সকল মেনু

নতুন মালিকানায় সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল পরীক্ষামূলক উৎপাদনে

সিনিয়র রিপোর্টার: বন্ধ হওয়ার সাড়ে পাঁচ বছর পর পরীক্ষামূলক উৎপাদনের ঘোষণা দিয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের প্রতিষ্ঠান সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল লিমিটেড। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় অভ্যন্তরীণ সংস্কারকাজ শেষে শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ উৎপাদনে যাবে বলে আশা করছে নতুন মালিকানায় আসা আলিফ গ্রুপ কর্তৃপক্ষ। গ্রুপটির আরো দুটি কোম্পানি বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে।

চট্টগ্রামের কালুরঘাট ভারী শিল্প এলাকায় স্থাপিত কারখানার পরীক্ষামূলক উৎপাদনের উদ্বোধন করেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। বস্ত্র খাতের কোম্পানি সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল ২০১৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়।

কোম্পানিটি প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে শেয়ার ছেড়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৪৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। কিন্তু কয়েক বছর যেতে না যেতেই উৎপাদন বন্ধ করে দেয় প্রতিষ্ঠানটি। আটকে যায় লগ্নিকারী ব্যাংক ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের প্রায় ২১৬ কোটি টাকা।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার আড়াই বছরের মধ্যেই অর্থাৎ ২০১৭ সালের শুরুতে কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় তৈরি পোশাক ক্রেতাদের সংগঠন অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের চাহিদা অনুযায়ী কারখানা সংস্কার করার কথা বলে ২০১৭ সালের ১ মে উৎপাদন বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় সিঅ্যান্ডএ কর্তৃপক্ষ। এতে ২০১৬ সাল থেকে লভ্যাংশবঞ্চিত সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

পরীক্ষামূলক উৎপাদন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, দেশের এখনো ৬-৭ শতাংশ শিক্ষিত বেকার রয়েছে। এমতাবস্থায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বন্ধ কোম্পানিগুলো চালু করা হলে বিপুল পরিমাণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

বর্তমান কমিশন এসব কারখানাগুলোর সংকট উত্তরণে সহযোগিতা করে উৎপাদনে ফেরানোর চেষ্টা করছে। এরই ধারাবাহিকতায় সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল আজ থেকে পরীক্ষামূলক উৎপাদনে ফিরল। আশা করছি সিঅ্যান্ডএর মতো অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে উৎপাদনে এনে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা ও দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

কারখানাটি পরিদর্শনের সময় দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বন্ধ কারখানার সংস্কারের কাজ শুরু করা হয়। বর্তমানে নিচতলার একটি ইউনিটের যন্ত্রপাতি মেরামত ছাড়াও কয়েকটি নতুন মেশিনারিজ স্থাপন করা হয়েছে। তবে কারখানার অন্যান্য বেশ কয়েকটি অংশের কাজ এখনো শুরুই করতে পারেনি নতুন উদ্যোক্তা কর্তৃপক্ষ।

কারখানার অনেক ফ্লোর এখনো পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। তাছাড়া কারখানা ভবন এলাকার একটি বহুতল নির্মাণাধীন ভবনের পাইলিংয়ের কাজ শুরুর পর পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। সেটি নির্মাণ শেষে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কারখানাটির শতভাগ উৎপাদন সম্ভব হবে বলে আশা করছে মালিকরা। শিগগিরই এ ভবনের নির্মাণকাজ শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছে আলিফ গ্রুপ কর্তৃপক্ষ।

সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল কবে পুরোদমে উৎপাদনে ফিরবে এ বিষয়ে গণমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে আলিফ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আজিমুল ইসলাম বলেন, কারখানাটির পূর্ণাঙ্গ উৎপাদনে যেতে আমরা শতভাগ চেষ্টা করছি। এরই মধ্যে ৫০ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগ করেছি। ব্যাংকের প্রায় ২১৬ কোটি টাকার দায় পুনঃ তফসিল করে নতুন করে উৎপাদনের চেষ্টা করছি। আমরা যতটা সম্ভব দ্রুত সময়ের মধ্যে কারখানায় পূর্ণাঙ্গ উৎপাদন শুরুর চেষ্টা করছি। তবে এ বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো সময় জানাতে পারেননি তিনি।

এদিকে পরিদর্শনকালে কারখানার একাধিক শ্রমিক-কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, অধিগ্রহণের পর প্রায় পরিত্যক্ত কারখানাটির যন্ত্রপাতিগুলো সংস্কার করা হয়েছে। কিছু কিছু যন্ত্রাংশ নতুন করে আমদানি করে স্থাপন করা হয়েছে। পরীক্ষামূলক উৎপাদনের উদ্বোধন হলেও পূর্ণাঙ্গ উৎপাদনে যেতে এখনো অনেক কাজ বাকি। কেবল মেরামতের মাধ্যমে চালু করা মেশিনারিজগুলো আলাদাভাবে সংযোগ স্থাপনের কাজ শুরু করা হয়েছে। লোকবল নিয়োগ ছাড়াও কাঁচামাল আমদানি, নতুন কার্যাদেশ শুরু না হওয়ায় পুরোপুরি কারখানাটি চালু করতে সময় লাগবে বলে মনে করছেন তারা।

আলিফ গ্রুপের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, কারখানাটি পুরোপুরি উৎপাদনে গেলে গার্মেন্টস, টেক্সটাইলসহ প্রায় ৪ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। তাছাড়া আলিফ গ্রুপের একই ধরনের ব্যবসা থাকায় কার্যাদেশ পাওয়া সহজ হবে। নতুন করে চালু করার পর স্থগিত থাকা বার্ষিক সাধারণ সভার (এজিএম) বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক পদক্ষেপ নেয়া হবে।

তাছাড়া নিরীক্ষা প্রতিবেদন প্রস্তুতের পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেয়ার বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নেয়ামত উল্লাহ ও আলিফ গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিয়াজ মোর্শেদ।

আলিফ টেক্সটাইল কতৃক সিএন্ডএ অধিগ্রহণ

২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে আলিফ গ্রুপের পক্ষ থেকে সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল অধিগ্রহণের প্রস্তাব দেয়া হয়। আলিফ গ্রুপের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে অক্টোবরে বিএসইসি কিছু শর্ত দিয়ে সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল অধিগ্রহণে সম্মতি দেয়।

আলিফ গ্রুপকে যেসব শর্ত দেয়া হয়-

>>> নতুন শেয়ার ইস্যু ও বন্ডের মাধ্যমে মূলধন বৃদ্ধিতে আসন্ন নতুন ম্যানেজমেন্টকে প্রযোজ্য সকল সিকিউরিটিজ আইন পরিপালন করতে হবে।

>>> সংশ্লিষ্ট আইনের বিধিবিধান পরিপালন করে আলিফ গ্রুপকে তাদের প্রস্তাবিত অধিগ্রহণ কার্যক্রম নিষ্পত্তি করতে হবে।

>>> সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলকে উৎপাদনে ফেরাতে আলিফ গ্রুপ অবিলম্বে কাজ শুরু করবে। এ জন্য গ্যাস লাইনসহ অন্যান্য সকল ইউটিলিটিজের সমস্যা কাটিয়ে তুলবে।

>>> আলিফ গ্রুপকে সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের ব্যাংকের দায় মেটাতে হবে।

>>> আলিফ গ্রুপের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ ও আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিংকে সিকিউরিটিজ আইন মেনে স্থগিত থাকা সব এজিএম সম্পন্ন এবং আর্থিক প্রতিবেদনে দাখিল নিয়মিত করতে হবে।

>>> শেয়ার মানি ডিপোজিটের বা সংগৃহীত অর্থ পৃথক ব্যাংক হিসাবে রাখতে হবে। যা দিয়ে শুধুমাত্র ব্যাংকের দায় মেটানো ও উৎপাদন চালুর কাজে ব্যবহার করা যাবে।

>>> সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের উৎপাদন শুরু করতে আলিফ গ্রুপ সকল উদ্যোগ এবং দায় নেবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top