সকল মেনু

কেয়া কসমেটিকসের মালিকানা পরিবর্তন নিয়ে গুঞ্জন

সিনিয়র রিপোর্টার: চলতি হিসাব বছরের (২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন) কোনো প্রান্তিকের আর্থিক তথ্য প্রকাশ করেনি কেয়া কসমেটিকস। এক-এক করে তিন প্রান্তিকের তথ্য এখন পর্যন্ত প্রকাশ না করায় অন্ধকারে রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

এদিকে, শেয়ারবাজারে গুঞ্জন ছড়িয়েছে কোম্পানিটির মালিকানা পরিবর্তন হচ্ছে! আরো গুঞ্জন রয়েছে, চলতি হিসাব বছরে কোম্পানিটি ভালো মুনাফা করেছে।

কেয়া কসমেটিকস ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানি হিসেবে তালিকাভুক্ত হলেও প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসার বড় অংশ টেক্সটাইল (বস্ত্র) সংশ্লিষ্ট। সম্প্রতি টেক্সটাইল খাতের যেসব প্রতিষ্ঠান আর্থিক তথ্য প্রকাশ করেছে, তার বেশিরভাগের মুনাফা বেড়েছে। যে কারণে গুজবের ভিত্তি স্থাপন করেছেন অনেক বিনিয়োগকারী।

তবে গুঞ্জনের বিষয়ে কেয়া কসমেটিকসের কোম্পানি সচিব মো. নূর হুসাইন জানিয়েছেন, শিগগিরই চলতি হিসাব বছরের তিন প্রান্তিকের (২০২০ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত) আর্থিক প্রতিবেদন একসঙ্গে প্রকাশ করা হবে।

গুঞ্জনের বিষয়ে সচিব মো. নূর হুসাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কসমেটিকসের পাশাপাশি আমাদের কটন, ইয়াং, নিটিং ও স্পিনিং মিলের ব্যবসা আছে। মালিকানা পরিবর্তনের বিষয়টি প্রাইস সেনসেটিভ। সুতরাং এ ধরনের কিছু থাকলে আমরা তথ্য প্রকাশ করবো।

আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ না করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, করোনার কারণে একটু সমস্যা হয়েছে। তাছাড়া আমাদের স্যার দেশের বাইরে ছিলেন। তিনি এখন দেশে এসেছেন। আর্থিক প্রতিবেদন তৈরির কাছ চলছে। শিগগিরই তিন প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন একসঙ্গে প্রকাশ করা হবে।

২০০১ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি শেয়ারের বড় অংশই রয়েছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ৪৬ দশমিক ২৭ শতাংশই রয়েছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের কাছে। বাকি শেয়ারের মধ্যে ৪৫ দশমিক ৪২ শতাংশ রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ৮ দশমিক ৩১ শতাংশ।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, এপ্রিল মাসে কোম্পানিটির বেশকিছু শেয়ার কিনেছেন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। মার্চে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে কোম্পানিটির ৭ দশমিক ৫৮ শতাংশ শেয়ার ছিল। অর্থাৎ এপ্রিলে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা কোম্পানিটির প্রায় ১ শতাংশ শেয়ার কিনেছেন।

প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বাড়ার বিপরীতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার সংখ্যা কমেছে। মার্চে কোম্পানিটির ৪৬ দশমিক ১৫ শতাংশ শেয়ার ছিল সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের শেয়ারের পরিমাণ অপরিবর্তিত রয়েছে।

কোম্পানিটির লভ্যাংশের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২০ সালে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়। ২০১৯ সালে কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। তার আগে ২০১৮ সালে ১০ শতাংশ, ২০১৭ সালে ২০, ২০১৬ সালে ১৮, ২০১৫ ও ২০১৪ সালে ২০ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দেয় কোম্পানিটি।

এদিকে মালিকানা পরিবর্তন ও মুনাফা বাড়তে পারে এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ায় বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ সম্প্রতি নতুন করে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার কিনেছে। প্রকৃত অবস্থা কী, তা নিয়ে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রয়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। কারণ কেয়া কসমেটিকসের পক্ষ থেকে কোনো বিষয়েই তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।

এদিকে, কেয়া কসমেটিকসের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, কসমেটিকসের পাশাপাশি কোম্পানিটির নিট কম্পোজিট, কটন, ইয়াং ও স্পিনিং মিলসের ব্যবসা রয়েছে। তবে কোন খাতের ব্যবসা কত শতাংশ সে বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়নি।

একটি কোম্পনি কত দ্রুত বাজারে উঠে আসতে পারে ও পতনের শিকার হয় তার একটি উল্লেখযোগ্য প্রমাণ হলো কেয়া গ্রুপ। ৯০ এর দশকে কেয়া গ্রুপের মালিক আব্দুল খালেক পাঠানের হাত ধরে কোম্পানিটির যাত্রা শুরু হয়। সাবান ও ডিটারজেন্ট পাউডারের মাধ্যমে ২০০০ সালের দিকে কেয়া গ্রুপ দেশের শীর্ষ স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। তবে পরিকল্পনাহীনতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে এর পতন হতেও বেশি সময় লাগেনি।

এর আগে ২০১৮ সালেও অনাদায়ী খেলাপি ঋণ পরিশোধ না করার দায়ে কেয়া কসমেটিকসের গাজীপুরের কারখানার মালামাল, ভবন ও যন্ত্রপাতি নিলামে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিল রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক লিমিটেড। সে বছরের ২৬ জুন কোম্পানিটির সম্পত্তি নিলামে বিক্রি করে ঋণের অর্থ আদায়ের ঘোষণা দেয় ব্যাংকটি।

এ ছাড়া ২০১৭ সালের ২০ আগস্ট রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকা থেকে কেয়া গ্রুপের মালিক আবদুল খালেক পাঠানকে গ্রেপ্তার করে দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তারা। কেয়া ইয়ার্ন মিলস লিমিটেডের নামে কৃষি ব্যাংক থেকে ১১১ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের মামলায় খালেক পাঠানকে গ্রেপ্তার করা হয়।

একদিকে, কেয়া গ্রুপের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে ছিল পূবালী ব্যাংক। অনাদায়ী খেলাপি ঋণ পরিশোধ না করার দায়ে চলতি ২০২১ সালের মে মাসে কেয়া কসমেটিকসের বিভিন্ন অবকাঠামোসহ কারখানার মালামাল, ভবন ও যন্ত্রপাতি নিলামে তোলার বিজ্ঞাপন দিয়েছিল পূবালী ব্যাংক লিমিটেড।

পূবালী ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, কেয়া কসমেটিকসের বিভিন্ন বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স রয়েছে। যেখানে বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা বসবাস করেন। এসব সম্পত্তির মূল্য ধরা হয় প্রায় ২৭০ কোটি টাকা। নিলামে আগ্রহী ক্রেতাদের ২৪ মের মধ্যে আবেদনের অনুরোধ জানিয়েছিল ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। পরে ব্যাংকের অনাদায়ী ঋণের কিস্তি পরিশোধ করে নিলাম ঠেকায় কেয়া কসমেটিকস।

নিলামের তফসিলের মধ্যে ছিল কেয়া গ্রুপের ফ্ল্যাগশিপ সংস্থা কেয়া কসমেটিকস লিমিটেড, কেয়া ইয়ার্ন মিলস লিমিটেড এবং এর প্রতিষ্ঠাতা আবদুল খালেক পাঠান ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্পত্তি।

বিপুল পরিমাণ ঋণের দায় পরিশোধ করতে কোম্পানির মালিকানা পরিবর্তন হচ্ছে বলে গুঞ্জন রয়েছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) কোম্পানির প্রতিটি শেয়ার সোমবার ৬ টাকা ৫০ পয়সায় হস্তান্তর হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top