স্টাফ রিপোর্টার: আলহাজ্ব টেক্সটাইল মিলসের উদ্যোক্তা বা পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ারধারণ পরিপালনের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের নিদেশ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। একইসঙ্গে কোম্পানিটিকে কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনাসহ সুশাসন নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি আলহাজ্ব টেক্সটাইল মিলসের পরিচালনা পর্ষদের কাছে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে বিএসইসি।
গত ২৩ আগস্ট ব্যবসায়িক অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে আলহাজ্ব টেক্সটাইল মিলসের পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে বৈঠক করে বিএসইসি। বৈঠকে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মো. সাইফুর রহমান, পরিচালক মোহাম্মদ আবুল হাসান, অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক মো. মেহেদী হাসান রনি ও সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মিনহাজ বিন সেলিম উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে আলহাজ্ব টেক্সটাইলস মিলসের চেয়ারম্যান মো. শফিকুল ইসলাম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মুহাম্মদ মিজানুর রহমান, স্বতন্ত্র পরিচালক ড. মুহাম্মদ সাইফুদ্দিন খান, স্বতন্ত্র পরিচালক মো. সেলিম, স্বতন্ত্র পরিচালক মো. জিকরুল হক ও কোম্পানি সচিব মো. সেলিম পারভেজ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে খোলামেলা আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আলহাজ্ব টেক্সটাইল মিলসের পরিচালনা পর্ষদকে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছে বিএসইসি। এর মধ্যে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ব্যাংকের সঙ্গে ঋণ নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে এবং এ বিষয়ে কমিশনকে হালনাগাদ তথ্য দিতে বলা হয়েছে।
একইসঙ্গে কোম্পানিটিকে প্রতি মাসে কমপক্ষে একটি করে পরিচালনা পর্ষদ সভা আয়োজন করার পরামর্শ দেওয়া হয়। পাশাপাশি কোম্পানিকে অবশ্যই সময়মত লভ্যাংশ ঘোষণা করতে বলেছে কমিশন।
এ ছাড়া কোম্পানির উদ্যোক্তা বা পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ারহোল্ডিং নিশ্চিত করে এ সংক্রান্ত অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছে কমিশন। আর কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি প্রতিটি ক্ষেত্রে সুশাসন নিশ্চিত করতে বলেছে বিএসইসি।
ধারাবাহিক আর্থিক অবস্থার অবনতির কারণে আলহাজ্ব টেক্সটাইল মিলসের ২০১৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে নেমে আসে। দীর্ঘ দুই বছর এক ক্যাটাগরিতে থেকে উন্নতি হয়নি। তৎকালীন কোম্পানির উদ্যোক্তা বা পরিচালকরা মাত্র ১২.৭৮ শতাংশ শেয়ার ধারণের মাধ্যমে বিএসইসির সর্বনিম্ন ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের নির্দেশনা ভঙ্গ করেন।
ফলে ওই সময়ে ৮৭.২২ শতাংশ শেয়ারধারণ করেও সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা দুই হিসাব বছর লভ্যাংশ পায়নি। এরই ধারাবাহিকতায় বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনা করে কমিশন আলহাজ্ব টেক্সটাইল মিলসের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে।
২০২১ সালের ২৮ জানুয়ারি বিএসইসির মনোনীত ওই চার জন পরিচালক আলহাজ্ব টেক্সটাইল মিলসে পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদের যোগদান করেন। স্বতন্ত্র পরিচালকরা হলেন- বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. শফিকুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এফ এম আব্দুল মঈন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সাইফুদ্দিন খান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) সহযোগী অধ্যাপক মিলিতা মেহজাবিন।
জনতা ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ইন প্রোসেস) মো. জিকরুল হক ও বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেটের সিনিয়র ফ্যাকাল্টি মেম্বার মো. সেলিমকে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে মনোনয়ন দেয় বিএসইসি। নতুন দুই জনের মধ্যে মো. জিকরুল হক কোম্পানিটির স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে ড. মিলিতা মেহজাবিনের স্থলাভিষিক্ত হন।
আর মো. সেলিমকে নতুন করে কোম্পানিটির স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এর ফলে কোম্পানিটিতে বিএসইসি কর্তৃক মনোনীত স্বতন্ত্র পরিচালকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে পাঁচ জন।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ১৯৮৩ কোম্পানিটি বর্তমানে ‘বি’ ক্যাটাগরির, পরিশোধিত মূলধন ২২ কোটি ২৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা। সেই হিসাবে কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ২ কোটি ২২ লাখ ৯৮ হাজার ৫৪৯টি।
এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে ২৫.৬৩ শতাংশ, সরকারের হাতে ০.০১ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ২১.৬৯ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৫২.৬৭ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) কোম্পানিটির শেয়ার সর্বশেষ ১৩৪.৫০ টাকায় লেনদেন হয়েছে।
উল্লেখ্য, বিক্রয় পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় ২০১৯ সালের ১০ অক্টোবর কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে। কারখানা বন্ধ থাকায় শ্রম আইন ১৬ (৭) ধারার অনুবলে ২০ (২) ক ধারা মতে শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়েছে।