স্টাফ রিপোর্টার: ফ্লোর প্রাইস প্রথমে বেশ কাজে দিলেও এখন আর বিশেষ প্রভাব বিস্তার করতে পারছে না। বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনে কমে হয়েছে ৫৮৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। যদিও বুধবার ৭৯৯ কোটি টাকা এবং সোমবার ৯৫৪ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে।
চলতি সপ্তাহের তিন দিনেই কমেছে লেনদেন ও প্রধান সূচক ডিএসই এক্স। এ নিয়ে সপ্তাহের চার কর্মদিবসই কমেছে সূচক ও লেনদেন।
আগের সপ্তাহে ৩৩১ পয়েন্ট সূচকের উত্থানে আশার সঞ্জার করেছিল, চলতি সপ্তাহে ১৬৩ পয়েন্টের পতনে তার চেয়ে বেশি হতাশ করেছে বিনিয়াগকারীদের।
ফ্লোর প্রাইসের বিষয়ে সিদ্ধান্ত ঘোষণার দিন লেনদেন ছিল ৪৪১ কোটি ৭৭ লাখ ৮২ হাজার। আর এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার পর টানা চার কর্মদিবস লেনদেন বেড়ে এক হাজার দুই শ কোটি ছুঁই ছুঁই হয়ে যাওয়ার পর টানা পাঁচ দিনে সূচক ৩৩১ পয়েন্ট বেড়ে যাওয়ার পর হতাশা কাটার আলোচনা তৈরি হয়।
বাজার পরিসংখ্যানে দেখে গেছে, ফ্লোর প্রাইস দেয়ার আগের দিন বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ারদর ছিল ১১৪ টাকা ২০ পয়সা। তবে আগের পাঁচ দিনের গড়মূল্য হিসাব করে ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন দর নির্ধারিত হয় ১১৫ টাকা ৭০ পয়সা।
গত সপ্তাহে শেয়ারদর বেড়ে ৪ আগস্ট উঠে ১২৭ টাকা ৯০ পয়সায়। চলতি সপ্তাহের চার কর্মদিবসে যতটুকু বেড়েছিল, সেখান থেকে প্রায় সবটুকুই হারিয়ে এখন দর নেমে দাঁড়িয়েছে ১১৭ টাকা ১০ পয়সায়।
বৃহস্পতিবার (https://bullbd.com/#/) বুলবিডি থেকে নেয়া গ্রাফ
কয়েকটি কোম্পানি ছাড়া বেশির ভাগের ক্ষেত্রেই একই চিত্র। শক্তিশালী মৌলভিত্তিক গ্রামীণ ফোনও তার ফ্লোর প্রাইস ২৮৬ টাকা ৬০ পয়সার কাছাকাছি ২৮৭ টাকা ৩০ পয়সায় নেমে এসেছে।
নতুন সিম বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর শেয়ারপ্রতি সাড়ে ১২ টাকা অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ ঘোষণার পর শেয়ারদর যতটা বেড়েছিল, তার প্রায় পুরোটাই এক দিনেই নাই হয়ে গেছে। লভ্যাংশসংক্রান্ত রেকর্ড ডেট শেষে লেনদেন শুরু হতেই ১৫ টাকা ৪০ পয়সা কমে গেছে শেয়ারদর।
বেক্সিমকো ও গ্রামীণফোনের মতো চিত্র শত শত কোম্পানির। প্রতিটি শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্য বা ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেয়ার পাশাপাশি পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা গণনা পদ্ধতি শেয়ারের ক্রয়মূল্যে নির্ধারণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসার সপ্তাহে প্রতিদিন বাড়লেও পরের সপ্তাহের প্রতিদিনই পড়ল পুঁজিবাজার।
রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ৮ পয়েন্ট, সোমবার ৪৫ পয়েন্টের পর মঙ্গলবার আশুরার ছুটি শেষে ৭৮ পয়েন্টের পতনে জেঁকে বসা আতঙ্কে সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার উধাও হয়েছে শেয়ারের ক্রেতা। ৩২ পয়েন্ট সূচকের পতনের পর ৯ কর্মদিবস পর লেনদেন নেমে এলো পাঁচ শ কোটির ঘরে।
বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের চিত্র। এ নিয়ে সপ্তাহের চার কর্মদিবসই কমল সূচক ও লেনদেন
আগের সপ্তাহে ৩৩১ পয়েন্ট সূচকের উত্থান বিনিয়োগকারীদের যতটা আশাবাদী করেছিল, চলতি সপ্তাহে ১৬৩ পয়েন্টের পতন তার চেয়ে বেশি হতাশ করেছে বিনিয়াগকারীদের। আগের সপ্তাহে আর্থিক ক্ষতি তারা যতটা পোষাতে পেরেছিলেন, চলতি সপ্তাহে সেটি উধাও হয়ে গেছে।
ফ্লোর প্রাইসের বিষয়ে সিদ্ধান্ত ঘোষণার দিন লেনদেন ছিল ৪৪১ কোটি ৭৭ লাখ ৮২ হাজার। আর এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার পর টানা চার কর্মদিবস লেনদেন বেড়ে এক হাজার দুই শ কোটি ছুঁই ছুঁই হয়ে যাওয়ার পর টানা পাঁচ দিনে সূচক ৩৩১ পয়েন্ট বেড়ে যাওয়ার পর হতাশা কাটার আলোচনা তৈরি হয়।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে পুঁজিবাজারে দর সংশোধন, এরপর ধস নামার ৯ মাস পর প্রথমবারের মতো এমন একটি আলো ঝলমলে সপ্তাহ পার করার পর চলতি সপ্তাহে পুরো বিপরীত চিত্র।
আগের সপ্তাহে ডলারের বিপরীতে টাকার মান স্থিতিশীল হলেও চলতি সপ্তাহ দেখা দেয় অস্থিরতা। ১০৮ টাকা থেকে ১০ শতাংশের বেশি বেড়ে খোলাবাজারে দর উঠেছে ১২০ টাকা। যুক্তরাজ্যের পাউন্ড ছুঁয়েছে দেড় শ টাকা।
এই অবস্থায় অর্থনীতি নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার পাশাপাশি নানা ধরনের গুজব-গুঞ্জন ডালপালা মেলছে। আর বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে দিতে পারলেই যেন বাঁচে। বাজারে বিপুল বিক্রয় চাপ, কিন্তু ক্রেতার অভাব- এই অবস্থায় শেয়ারদর আরও কমছে। কিন্তু ফ্লোর প্রাইসের কারণে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের নিচে নামা সম্ভব নয়, এই অবস্থাতেও অনিশ্চয়তার কারণে কিনতে চাইছে না তারা।
যেমন ফ্যামিলি টেক্সের ফ্লোর প্রাইসে ৩৬ লাখ ৩৭ হাজার ২৮৩টি শেয়ারের বিক্রেতা থাকলেও একজন ক্রেতাও ছিল না।
পাঁচটি কোম্পানির একটি শেয়ারও লেনদেন হয়নি, একটি কোম্পানির একটি, একটি কোম্পানির দুটি, ছয়টি কোম্পানির এক শর নিচে, আরও ছয়টি কোম্পানির পাঁচ শর নিচে, আরও তিনটি কোম্পানির এক হাজারের কম, আরও ১৪টি কোম্পানির তিন হাজারের কম, আরও ৯টি কোম্পানির পাঁচ হাজারের কম শেয়ার হাতবদল হয়েছে। যদিও বিক্রেতা ছিল লাখ লাখ শেয়ারের।
বৃহস্পতিবার দিনভর ৯৬টি শেয়ারের দাম বেড়েছে। আর ১৬৬টি শেয়ারের দাম কমেছে। আগের দামেই লেনদেন হয়েছে ১১৬টি কোম্পানির শেয়ার। হাতবদল হয়েছে ৫৮১ কোটি ৮৭ লাখ ৮৮ হাজার টাকা, যা আগের দিন ছিল ৭৯৯ কোটি ৪৮ লাখ ৩৭ হাজার টাকা।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।