স্টাফ রিপোর্টার: শেয়ার মার্কেটে উত্থান-পতনের ধারা বজায় থাকবে- এমনটা স্বাভাবিক। আবার, পতনের ধারা দীর্ঘমেয়াদী হলে কিছু চক্র ছাড়া পকেট খালি হয় সিংহভাগ বিনিয়োগকারীর। পাশাপাশি, অস্বাভাবিক উত্থানের পেছনেও থাকে কারসাজির সংমিশ্রণ।
দেশের পুঁজিবাজারে কয়েক সপ্তাহের লেনদেন ও সূচকের অবস্থান বিবেচনায় দেখা যায়- ঈদ-উল আযহাপরবর্তী ৯ কার্যদিবস অব্যাহত ছিল সূচকের ধারাবাহিক পতন। বাজারের পতন ঠেকাতে ব্যাংকের এক্সপোজার লিমিট নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নেয়া বেশ কিছু পদক্ষেপে অনেকটা ইতিবাচক অবস্থায় ফিরেছিল ২৫ ও ২৬ জুলাইয়ের (সোম ও মঙ্গলবার) লেনদেন। বুধবার (২৭ জুলাই) থেকে আবার কমতে থাকে সূচক ও লেনদেন। অবস্থা মোকাবেলায় ফ্লোর প্রাইস বা সীমাবন্ধনী বেঁধে দেয় বিএসইসি।
বিএসইসির নেয়া এসব পদক্ষেপে প্রাণ ফিরে পায় রোববারের (৩১ জুলাই/২০২২) পুঁজিবাজার। উত্থানের মধ্যদিয়ে সূচকের চাকা চলতে থাকে উজানের দিকে। বৃহস্পতিবার (৪ আগষ্ট/২০২২) পর্যন্ত চলমান রয়েছে এ ধারা।
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের উত্থানের পেছনে বস্ত্র, বীমা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং ওষুধ ও রসায়ন খাতের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। এরমধ্যে বৃহস্পতিবার ৫২ শতাংশের বেশি সিকিউরিটিজের শেয়ারদর কমলেও দাপটে ছিল বস্ত্র এবং ওষুধ ও রসায়ন খাতের শেয়ার।
এদিন শেয়ারদরে ধসের পেছনে দায় বেশি ছিল ব্যাংক-বিমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং প্রকৌশল খাতের। এসব খাতের প্রায় সব শেয়ারের দাম কমেছে।
ডিএসইতে বৃহস্পতিবার ওষুধ ও রসায়ন খাতের ৩২টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ২৬টির, কমেছে ৪টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ২টি কোম্পানির শেয়ারের দাম।
আর, বস্ত্র খাতের ৫৮াট কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৩৯টির, কমেছে ১৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৬টি কোম্পানির শেয়ারদর।
দুই খাতের প্রভাবে ডিএসইতে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১২ দশমিক ১৪ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ১৯ শতাংশ বেড়ে ৬ হাজার ৩১২ দশমিক ২৫ পয়েন্টে অবস্থান করে।
ডিএসইতে সপ্তাহের ৫ কার্যদিবসই সূচক বেড়েছে। আর, সপ্তাহজুড়ে বাজার মূলধন বেড়েছে ৩২ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকা।
প্রধান সূচকের পাশাপাশি, ডিএসইতে বৃহস্পতিবার অন্য দুই সূচকও বেড়েছে। এদিন ডিএসইএস বা শরিয়াহ সূচক ৪ দশমিক ৬৮ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৩৪ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৩৭৫ দশমিক ১৯ পয়েন্টে অবস্থান করে। আর, ডিএস-৩০ সূচক ৬ দশমিক ৩৭ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ২৮ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ২৬৫ দশমিক ২০ পয়েন্টে অবস্থান নেয়।
ডিএসইতে বৃহস্পতিবার ৩৮১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এরমধ্যে দর বেড়েছে ১২৯টি কোম্পানির। কমেছে ১৯৯টি প্রষ্ঠিানের শেয়ারদর। আর, দর অপরিবর্তিত ছিল ৫৩টি কোম্পানির।
পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত এসব কোম্পানির ৩৩ কোটি ৬১ লাখ ৪৭ হাজার ৬৬৪টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এতে মোট ১ হাজার ১৯০ কোটি ২৬ লাখ ৫ হাজার টাকার শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের দিন বুধবার (৩ আগষ্ট/২০২২) লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ১৯৫ কোটি ৪১ লাখ ৩৭ হাজার টাকার শেয়ার। সেহিসেবে লেনদেন কমেছে ৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা।
এদিন ডিএসইতে টাকার অঙ্কে লেনদেনের শীর্ষে উঠে আসে বেক্সিমকো লিমিটেড। কোম্পানিটির ১০০ কোটি ৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়। শেয়ারটির দর বেড়েছে ৯০ পয়সা। এরপর অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৫৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকা লেনদেন হয়। এ শেয়ারের দর বেড়েছে ১২ টাকা ২০ পয়সা। মালেক স্পিনিং মিলস লিমিটেডের ৪৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকার লেনদেন হয়। এর দর বেড়েছে ১ টাকা ৪০ পয়সা।
এরপর, ওরিয়ন ফার্মা লিমিটেডের ৩১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা লেনদেন হয়। শেয়ারটির দর বেড়েছে ৪ টাকা। ম্যাকসন্স স্পিনিং মিলস লিমিটেডের লেনদেন হয়েছে ৩০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। দর বেড়েছে ১ টাকা ৮০ পয়সা। সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস লিমিটেডের ২৯ কোটি ২৯ লাখ, দর বেড়েছে ৭০ পয়সা। একমি পেস্টিসাইডস লিমিটেডের ২৮ কোটি ২৭ লাখ, দর বেড়েছে ৩ টাকা ৮০ পয়সা। বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ১৯ কোটি ৪৭ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়। দর বেড়েছে ৭০ পয়সা।
আবার, শেয়ারদর বৃদ্ধির ক্ষেত্রে চমক দেখিয়েছে বস্ত্র এবং ওষুধ ও রসায়ন খাত। ওষুধ ও রসায়ন খাতের ৩২টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ২৬টির এবং কমেছে ৪টির। আর, অপরিবর্তিত রয়েছে এ খাতের ২টি কোম্পানির শেয়ারদর।
বস্ত্র খাতের ৫৮টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৩৯টির এবং কমেছে ১৩টির। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৬টি কোম্পানির শেয়ারদর।
শেয়ারদর ১০ শতাংশ বেড়ে দর বৃদ্ধির শীর্ষে উঠে আসে একমি পেস্টিসাইডস লিমিটেড ও ইউনিয়ন ক্যাপিটাল লিমিটেড। এরপর, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ এবং খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেডের ৮ দশমিক ৫১ শতাংশ শেয়ারদর বেড়েছে।
ডিএসইতে খাতভিত্তিক লেনদেন চিত্রে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার ডিএসইর মোট লেনদেনের ২৭ দশমিক ৪ শতাংশ দখলে নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে বস্ত্র খাত। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৫ দশমিক ২ শতাংশ দখলে নিয়েছে ওষুধ ও রসায়ন খাত।
অপর পুঁজিবাজার চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) বৃহস্পতিবার সূচকের উত্থান বিদ্যমান ছিল। এ দিন সিএসইতে সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৫৭ দশমিক ৭৮ পয়েন্ট বা দশমিক ৩১ শতাংশ বেড়ে ১৮ হাজার ৫৪০ দশমিক ৯৩ পয়েন্টে অবস্থান করে। আগের দিন যার অবস্থান ছিল ১৮ হাজার ৪৮৩ পয়েন্টে। আর, সিএসসিএক্স মূল্যসূচক ৩৫ দশমিক ৯৬ পয়েন্ট বা দশমিক ৩২ শতাংশ বেড়ে অবস্থান করে ১১ হাজার ১০৯ দশমিক ৬৭ পয়েন্টে। -যা আগের দিন ছিল ১১ হাজার ৭৪ পয়েন্ট।
সিএসইতে বৃহস্পতিবার সর্বমোট ২৯৬টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১১৭টির, কমেছে ১২২টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ৫৭টির দর। এদিন সিএসইতে ২১ কোটি ৩০ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট লেনদেন হয়। আগের দিন এর পরিমাণ ছিল ২১ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।