স্টাফ রিপোর্টার: সাম্প্রতিক সময়ে দেশের শেয়ারবাজারে কিছুটা মন্দাভাব দেখা যাচ্ছে। এ মন্দা বাজারেও হু হু করে বাড়ছে বিডিকম অনলাইনের শেয়ার দাম। কিছু বিনিয়োগকারীর কাছে অনেকটাই রূপকথার আলাদিনের চেরাগ হিসেবে দেখা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার। মাত্র ১২ কার্যদিবসেই কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে ৬৮ টাকায় লেনদেন শুরু হয়।
প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের এ দাম বাড়াকে অস্বাভাবিক বলছে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। এ জন্য ডিএসই থেকে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে একাধিকবার বার্তা প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু সেই সতর্কবার্তায় কোনো কাজ হচ্ছে না। বরং পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটছে কোম্পানিটির শেয়ার দাম।
কারসাজির মাধ্যমে কোনো বিশেষ চক্র কোম্পানিটির শেয়ার দাম এভাবে বাড়াচ্ছে বলে মনে করছেন শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা। তাদের অভিমত, বিডিকম অনলাইনের শেয়ার দাম যেভাবে বেড়েছে, তা কিছুতেই স্বাভাবিক হতে পারে না। এর পেছনে কারসাজি চক্র জড়িত থাকতে পারে। বিষয়টি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ক্ষতিয়ে দেখা উচিত। সেই সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের সতর্কতার সঙ্গে সার্বিক তথ্য যাচাই করে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ১২ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটির শেয়ার দাম ছিল ৩২ টাকা ১০ পয়সা। সেখান থেকে টানা বেড়ে ২৬ সেপ্টেম্বর লেনদেন শেষে দাঁড়িয়েছে ৬৪ টাকা ৭০ পয়সায়। অর্থাৎ অর্ধমাসের মধ্যে বা মাত্র ১২ কার্যদিবসে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়েছে ৩২ টাকা ৬০ পয়সা বা ১০১ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
অন্যভাবে বললে ১২ সেপ্টেম্বর কোনো বিনিয়োগকারী বিডিকমের ১০ লাখ টাকার শেয়ার কিনে ধরে রাখছে এখন তার বাজারমূল্য ২০ লাখ ১৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ ১০ লাখ টাকা অর্ধমাস খাটিয়েই লাভ পাওয়া যাচ্ছে ১০ লাখ ১৫ হাজার টাকা। এ যেন রূপকথার আলাদিনের চেরাগ!
কোম্পানিটির শেয়ারের এমন দাম বাড়ায় সম্প্রতি ডিএসই থেকে কোম্পানিটিকে নোটিশ পাঠানো হয়। ওই নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯ সেপ্টেম্বর বিডিকম কর্তৃপক্ষ ডিএসইকে জানায়, সম্প্রতি শেয়ারের যে অস্বাভাবিক দাম বেড়েছ এবং লেনদেন বেড়েছে তার জন্য তাদের কাছে অপ্রকাশিত কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই।
কোম্পানিটির দেওয়া এ তথ্যের ভিত্তিতে ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর দু’দফা ডিএসই থেকে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। তবে ডিএসইর সেই সতর্কবার্তা কোম্পানিটির শেয়ার দাম বৃদ্ধির প্রবণতা রুখতে পারেনি। বরং ডিএসইর সতর্কবার্তা প্রকাশের পর প্রতিটি কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়েছে।
শেয়ারের এমন দাম বাড়া কোম্পানিটি ২০০২ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। সর্বশেষ ২০২১ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত বছরের জন্য কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ৫ শতাংশ গদ এবং ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দিয়েছে। তার আগে ২০২০ সালেও কোম্পানিটি একই হারে লভ্যাংশ দেয়। তবে ২০১৯ সালে ৬ শতাংশ নগদ ও ৬ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দিয়েছিল কোম্পানিটি।
৫৭ কোটি ৮ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের এ কোম্পানিটির শেয়ার সংখ্যা ৫ কোটি ৭০ লাখ ৮৬ হাজার ৫০০টি। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ আছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। বাকি শেয়ারের মধ্যে ৬৪ দশমিক ৪০ শতাংশ শেয়ার আছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ৫ দশমিক ৬০ শতাংশ। বিদেশিদের কাছে কোম্পানিটির কোনো শেয়ার নেই।
কোম্পানিটির শেয়ারের এ দাম বৃদ্ধির প্রবণতা দেখে ডিএসইর এক সদস্য বলেন, যেভাবে বিডিকম অনলাইনের শেয়ার দাম বাড়ছে, তাতে মনে হচ্ছে কোনো বিশেষ চক্র এর পেছনে রয়েছে। বিশেষ চক্রের ভূমিকা ছাড়া কোনো কোম্পানির শেয়ার দাম এভাবে বাড়ার কথা না। মাত্র ১২ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। সেইসঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের গতি।
তিনি বলেন, এমনও হতে পারে কোনো বিশেষচক্র নিজেদের মধ্যে লেনদেন করে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়াচ্ছে। এভাবে লেনদেনের মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা চলছে। আমাদের বাজারে সাধারণ বিনিয়োগাকারীদের মধ্যে একটা প্রবণতা আছে, যখন কোনো কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ে এবং লেনদেন বেশি হয়, তখন তথ্য যাচাই-বাছাই ছাড়াই ওই কোম্পানির শেয়ার বিনিয়োগ করে। দ্রুত মুনাফার আশায় অতিরিক্ত দামে শেয়ার কিনে অনেকে লোকসানের মধ্যে পড়েন।
ডিএসইর আর এক সদস্য বলেন, বিডিকম অনলাইন এমন কোনো প্রতিষ্ঠান না বা এমন কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি, যে এভাবে শেয়ার দাম হু হু করে বাড়বে। এখানে স্পষ্ট কোনো বিশেষচক্র কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়াচ্ছে। এখন বাড়তি দামে শেয়ার কিনে কোনো বিনিয়োগকারী লোকসান করলে তার দায়ভার, তাকেই নিতে হবে।
তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বিষয়টি বিএসইসির দেখা উচিত। কোনো চক্র সিরিজ লেনদেনের মাধ্যমে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়ালে বিএসইসির উচিত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।