারতো। কিন্তু দাম বাড়তে পারবো ১০ শতাংশ পর্যন্ত।
সার্কিট ব্রেকার সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএসইসি কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করাই কমিশনের লক্ষ্য। বৈশ্বিক কিছু ঘটনার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সংকট আমাদের ওপর চেপে বসেছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের অর্থনৈতিক বিভিন্ন সূচক নিয়ে অপ্রয়োজনীয় কিছু গুজব তৈরি হয়েছে যার কোনো ভিত্তি নেই। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও শেয়ার বিক্রির ক্ষেত্রে আগ্রাসী মনোভাব দেখা যাচ্ছে। এতে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। দেশে এমন কোনো দুরবস্থা তৈরি হয়নি যে এভাবে আতঙ্কিত হতে হবে। এ অবস্থায় বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে কমিশন ফ্লোর প্রাইস আরোপ করেছে।
ফ্লোর প্রাইস আরোপের কারণে পুঁজিবাজারে বিদেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি সাময়িক সময়ের জন্য আরোপ করা হয়েছে। এরই মধ্যে বিদেশীরা বেশকিছু শেয়ার বিক্রি করেছেন। বর্তমানে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির পরিমাণ খুব বেশি নয়।
দেশে ডলারের দাম বেশি হওয়ার কারণে এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিদেশীদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
ডিএসইতে বৃহস্পতিবার ৪৪২ কোটি টাকার সিকিউরিটিজ লেনদেন হয়েছে। যেখানে আগের কার্যদিবসে বুধবার লেনদেন ছিল ৭৭৮ কোটি টাকা।
ডিএসইতে বৃহস্পতিবার লেনদেন হওয়া ৩৮০টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ডের মধ্যে দিন শেষে দর বেড়েছে ২৫টির, কমেছে ৩৩৩টির আর অপরিবর্তিত ছিল ২২টি সিকিউরিটিজের বাজারদর।
খাতভিত্তিক লেনদেনচিত্রে দেখা যায়, ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ দখলে নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে বস্ত্র খাত। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৪ শতাংশ দখলে নিয়েছে কাগজ ও মুদ্রণ খাত। ১০ দশমিক ৭ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে জীবন বীমা খাত।
মোট লেনদেনের ১০ দশমিক ৫ শতাংশের ভিত্তিতে চতুর্থ অবস্থানে ছিল বিবিধ খাত আর ওষুধ ও রসায়ন খাতের দখলে ছিল লেনদেনের ৮ দশমিক ৬ শতাংশ। গতকাল পুঁজিবাজারের সব খাতেই ঋণাত্মক রিটার্ন এসেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১ দশমিক ৭ শতাংশ ঋণাত্মক রিটার্ন এসেছে কাগজ ও মুদ্রণ খাতে।