সকল মেনু

‘চেক জমা দিয়ে শেয়ার কেনা যাবে না’ নির্দেশনায় পুঁজিবাজারে চাপ

সিনিয়র রিপোর্টার: চেক জমা দিয়ে শেয়ার কেনা যাবে না- এমন নির্দেশনা না পাল্টালে পুঁজিবাজার আরও নড়বড়ে হবে বলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিকে সতর্ক করে দিয়েছে স্টক ব্রোকাররা।

টাকা নগদায়ন হওয়ার আগ পর্যন্ত শেয়ার কিনতে না দেয়ার নির্দেশনা জারির পর থেকে পুঁজিবাজারে ভাটার টান পড়ার মধ্যে রীতিমতো চিঠি দিয়ে চাপ দেয়া হয়েছে। বিএসইসির পাশাপাশি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ডিএসইকেও চিঠি দেয়া হয়েছে।

বিএসইসি বলছে, এটি এটি নতুন কোনো কিছু নয়। পুঁজিবাজারের মূল আইনে প্রথম থেকেই ছিল। এই আইনের আওতায় অনেক ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে।

ব্রোকাররা বলছেন, এটি আসলে নতুন করে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ২০১০ সালের পর তুলে দেয়া হয়েছিল। আর এখন বাস্তবায়ন করতে গেলে বিভিন্ন প্রযুক্তিগত কারণে সেটা সম্ভব নয়।

গত ১১ অক্টোবর স্টক ব্রোকারদের প্রতি জারি করা বিএসইসির এক নির্দেশনায় বলা হয়, চেকের টাকা নগদায়নের আগে তা দিয়ে শেয়ার কেনা যাবে না। নির্দেশনাটি আপাতদৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ মনে না হলেও সেটি পুঁজিবাজারে বড় চাপ তৈরি করেছে।

এর পরের কর্মদিবসে লেনদেন কয়েক মাস পর নেমে আসে হাজার কোটি টাকার নিচে। দর হারাতে থাকে বিপুল সংখ্যক কোম্পানি।গত কয়েক দিন ধরে পুঁজিবাজার ক্রমাগত দরপতনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এর একটি কারণ হিসেবে উঠে এসেছে বিএসইসির চেক সংক্রান্ত নির্দেশনা

এরপর ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) পক্ষ থেকে বিএসইসি ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) চিঠি পাঠানো হয়।

এতে বলা হয়েছে, ২০১০ সালের ৬ ডিসেম্বর একবার নির্দেশনা এসেছিল, গ্রাহক থেকে ব্রোকারেজ হাউসগুলো যে চেক পাবে, তা আগে নগদ টাকায় পরিণত করতে হবে। অর্থাৎ চেকের টাকা যখন ব্রোকারেজ হাউসের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হবে। তখন তারা সেই টাকা দিয়ে বিনিয়োগকারীকে শেয়ার কিনে দিতে পারবে।

এই সিদ্ধান্তের পর পুঁজিবাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুই দিন পর ২০১০ সালের ৮ ডিসেম্বর ওই নির্দেশনা তুলে দেয়া হয়। এখন আবার নতুন করে নগদ টাকায় শেয়ার কেনার বিষয়টি বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এটির প্রভাব দেশের পুঁজিবাজারের ওপরে ভালো হবে না। তাই এই আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়েছে ডিবিএ।

চিঠিতে বলা হয়েছে, দেশে রিয়েল টাইম ব্যাংকিং ব্যবস্থা নেই। ফলে কখনো কখনো দেখা যায় যে গ্রাহক আগে চেক জমা দেন। সেই চেকের বিপরীতে গ্রাহককে শেয়ার কিনে দেয় ব্রোকারেজ হাউসগুলো। এই নিয়মে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। এ ছাড়া সব গ্রাহক এই সুবিধা পান না। যারা ভালো গ্রাহক, তারাই শুধু এই সুবিধা পান। যেহেতু এর ঝুঁকি ব্রোকারেজকে নিতে হয়।

চিঠিতে আরও বলা হয়, এই নিয়ম বাস্তবায়ন করতে গেলে দেশের পুঁজিবাজারের লেনদেন কমে যাবে। বাজারে সূচক কমে গেলে বিনিয়োগকারীদের একটি বড় অংশ বাজার থেকে তাদের বিনিয়োগ তুলে ফেলতে পারেন। ফলে দীর্ঘমেয়াদে বাজার মন্দা দেখা দিতে পারে। তাই এই আইনের বাস্তবায়নের ওপর স্থগিতাদেশ দেয়া দরকার।

ডিবিএর সাবেক সভাপতি ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, বিএসইসি যেটা চাইছে, সেটি প্রযুক্তিগত কারণেই সম্ভব নয়। ২০১০ সালে একবার যেটি করার চেষ্টা করে বাজারে নেতিবাচক প্রভাবের কারণে পেছানো হয়েছে, সেটি এবার কেন করতে যাচ্ছে তাই তো বুঝলাম না। এমনিতেই পুঁজিবাজার নানা চাপে আছে। এর মধ্যে এই ধরনের নির্দেশনা বিনিয়োগকারীদের কাছে আরও নেতিবাচক বার্তা যাবে।

বিএসইসি কমিশনার আব্দুল হালিম বলেন, বিষয়টি খুব স্পষ্ট করে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের ১৬ ধারায় বলা আছে, কোনোভাবেই নগদ টাকা ছাড়া শেয়ার কেনা যাবে না। এটি কোনো দিন স্থগিত ছিল না। কোনো নোটিফিকেশন দিয়ে এটি কোনো দিন বন্ধ করা যায় না। এটির ব্যাপারে আমরা সব সময় ব্যবস্থা নিয়ে আসছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top