সকল মেনু

৩৬০ টাকার কোম্পানিই করছে ৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ পরিকল্পনা

ডেস্ক রিপোর্ট: আধুনিক প্রযুক্তির ওপর জোর দেয়া হচ্ছে আনোয়ার গ্রুপের ডেনিম খাতের বিনিয়োগে। মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় আনোয়ার জুট মিলের কারখানার উন্নয়ন করে সেখানে ডেনিম প্রস্তুতকারক ইউনিটগুলি স্থাপন করা হবে।

বিশ্ব অর্থনীতি যখন গতি হারিয়ে স্তিমিত হয়ে পড়বে এমন শঙ্কা উঁকি দিচ্ছে—তার মধ্যেই দেশের শিল্পখাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান আনোয়ার গ্রুপ নতুন করে বড় বিনিয়োগে যাচ্ছে। ইস্পাত, ডেনিম, কাগজ, কার্টন শিল্পে অন্তত ৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে গ্রুপটি।

গ্রুপটির চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন এ সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা করেন, অর্থনীতি প্রতিবার গতি হারানোর পর, আবার চাহিদা বাড়তে দেখা যায়। বর্তমান সংকট কেটে যাওয়ার পর আমরা নতুন চাহিদাটার সুযোগ নিতে চাই। এ জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি, কারণ আমরা ব্যবসা ধরতে আগ্রাসী থাকতে চাই।

তিনি জানান, ইতোমধ্যেই তার গ্রুপ ডেনিম ও ইস্পাত উৎপাদনের কিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এ সব প্রকল্প ২০২৫ সালের মধ্যে শেষ হবে। এতে কর্মসংস্থান হবে ৬ হাজারের বেশি মানুষের।

আনোয়ার গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, ইস্পাত উৎপাদনে আমরা ৩ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করছি। প্রকল্পটি ২০২৪ সালের মধ্যে শেষ হবে। ডেনিমে ১,৪০০ কোটি টাকার একটা বিনিয়োগ নিয়ে আসছি। উৎপাদনে আসবে ২০২৫ সালের আগে।

মনোয়ার হোসেন জানান, ডেনিম ও ইস্পাতের আগেই তিনি রপ্তানিমুখী কার্টন ও কাগজ শিল্প স্থাপন করতে চান। কার্টন ইন্ডাস্ট্রির কাজ ২০২৩ সালের তৃতীয় প্রান্তিক নাগাদ শেষ করতে চাই। পরের বছরই পেপার ইন্ডাস্ট্রি বাজারে আসবে।

এই উদ্যোক্তা বলেন, অর্থনীতি স্তিমিত হয়ে পড়ার এ সময়ে কীভাবে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় থেকে—উৎপাদন খাতে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখা যায় এনিয়ে তারা পরিকল্পনা করছেন।

দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ রড উৎপাদক হয়ে ওঠার পরিকল্পনা

বর্তমানে বিএসআরএম-এর বার্ষিক রড উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ১৬ লাখ টন। আরও ৫ লাখ টন উৎপাদন সক্ষমতার নতুন কারখানা সচলের অপেক্ষায় প্রতিষ্ঠানটি। দেশের রড বাজারের প্রায় ২৩-২৪ শতাংশ দখলে রেখেছে বিএসআরএম।

বিএসআরএমের পরই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৪ লাখ টন উৎপাদন সক্ষমতা আবুল খায়ের গ্রুপের একেএস স্টিলের। তবে ২০২৩ সালের শেষদিকে নতুন কারখানা নির্মাণ শেষ হলে বিএসআরএমের পরই দ্বিতীয় বৃহৎ উৎপাদন সক্ষমতা অর্জন করবে আনোয়ার গ্রুপ।

আনোয়ার গ্রুপের কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে ২ লাখ ৭০ টন রড উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে তাদের। নতুন কারখানা আরও ১৬ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন সক্ষমতা যোগ করবে।

মনোয়ার হোসেন বলেছেন, দেশজুড়ে চলমান সরকারের একাধিক মেগাপ্রকল্প এবং গ্রামীণ অর্থনীতির ইতিবাচক পরিবর্তন আনোয়ার গ্রুপকে ব্যবসা সম্প্রসারণে উৎসাহ যুগিয়েছে।

দেশে সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নের হাত ধরে মাথাপিছু ইস্পাতের ব্যবহার বেড়েছে। আর সেজন্যই শীর্ষস্থানীয় ইস্পাত প্রস্তুতকারকেরা তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ করছে বলে জানিয়েছেন শিল্পটির অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিরা।

২০১৮ সালে দেশে ইস্পাত উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ৮৫ লাখ টন। সে তুলনায় ব্যবহার ছিল ৭০ লাখ টন। এর আগের আট বছরে মাথাপিছু ইস্পাত ব্যবহার প্রায় দ্বিগুণ হয়; ২০১৮ সালে এসে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৫ কেজির বেশি।

শিল্প সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, সরকারি প্রকল্পগুলি বাস্তবায়িত হলে আগামী কয়েক বছরে মাত্রাপিছু ইস্পাত ব্যবহার ২১৭ কেজিতে উন্নীত হবে।

তারা জানান, বর্তমানে দেশে ইস্পাতের বাজার প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকার। এই খাতের ৪০০ কোম্পানিতে প্রায় ৩ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।

এ ছাড়া, চীনের ইস্পাত খাতের জায়ান্ট কুনমিং আয়রন অ্যান্ড স্টিল হোল্ডিংস কোম্পানি—চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ  ইস্পাত উৎপাদন কারখানা স্থাপনে ২৩০ কোটি ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।

স্টার ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কনসোর্টিয়াম লিমিটেড নামে বেসরকারিখাতের ১৭টি প্রতিষ্ঠানের একটি যৌথ কনসোর্টিয়াম কুনমিং-এর স্থানীয় অংশীদার হিসেবে কাজ করবে। তারা বছরে ২০ লাখ টন লৌহ ও ইস্পাত পণ্য উৎপাদন করতে চায়। ২০২২ সাল থেকেই কনসোর্টিয়ামটি কার্যক্রম শুরু করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

পাটকলের পুরোনো যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপন করবে আধুনিক প্রযুক্তির ডেনিম উৎপাদন

আধুনিক প্রযুক্তির ওপর জোর দেয়া হচ্ছে আনোয়ার গ্রুপের ডেনিম খাতের বিনিয়োগে। মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় আনোয়ার জুট মিলের কারখানার উন্নয়ন করে সেখানে ডেনিম প্রস্তুতকারক ইউনিটগুলি স্থাপন করা হবে।

১৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে কারখানাটির নির্মাণ কাজ শেষে ২০২৫ সাল থেকে রপ্তানি শুরুর কথা জানিয়েছেন আনোয়ার গ্রুপের চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন।

তিনি বলেন, পাটের সুতা এক সময় ইউরোপ রপ্তানি করা যেত। এখন ওই জায়গা ম্যানমেইড ফাইবার (কৃত্রিম সুতা)-এর দখলে চলে গেছে। ফলে সেখানে আমরা ডেনিম রপ্তানির বিপুল সম্ভাবনা দেখছি। মুন্সিগঞ্জের কারখানায় ১,২০০ লোকের কর্মসংস্থান হবে।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে বর্তমানে ৪০টি ডেনিম ফেব্রিকস ও ৫০০টির মতো ডেনিম পোশাক উৎপাদনকারী কারখানা রয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৩৫০ কোটি ডলার মূল্যের ডেনিম রপ্তানি করেছে, রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৫ শতাংশের বেশি।

মনোয়ার হোসেনের মতে, ডেনিমের বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের আরও উন্নতি করার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।

সেই ১৮৩৪ সাল থেকে পথচলা

দেশের সবচেয়ে পুরানো কোম্পানির অন্যতম আনোয়ার শিল্প গোষ্ঠীর সূচনা ১৮৩৪ সালে হাইডস অ্যান্ড স্কিনস ব্যবসার মাধ্যমে। আনোয়ার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা আনোয়ার হোসেনের দাদা লাক্কু মিয়া এটি প্রতিষ্ঠা করেন।

১৮৮ বছরের পুরনো শিল্প গোষ্ঠীটি এখন অটোমোবাইল থেকে শুরু করে ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতসহ ৩৬ ধরনের পণ্য ও সেবার ব্যবসায় জড়িত। এর আওতায় কোম্পানি রয়েছে ২০টির বেশি। বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ১৫ শতাংশের বেশি। কর্মসংস্থান হয়েছে ১৪ হাজারের বেশি মানুষের।

মনোয়ার হোসেন জানান, তার বাবা আনোয়ার হোসেনই শিল্প গ্রুপটির মূল উদ্যোক্তা। তিনি সাহস ও সৃজনশীল শক্তি দিয়েই ব্যবসার সম্প্রসারণ করেছেন।

তিনি বলেন, মাত্র ৩৬০ টাকা হাতে নিয়ে বাবা পারিবারিক ব্যবসার হাল ধরেন। কিন্তু, মাত্র কয়েক বছরের মাথায় কোম্পানির ব্যালান্স কয়েক লাখ টাকায় উন্নীত করেন।

  • তথ্য সূত্র : দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top