সকল মেনু

এক্সপোজার লিমিট বাদ দিতে বিএমবিএর চিঠি বাংলাদেশ ব্যাংকে

স্টাফ রিপোর্টার: বন্ড ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডকে পুঁজিবাজারে এক্সপোজার লিমিটের বাইরে রাখতে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারকে। এর স্বপক্ষে বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরে বিএমবিএ ৪টি প্রস্তাব আকারে ওই চিঠি দিয়েছে গভর্নরকে।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে। এতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরতে শুরু করেছে। ভবিষ্যতেও দেশের পুঁজিবাজারের টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে কেন্দ্রিয় ব্যাংক এ ধরণের উদ্যোগ অব্যাহত রাখবে বলে বিএমবিএ প্রত্যাশা করেন।

বিএমবিএ চিঠিতে বলে, গত কয়েক বছরে দেশের পুঁজিবাজারে তেমন উন্নতি হয়নি। জিডিপির তুলনায় বাজারের আকার এখনো খুব ছোট। এছাড়া বিনিয়োগ বহুমুখীকরণ এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণের সুযোগও খুব বেশি নয়।

দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ উৎসাহিত করার পাশাপাশি পুঁজিবাজারের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে বলে মনে করে বিএমবিএ। -যেকারণে মিউচ্যুয়াল ফান্ড ও বন্ডের বিষয় বিবেচনা করার প্রস্তাব দিয়েছে তারা।

বিএমবিএর প্রস্তাবগুলোর মধ্যে-

১) মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো পেশাগতভাবে পরিচালিত হয় এবং তুলনামূলকভাবে এতে বিনিয়োগ নিরাপদ। কারণ, মিউচুয়াল ফান্ডের বাজার মূল্যের ওঠানামা স্টকের তুলনায় যথেষ্ট কম। যেসব বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগের জ্ঞান কম, মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো তাদের জন্য উপযুক্ত। বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে চাইলে মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের প্রচার করতে হবে।

২) অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের প্রাতিষ্ঠানিক তহবিল এবং মিউচ্যুয়াল ফান্ডের অংশগ্রহণের প্রবাহ অনেক কম (মার্কেট ক্যাপের শতাংশ হিসাবে এইউএম: ৩ শতাংশের কাছাকাছি)। ২০১২-২০২২ সাল পর্যন্ত ৫ গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে ভারতের মিউচ্যুয়াল ফান্ড শিল্পের সামগ্রিক আকার। মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ ভারতীয়দের পারিবারিক সঞ্চয়ের প্রায় ৯ দশমিক ৪ শতাংশ।

দেশের পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক তহবিলের প্রবাহকেও বাড়াতে পারলে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের অংশগ্রহণে বাজার আরও যুক্তিসঙ্গতভাবে কাজ করবে। বাজারের অস্থিরতা হ্রাস পাবে এবং খুচরা বিনিয়োগকারীরা অতিমাত্রায় উপকৃত হবে।

৩) যারা ঝুঁকি নিতে চায়না তাদের জন্য বন্ড উপযুক্ত। কারণ, বন্ডগুলো নির্দিষ্ট আয় প্রদান করে। এছাড়াও, কোম্পানিগুলো বন্ড ইস্যু করে মূলধন বিনিয়োগের জন্য দীর্ঘমেয়াদী তহবিল সংগ্রহ করতে পারে। আর, বন্ড জনপ্রিয় করতে পারলে বিনিয়োগকারী এবং ইস্যুকারী উভয়ই বাড়বে। এখনো ইক্যুইটির আধিপত্য থাকায় দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ বহুমুখীকরণের সুযোগ কম রয়েছে।

বিনিয়োগ বহুমুখীকরণের সুযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে বন্ড বা অন্যান্য বিনিয়োগ পণ্য অনেক কম রয়েছে। বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন বাজারের আকার বৃদ্ধি এবং বাজারে আরও তহবিল আনতে সহায়ক হবে। বাজারের আকার এবং বিনিয়োগ-বৈচিত্র্যের সুযোগ বাড়াতে বিনিয়োগকারীদের জন্য বন্ডের মতো আরও বিনিয়োগ পণ্য আনার উপর তাগিদ দেয় বিএমবিএ।

৪) ব্যাংক থেকে দীর্ঘমেয়াদী মূলধন সংগ্রহ করে থাকে বেশিরভাগ শিল্প প্রতিষ্ঠান। বিপরিতে, ব্যাঙ্কগুলো দীর্ঘমেয়াদী ঋণ প্রদানের জন্য গ্রাহকদের কাছ থেকে স্বল্পমেয়াদী আমানত নেয়। ফলে ব্যাঙ্কগুলোতে নগদ প্রবাহের অমিল তৈরি হয়। তাই, বন্ডের প্রচার হলে অর্থায়নের নতুন যায়গা পাবেন উদ্যোক্তারা।

বিএমবিএ ওই চিঠিতে আরো বলে, ব্যাঙ্ক কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর ধারা ২৬এ অনুযায়ী- শেয়ার, কর্পোরেট বন্ড, ডিবেঞ্চার, মিউচ্যুয়াল ফান্ড এবং পুঁজিবাজারে ব্যাঙ্কগুলোর সব ধরণের বিনিয়োগ পুঁজিবাজারের এক্সপোজারের অন্তর্ভুক্ত৷ বিভিন্ন ব্যাংক অতীতে মিউচ্যুয়াল ফান্ড এবং বন্ডে বিনিয়োগ করতো। এখন তারা মিউচ্যুয়াল ফান্ড এবং বন্ডে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখায় না। আর, ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মিউচ্যুয়াল ফান্ড এবং বন্ডে বিনিয়োগ- এক্সপোজার লিমিটের মধ্যে থাকায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পুঁজিবাজারের উন্নয়ন।

বিএমবিএর মতে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়ানোসহ বাজারে পণ্যের বৈচিত্র্য এনে পুঁজিবাজারের উন্নয়ন করা যেতে পারে। -যেকারণে বিএমবিএ বন্ড, মিউচ্যুয়াল ফান্ড, ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগে এক্সপোজার লিমিট বাদ দিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠির মাধ্যমে অনুরোধ করেছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top