সকল মেনু

বছরে এক পরিবারের ৮৯০০ কোটি টাকার লেনদেন

বিশেষ প্রতিনিধি: শেয়ারবাজারে ধসের আগে ২০০৯-১০ সালে দুই বছরে কারসাজি চক্রের হোতা ইয়াকুব আলী খোন্দকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি দুই বছরে শেয়ার কারসাজি করতে গিয়ে ৪ হাজার ২০০ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন করেছিলেন।

এখনকার বাজারের জুয়াড়ি আবুল খায়ের হিরো নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নামে শুধু ২০২১ সালে ৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা করেছেন বলে অনুসন্ধানে এ তথ্য মিলেছে।

দেখা গেছে, তিনি ২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে ২৭ ডিসেম্বর সময়কালে মোট ৩৮ কোম্পানির ৫ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা করেন। ২ হাজার ৯৭৬ কোটি টাকার শেয়ার কিনে ২ হাজার ৯১২ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেন। একক কোম্পানি হিসেবে ডেল্টা লাইফের ১ হাজার ১৭২ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা করেছেন তিনি।

এ ছাড়া জেনেক্স ইনফোসিসের ৯৯৯ কোটি, ফরচুন সুজের ৭৪৯ কোটি, এনআরবিসি ব্যাংকের ৬৭৫ কোটি, ওয়ান ব্যাংকের ৬৯০ কোটি, ন্যাশনাল হাউজিংয়ের ২৮৫ কোটি, সোনালী পেপারের ৩৮১ কোটি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের ১৬৬ কোটি, ইসলামিক ফাইন্যান্সের ১০৩ কোটি ও এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের ১১১ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা করেন।

এ কেনাবেচার মাধ্যমে গত বছরের শুধু শেষ ছয় মাসে ৮৪ কোটি টাকা রিয়েলাইজড মুনাফা করেন হিরো। এর মধ্যে ফরচুন সুজ থেকেই সর্বাধিক সাড়ে ২৯ কোটি টাকার মুনাফা করেছেন।

এর পর এনআরবিসি ব্যাংক থেকে ১৩ কোটি ১০ লাখ, সোনালী পেপার থেকে ১২ কোটি ৮৪ লাখ, ন্যাশনাল হাউজিং থেকে ১০ কোটি ৫৮ লাখ এবং জেনেক্স ইনফোসিস থেকে ৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকা মুনাফা করেছেন।

ব্যাংকেও অস্বাভাবিক অঙ্কের লেনদেন

আবুল খায়ের হিরো এনসিসি ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় তাঁর ০০২০২১০০২৬৮৭০ নম্বর সঞ্চয়ী অ্যাকাউন্টে বিশাল অঙ্কের টাকা লেনদেন করেছেন। এর বাইরেও নিজেরসহ তাঁর স্ত্রী ও বোনের নামে অনেক ব্যাংক হিসাব রয়েছে।

২০১৭ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত হিরোর নিজের এনসিসি ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে প্রায় ৩৬ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। বড় অঙ্কের লেনদেন শুরু মূলত ২০১৯ সালের জুলাই থেকে; যা তাঁর সরকারি বেতন-ভাতা ও বৈধ আয়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।

এ ছাড়া অস্বাভাবিক অঙ্কের লেনদেন হয়েছে স্ত্রী সাদিয়ার ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের খিলগাঁও শাখার ১৬০৩১০১০০০০০০২৬৪ নম্বর হিসাবে। গত মে মাসের শেষ পর্যন্ত এ হিসাবে ২৩১ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। ২০২০ সালের ২৫ আগস্ট খোলার পর এ অ্যাকাউন্টে প্রথম বড় অঙ্কের লেনদেন শুরু হয় ওই বছরের ৬ অক্টোবর।

ওই দিন চাঁদপুরের নাজিরপাড়া রূপালী ব্যাংক শাখা থেকে তাঁর অ্যাকাউন্টে এক কোটি টাকা জমা হয়। রূপালী ব্যাংকের ওই অ্যাকাউন্ট থেকে আরও বড় অঙ্কের টাকাও জমা হয়। হিরোর বোন কণিকা আফরোজের ব্যাংক হিসাবে (ইউসিবি খিলগাঁও শাখা, সঞ্চয়ী হিসাব নং ১৬০৩২০১০০০০১৩৬৬৮) সাত কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তাঁদের ব্যাংক হিসাবে বড় অঙ্কের এসব লেনদেন এরই মধ্যে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা বিএফআইইউ সন্দেহজনক হিসেবে চিহ্নিত করে ২০২০ সালে এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে চিঠি দেয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top