সিনিয়র রিপোর্টার: দেশের পুঁজিবাজারে ওটিসি মার্কেটে তালিকাভুক্ত ওষুধ খাতের কোম্পানি বাংলা প্রসেস ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার লেনদেন হচ্ছে ১০৯ টাকা ৭০ পয়সায়। অথচ এই কোম্পানির কোনো অস্তিত্ব নেই।
তদন্তকারীরা রাজধানীর তেজগাঁও শিল্প এলাকায় গিয়ে কোম্পানির কারখানার কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাননি। পরে কোম্পানির মতিঝিলের মূল অফিসে গিয়ে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন যে সেটিও কয়েক বছর ধরে তালাবদ্ধ।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সম্প্রতি এক চিঠিতে বাংলা প্রসেস ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে এসব বিষয়ে জবাব দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
বিএসইসি বলছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থার একটি তদন্ত দল সরেজমিন গিয়ে দেখতে পেয়েছে তেজগাঁও শিল্প এলাকায় উল্লেখ করা ঠিকানায় কোম্পানির কোনো কারখানা নেই। সেখানকার লোকজন তদন্ত দলকে জানিয়েছেন, ১৫ থেকে ২০ বছর আগে এখানে বাংলা প্রসেস ইন্ডাস্ট্রিজের কারখানা ছিল। এখন সেটির কোনো অস্তিত্ব নেই।
তদন্তকারীরা এরপর কোম্পানির মতিঝিলের মূল অফিসে যান। সেখানে কোম্পানির সাইনবোর্ড পাওয়া গেলেও অফিসটি তালাবদ্ধ পাওয়া গেছে। সেখানকার লোকজনও তদন্ত দলকে জানিয়েছেন যে কয়েক বছর ধরে এই অফিস এভাবে বন্ধ অবস্থায় রয়েছে।
তদন্তকারী দলের প্রতিবেদন পাওয়ার পর বাংলা প্রসেস ইন্ডাস্ট্রিজের কাছে জমির বর্তমান মালিকানার কাগজপত্র চেয়ে পাঠিয়েছে বিএসইসি। কোম্পানিটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে দেশের পুঁজিবাজারে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করা হয়েছিল কি না তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছে।
বিএসইসি আরও জানতে চেয়েছে, বাংলা প্রসেস ইন্ডাস্ট্রিজ আইপিওর মাধ্যমে তুলে সেই টাকা কীভাবে কোথায় ব্যবহার করেছে। আর বর্তমানে কোম্পানিটির কী পরিমাণ ঋণ রয়েছে।
বাংলা প্রসেস ইন্ডাস্ট্রিজ বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ১৯৮৫ সালে। কিন্তু ২০১৬ সালে কোম্পানিটি শেষ এজিএম করেছে। কোম্পানিটি ২০১৪ সাল থেকে নগদ লভ্যাংশ দেয়নি। এসব কারণে কোম্পানিটির পাঁচ বছরের আর্থিক তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছে বিএসইসি।
এ ছাড়া বারবার বলার পরও কেন কোম্পানিটি ওটিসি মার্কেট থেকে অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে যাওয়ার আবেদন করেনি তা-ও জানতে চেয়েছে বিএসইসি।
২০০৯ সালে বাংলাদেশের মূল পুঁজিবাজার থেকে তালিকাচ্যুত ও তালিকাবহির্ভূত কোম্পানির শেয়ার লেনদেনের জন্য ওটিসি মার্কেট চালু হয়। এরপর ২০২১ সালে ওটিসি মার্কেটকে অকার্যকর ঘোষণা করা হয়।
তখন ওটিসি মার্কেটে তালিকাভুক্ত ২৩টি কোম্পানিকে স্মল ক্যাপিটাল প্ল্যাটফর্মে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। আর ১৮টি কোম্পানিকে অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে (এটিবি) পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বাকি কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজার থেকে বের করে দেয়ার পরিকল্পনায় রাখা হয়।
বাংলা প্রসেস ইন্ডাস্ট্রিজ এটিবিতে যাওয়ার কথা থাকলেও তারা আবেদন করেনি। ১৯৯৭ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এ কোম্পানির শেয়ার বর্তমানে ওটিসি মার্কেটে লেনদেন হচ্ছে ‘এন’ ক্যাটাগরিতে।
পুঁজিবাজারে এই কোম্পানির আট লাখ শেয়ার রয়েছে। এর মধ্যে ৫১ দশমিক ২৮ শতাংশ আছে পরিচালকদের হাতে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে আছে ৭ দশমিক ২৬ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ৪১ দশমিক ৪৭ শতাংশ শেয়ার।
বাংলা প্রসেস ইন্ডাস্ট্রিজের বর্তমান বাজার মূলধন ৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। পরিশোধিত মূলধন ৮০ লাখ টাকা। আর রিজার্ভের পরিমাণ ৩৩ লাখ টাকা।