Homeঅর্থনীতি‘বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি সংহত’

‘বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি সংহত’

স্টাফ রিপোর্টার : অর্থনৈতিক সংকটে বাংলাদেশকে অত্যন্ত ‘রেসিলিয়েন্ট’ হিসেবে আখ্যায়িত করে অর্থনীতিবিদ এবং পলিসি মেকাররা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রোডাক্ট ডাইভারসিফিকেশনের পাশাপাশি মার্কেট ডাইভারসিফিকেশন, অধিক হারে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি (এফটিএ) ও অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) স্বাক্ষর, সোলার পাওয়ার উৎপাদন ও গ্যাস এক্সপ্লােরেশন বাড়ানো, বৈশ্বিক শ্রমবাজারে আরও অধিক হারে দক্ষ কর্মীর যোগান দেয়ার উপর গুরুত্বারোপ করেন।

চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ‘তেমন কোনো ঝুঁকি নেই, বরং তা সংহত অবস্থায়’ আছে বলে মনে করেন।

শনিবার ‘বিশ্বমন্দার চ্যালেঞ্জ ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে তারা আরও বলেছেন, আমদানি, রপ্তানি, রেমিট্যান্স এবং শ্রমিক যাওয়ার হার সবমিলিয়ে শ্রীলংকার সাথে বাংলাদেশের তুলনা অপ্রাসঙ্গিক। এডিটরস গিল্ড বাংলাদেশ ঢাকা গ্যালারিতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

পোস্ট-কোভিড পরিস্থিতি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, জ্বালানী ও খ্যাদ্যমূল্যের বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিকভাবে ডলারের ২০% এপ্রিসিয়েশনের কারণে বাংলাদেশের ব্যালেন্স অব পেমেন্ট (বৈদেশিক ভারসাম্য) এ একটা সমস্যা দেখা গেছে। এটি আমদানি উদ্ভুত সমস্যা যা আমাদের মুদ্রাস্ফীতি বাড়িয়েছে।

কিন্তু আমাদের বড় সমস্যা হয়ে গেছে কারেন্ট একাউন্ট ডেফিসিট (বর্তমান হিসাব ঘাটতি)” বলেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) চেয়ারম্যান জায়দী সাত্তার।

তবে আমার প্রাক্কলন একটু অপটিমিস্টিক। যদি আমদানির চলমান প্রক্রিয়া কার্যকরী হয় এবং সেটা যদি ৮০ বিলিয়ন ডলারে রাখা যায় (গতবছর ৮২ বিলিয়ন ডলার), রপ্তানি ৫৫ বিলিয়নে রাখতে পারি, এবং রেমিট্যান্স যদি ২৪-২৫ বিলিয়ন ডলারে রাখা যায়, তাহলে কিন্তু আমরা কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ডেফিসিট থেকেও সারপ্লাসে চলে যেতে পারি।

তাহলে ব্যালেন্স অব পেমেন্টের যে ধাক্কা এসেছে তা থেকে আমরা সরে আসব এবং রিজার্ভ একটু বাড়তে পারে, যোগ করেন তিনি।

জায়দী সাত্তার বলেন, বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক কারণেও কিছু রপ্তানি বাংলাদেশের দিকে আসছে। যেমন চীন। তাই এটাও একটা আশার দিক আমাদের রপ্তানি বাড়ানোর জন্য।

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ সেলিম রায়হান বলেন, বর্তমানে বিশ্বমন্দার যে চ্যালেঞ্জ সেটা আমাদের প্রবৃদ্ধিকে কমিয়ে দেবে।

কিছুটা প্রবৃদ্ধি (জিডিপি) কম মেনে নেয়াটাই বাস্তবতার নিরিখে ঠিক আছে। যদি জিডিপি ৭.৫% থেকে নেমে ৫.৫% ও হয়, তাহলে সেটা বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষিতে উচ্চ প্রবৃদ্ধিই হবে।

নানান চ্যালেঞ্জের মধ্যেও ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানির ক্ষেত্রে কিছুটা আশার দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের প্রধান রপ্তানি পণ্য ইউরোপ এবং নর্থ আমেরিকার কনসিউমারদের বেসিক নিডসের মধ্যে পড়ে। তাই এটা একটা আশার দিক।

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেছেন, একমাসে রেমিট্যান্স এবং রপ্তানি কমেছে। তবে একমাসের তথ্য দিয়ে বিশ্লেষণ করাটা খুব ঝুকিপূর্ণ, ধারাটা পরিস্ফুট হয় না।

অন্তত একটা প্রান্তিক দেখলে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) দেখা যায় যে, রেমিট্যান্স ৪.৮% বেড়েছে। গতবছরে রেমিট্যান্স ১৯.৪৪% কমে গিয়েছিল। এবার প্রতিমাসে ২ বিলিয়ন ডলার করে আসছে। এভাবে বাড়তে থাকলে ২৪-২৫ বিলিয়ন ডলার বছর শেষে পাব।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, প্রায় এক মিলিয়ন লোক গত অর্থবছরে বিদেশে গিয়েছে। তেলের মন্দায় মধ্যপ্রাচ্যের অর্থনীতি যখন চাঙ্গা তখন আরও লোক সামনে যাবে।

গতবছর একইসময়ের তুলনায় রপ্তানি এই প্রান্তিকে বেড়েছে ১৩.৭৮%।  আমদানি কমেছে প্রায় ১৭%। তারমানে ডলারের চাপটা কমে আসবে।

এফডিআই গত কোয়ার্টারে এসেছে ৩.৬৩ বিলিয়ন ডলার। যা গতবছর একইসময়ে এসেছিল আড়াই বিলিয়ন ডলার। তাই এটাও ইতিবাচক, বলেন তিনি।

বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ-এর সঙ্গে এক্সটারনাল বোরোয়িং’য়ে ইতিবাচক অগ্রগতির ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, এইসব বোরোয়িংয়ে বেল আউটের প্রশ্নই উঠে না, বরং আমাদের অবস্থান অনেক সংহত।

সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী বলেন, এতবছর ধরে আমরা শুধু প্রোডাক্ট ডাইভারসিফিকেশনের কথা বলে আসছি, মার্কেট ডাইভারসিফিকেশনের কথা বলি নাই। এখন চীন, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, ল্যাটিন আমেরিকা এবং ভারতে রপ্তানি বাড়ানোর সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।

আমাদের ঋণ পরিস্থিতি ভাল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্যসচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমরা ঋণ নিয়ে ঘি খাই নাই। বিগত ১৩ বছরে ঋণ করে পরিশোধে কখনো ডিফল্ট করে নাই।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের এম চৌধুরী, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম ও বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক আইনুল ইসলাম প্রমুখ।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সাত দিনের সর্বাধিক পঠিত