সকল মেনু

‘সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে’

সিনিয়র রিপোর্টার: সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে কৃষিক্ষেত্র। গ্রামের মানুষ আরো ক্ষতির মুখে পড়বে। কারণ দেশের ৬০ থেকে ৭০ ভাগ মানুষ দরিদ্র ও তারা কৃষির ওপর নির্ভরশীল। তাই কৃষিকে সর্বপ্রথম রক্ষা করতে হবে। এটাই প্রথম চ্যালেঞ্জ। কৃষির সঙ্গে অন্য খাতগুলোকেও রক্ষায় মোকাবিলা করতে হবে।

গাজীপুরে ‘সিসিডিবি ক্লাইমেট সেন্টার’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে শনিবার দুপুরে (১ অক্টোবর) মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

২০১৪ সালে দেশের বেসরকারি সংস্থা খ্রিশ্চিয়ান কমিশন ফর ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ (সিসিডিবি) ৫৭ একর জমির ওপর এই সেন্টারের নির্মাণকাজ শুরু করে। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের উত্তর পেলাইদ গ্রামে ৮ বছর নির্মাণকাজ শেষে শনিবার সেন্টারের উদ্বোধন করা হয়।

বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১১টি দেশের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক সংস্থার ৬০ জন প্রতিনিধি এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

সেন্টারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন গাজীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন সবুজ, সিসিডিবি ক্লাইমেট অ্যাডভাইজারি বডির কো-চেয়ার অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত, সিসিডিবি কমিশনের চেয়ারম্যান ডেভিড এ হালদার, সিসিডিবির নির্বাহী পরিচালক মিস জুলিয়েট কেয়া মালাকার, সিসিডিবি ক্লাইমেট অ্যাডভাইজারি বডির সদস্য ড. সালিমুল হক, সিসিডিবি ক্লাইমেট চেঞ্জ প্রোগ্রামের প্রধান মো. ফয়েজুল্লাহ তালুকদারসহ অনেকে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সিসিডিবি ক্লাইমেট সেন্টারে বাংলাদেশের ৫টি জলবায়ু ঝুকিঁপূর্ণ উপকূলীয় এলাকা, হাওর, চর, খরা এবং পাহাড়ী এলাকার প্রতিরুপ তৈরী করা হয়েছে। ৫৭ একর এলাকাজুড়ে নির্মিত সিসিডিবি ক্লাইমেট সেন্টারে ৯০টি জলবায়ু অভিযোজন ও হ্রাসকরণ কার্যক্রমের প্রদর্শনীও চলছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব প্রশমনে বিভিন্ন টেকনোলজি ব্যবহার, জলবায়ু অভিযোজন পদ্ধতি এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানীর ব্যবহার নিয়ে শিখন গবেষণার হাব তৈরি করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষিখাত। যেখানে ৪০ শতাংশের বেশি মানুষ কৃষিতে যুক্ত। গ্রামে বসবাস করা ৭০ শতাংশ মানুষ জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে পড়বে। তাই সর্বপ্রথম কৃষিকে রক্ষা করার তাগিদ দেন ড. আব্দুর রাজ্জাক।

কৃষিকে রক্ষা করে উৎপাদনশীলতা বজায় রাখতে পারলে ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলেন তিনি।

মন্ত্রী বলেন, জলবায়ুর কারণে বিশ্বের যে কয়টি দেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।দেশের অন্য খাতগুলোর মধ্যে কৃষি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। সেই ক্ষতি এড়াতে আরও আগে থেকেই কাজ শুরু করেছেন দেশের বিজ্ঞানীরা। লবণ, খরা ও বন্যাপ্রবণ এলাকার জন্য ফসলের বীজ উৎপাদনের জন্য কাজ করছেন তারা।

উদ্বোধনী অনষ্ঠানে গাজীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন সবুজ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সারা বিশ্বে এক ধরনের পরিবর্তনের প্রভাব দেখা যাচ্ছে। সেই দিক বিবেচনায় সিসিডিবির এই জলবায়ু পরিবর্তন সেন্টার দক্ষিণ এশিয়ারসহ সারা বিশ্বে প্রভাব ফেলবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য যারা দায়ী যেসব দেশ তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে ক্ষতিপূরণ আদায় ও তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার দাবি জানান সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন সবুজ।

সিসিডিবি ক্লাইমেট সেন্টারটি সময়োপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হিসেবে উল্লেখ করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস প্রফেসর এবং সিসিডিবির উপদেষ্টামণ্ডলীর কো-চেয়ার ড. আইনুন নিশাত।

তিনি বলেন, বর্তমানে জলবায়ুর অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যখন বৃষ্টি হওয়ার কথা; তখন বৃষ্টি হচ্ছে না। আবার যখন হচ্ছে; তখন হওয়ার কথা না। জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে পৃথিবীর ১৯৬টি দেশ নড়েচড়ে বসেছে। এক্ষেত্রে মূল বিষয় হচ্ছে দায়িত্ব নেবে কে? জলবায়ুর এ পরিবর্তনে ৩০ বছর পরে খাদ্য উৎপাদন অনেকাংশে কমে যাবে। বিশেষ করে ধান, গম ও আলুর উৎপাদন কমবে।

সভায় এই পানি বিশেষজ্ঞ বলেন, বাংলাদেশে একদিকে বৃষ্টি হয় অন্যদিকে জলোচ্ছ্বাস। ফলে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে লবণাক্ত করে ফসলের মাঠ। বরিশালের মতো নগরীতেও এখন পানি উঠে। এটি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। জলবায়ুর এই করাল গ্রাস থেকে মুক্তি পেতে হলে এখনই আমাদের সময়োপযোগী প্রযুক্তি নিতে হবে।

জলবায়ু বিজ্ঞানী ড. সালিমুল হক বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এখন শুধুমাত্র এশিয়ার বিষয় নয়, এটি সারা বিশ্বের সমস্যা। গত ৩৬ ঘণ্টায় ফ্লোরিডায় যে হারিকেন আঘাত হেনেছে, তা এখন গ্লোবাল প্রোব্লেম।

জলবায়ু কেন্দ্রের পরামর্শক ও ক্লাইমেট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড অ্যাডভাইসের পরিচালক থমাস র্হিশ বলেন, জলবায়ু ইস্যুতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়ার সময় এখনই। বাংলাদেশের প্রয়োজনীয়তার কথা চিন্তা করে এই কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

দাতা সংস্থার অর্থায়ন বন্ধ হয়ে গেলে প্রতিষ্ঠানটি কিভাবে চলবে নিউজজি এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দাতা সংস্থা সব সময় অর্থ দেয় না- এটা ঠিক। তবে দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা করে প্রকল্পটি সাজানো হয়েছে। এখানে গবেষকদের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে লোকজন এসে প্রশিক্ষণ নেবেন। তাদের কাছ থেকে উপার্জন করা হবে। ব্যয় মেটানোর জন্য টেকসই নানা ধরনের পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।

সিসিডিবির কর্মকর্তারা মনে করেন, পার্কটি সব প্রতিষ্ঠান ব্যবহার বা প্রশিক্ষণ নিতে পারবে। এছাড়া জলবায়ুর অভিঘাত মোকাবেলায় যেকোনো ধরনের প্রযুক্তি ও অনুশীলন নিয়ে গবেষণা করার সুযোগ রয়েছে। টেকসই হলে যে-কারো প্রযুক্তি বা উদ্ভাবন জায়গা পাবে এখানে।

অনুষ্ঠানে সিসিডিবির নির্বাহী পরিচালক জুলিয়েট কেয়া মালাকার বলেন, কেন্দ্রটি আমরা প্রতিষ্ঠা করলেও এটি আসলে সবার। জলবায়ু কেন্দ্রটি আমরা তৈরি করেছি; কিন্তু এটি সমৃদ্ধ করার দায়িত্ব জলবায়ু ইস্যুতে কাজ করা সব প্রতিষ্ঠানের। এই কেন্দ্রটি সম্পন্ন করতে দেশি-বিদেশি বহু মানুষ ও প্রতিষ্ঠানের অবদান রয়েছে। সবার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন সিসিডিবির সাবেক নির্বাহী পরিচালক জয়ন্ত অধিকারী, ক্লাইমেট চেঞ্জ প্রোগ্রামের প্রধান মো. ফয়েজুল্লাহ তালুকদারসহ বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার দুজন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ।

বেলনু ও পায়রা উড়িয়ে সিসিডিবি ক্লাইমেট সেন্টারে উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশসহ ভারত, নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, লাওস, ফিলিপাইন, শ্রীলংকা, জার্মানি ও অস্ট্রেলিয়ার ৬০ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top