Homeঅনুসন্ধানী প্রতিবেদনসিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজে অন্তদ্বন্দ্ব

সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজে অন্তদ্বন্দ্ব

সিনিয়র রিপোর্টার: কোম্পানি থেকে অবৈধভাবে অর্থ আত্মসাৎ, চেয়ারম্যানকে প্রাণনাশের হুমকি ও পদত্যাগে বাধ্য করে বেআইনিভাবে নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগে অভিযোগ উঠেছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক ও তার ছেলের বিরুদ্ধে।

কোম্পানির পদত্যাগী চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান এসব অভিযোগ উল্লেখ করে কোম্পানি ও নিজের প্রাণ রক্ষায় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

তিনি যার দিকে আঙ্গুল তুলেছেন, তিনি হলেন ঋণ জালিয়াতি করে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়া পি কে হালদারের সহযোগী সিদ্দিকুর রহমান এবং তার ছেলে কোম্পানির বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়াজ রহমান সাকিব।

বিএসইসির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, কমিশন এ বিষয়ে অনুসন্ধান করছে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য যেকোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জানতে চাইলে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। বিস্তারিত না জেনে আমার কমেন্ট করা ঠিক হবে না।

চিঠিতে যে অভিযোগ : চিঠিতে আনিসুর রহমান জানান, সিদ্দিকুর রহমান কোম্পানির এমডি ছিলেন। বিদেশে পালিয়েও তিনি কোম্পানি পরিচালনার চেষ্টা করছেন।

পি কে হালদারের সহযোগী হিসেবে দুর্নীতি দমন কমিশন সিদ্দিকুরের বিরুদ্ধে মামলা করলে তিনি লুকিয়ে ভারত হয়ে পর্তুগালে চলে যান।

তিনি দেশত্যাগের পর কোম্পানির পরিচালক হিসেবে আনিসুর রহমান হাল ধরেন। তিনি চেয়ারম্যান পদে সব ব্যাংক ও অফিসে সিগনেটরি হিসেবে কাজ করতে থাকেন।

চিঠিতে বলা হয়, সিদ্দিক কোম্পানি থেকে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা নিয়ে গেছেন। আরও নিয়ে যেতে চাচ্ছেন। সিমটেক্স পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হওয়ায় অবৈধভাবে টাকা নেয়ায় বারণ করলে বাধ সেধেছেন সিদ্দিকুরের ছেলে নিয়াজ রহমান সাকিব যিনি এখন কোম্পানির এমডি।

বিএসইসিকে দেয়া চিঠিতে আনিসুর রহমান বলেন, সাকিবও সিদ্দিকুরের সঙ্গে বিদেশে থাকত। সে হঠাৎ দেশের এসে আমাকে হুমকি দিয়ে পরিচালক ও চেয়ার‌ম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করতে বলে। আমি পদত্যাগ না করায় আমাকে জীবনের হুমকি দিয়েছে। আমি আইন অনুযায়ী আপনার আশ্রয় চাই।

আনিসুরের দাবি, আরজেএসসির নথি এবং আদালতের আদেশ অনুযায়ী তিনি এখনও সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ারহোল্ডার পরিচালক এবং চেয়ারম্যান।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সম্প্রতি এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদার এবং ফাস ফাইন্যান্সের সাবেক চেয়ারম্যান মো. সিদ্দিকুর রহমানের বিরুদ্ধে বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে কয়েকটি মামলা করে।

বর্তমানে ভারতের কারাগারে থাকা পিকে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ পুলিশ সংস্থাকে (ইন্টারপোল) চিঠি দিয়েছে দুদক।

সিদ্দিকুর রহমানকেও দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে ১১টি মামলা করা হয়। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট তার সব শেয়ার ও অ্যাকাউন্ট জব্দ করে।

আনিসুর রহমান বলেন, সিদ্দিকুরের নির্দেশে তার ছেলে দেশে ফিরে হঠাৎ করেই চলতি বছরের ১৭ আগস্ট কোনো সরকারি আদেশ ছাড়াই মেজর জেনারেল (অব.) সরোয়ার হোসেনকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেন।

আমাকে পরিচালক পদ থেকে বাদ দিতে হলে বিএসইসির মতামত ও অনুমতি নেয়া প্রয়োজন। তা তারা নেয়নি।

তিনি জানান, গত ২৯ আগস্ট লে. কর্নেল শামসকে নিয়ে তার স্ত্রী সারোয়ারের মিরপুর ডিওএইচএসের বাসায় গেলে এ বিষয়ে আলোচনা করতে চাননি। ৩১ আগস্ট কারখানায় যেতে বলেন। সেখানে গেলে তার সঙ্গে দেখা না করে শ্রমিকদের লেলিয়ে দেন।

ঘটনার পরপরই সাকিবদের তাদের বিরুদ্ধে সাভার ও পল্লবী থানায় দুটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

কোম্পানিকে বাঁচাতে বিএসইসির হস্তক্ষেপ কামনা করে আনিসুর বলেন, আরজেএসসি ও কোর্ট থেকে সমাধান না হওয়া পর্যন্ত সকল প্রকার নথিভুক্তির কাজ বন্ধ রাখতে ও আমাকে পদে বহাল রাখতে সাহায্য চেয়ে বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।

তবে অভিযোগের বিষয়ে জানতে একাধিকবার চেষ্টা করেও সাকিবের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

২০১৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের কারখানা ঢাকার সাভারে।

কোম্পানির আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। গত দুই বছর যথাক্রমে ৫ ও ৪ শতাংশ বা শেয়ার প্রতি ৫০ ও ৪০ পয়সা করে নগদ লভ্যাংশ পেয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

কোম্পানির শেয়ারদর বর্তমানে ১৭ টাকা ৬০ পয়সা। গত এক বছরে ১৪ টাকা ৮০ পয়সা থেকে ২৪ টাকা ৮০ পয়সা পর্যন্ত উঠানামা করেছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সাত দিনের সর্বাধিক পঠিত