সকল মেনু

প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান নজরুলকে এবার অপসারণ

সিনিয়র রিপোর্টার: ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্সে ব্যাপক লুটপাট চালানোর অভিযোগে জেলে যাওয়া মো. নজরুল ইসলামকে এবার প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারণ করেছে বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।

রোববার (২৩ অক্টোবর) এ সংক্রান্ত চিঠি প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বরাবর পাঠানো হয়েছে। আইডিআরএ’র পরিচালক (উপসচিব) মো. জাহাঙ্গীর আলম সই করা এ চিঠির অনুলিপি সব বিমা কোম্পানিতেও পাঠানো হয়েছে।

আইডিআরএ সূত্রে জানা গেছে, আইন লঙ্ঘনের কারণে কেন নজরুল ইসলামকে প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারণ করা হবে না, তা জানতে চেয়ে চলতি বছরের ৪ অক্টোবর আইডিআরএ থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়।

এর প্রেক্ষিতে নজরুল ইসলাম কোনো ব্যাখ্যা দেননি। তবে প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের সিইও ব্যাখ্যা দেন। কিন্তু সেই ব্যাখ্যা আইডিআরএ’র কাছে সন্তোষজনক মনে হয়নি। এ কারণে নজরুল ইসলামকে প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইডিআরএ।

এ বিষয়ে প্রাইম ইন্স্যুরেন্সকে পাঠানো আইডিআরএ’র চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রাইম ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলামকে বিমাকারীর নিবন্ধন প্রবিধানমালা, ২০১৩ এর ৩ (২) (খ) প্রবিধানে বর্ণিত ফরম বীউনিক-খ এর ১৭ (ঘ) শর্ত লঙ্ঘনের কারণে কেন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানের পদ হতে অপসারণ করা হবে না, তার কারণ দর্শানোর জন্য গত ৪ অক্টোবর, ২০২২ তারিখে ৫৩.০৩.০০০০.০৫২.১১.০০২.২২.৫৮ নং স্মারকমূলে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়।

তবে মো. নজরুল ইসলাম নিজে ব্যাখ্যা না দিয়ে কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা কর্তৃক যে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে, তা সন্তোষজনক নয়।

এমতাবস্থায়, বিমাকারীর নিবন্ধন প্রবিধানমালা, ২০১৩ এর ৩(২) (খ) প্রবিধানে বর্ণিত ফরম বীউনিক-খ এর ১৭ (ঘ) শর্ত লঙ্ঘনের কারণে বিমা আইন, ২০১০ এর ৫০ ধারা মোতাবেক মো. নজরুল ইসলামকে প্রাইম ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে ২০ অক্টোবর ২০২২ তারিখ থেকে অপসারণ করা হলো- বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিমাকারীর নিবন্ধন প্রবিধানমালা ১৭ (ঘ)-তে ‘আদালত কর্তৃক দণ্ডিত হয়েছেন অথবা প্রতারণামূলক কাজের সঙ্গে জড়িত, অর্থনৈতিক অপরাধ ও অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত’ ব্যক্তি বিমা কোম্পানির উদ্যোক্তা/পরিচালক পদের জন্য নির্বাচিত বা মনোনয়ন বা পদ ধারণের অযোগ্য বিবেচিত হয়েছেন কি না তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

এদিকে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্সে ব্যাপক লুটপাট চালানোর অভিযোগে সম্প্রতি নজরুল ইসলামকে জেলে যেতে হয়েছে। গ্রাহকের ৮০০ কোটি টাকার ওপরে আত্মসাতের অভিযোগে নজরুল ইসলাম এবং ফারইস্ট লাইফের সাবেক পরিচালক এম এ খালেকের বিরুদ্ধে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে শাহবাগ থানায় (মামলা নং ১৫ (৯) (২২) একটি মামলা করা হয়। মামলার পর তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ।

এক সময় ভালো ব্যবসা করা ফারইস্ট লাইফের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন লুটপাটের তথ্য বেরিয়ে আসলে গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয় পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটিতে ১০ জন স্বতন্ত্র পরিচালকও নিয়োগ দেওয়া হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন ড. মুহাম্মদ রহমতউল্লাহকে চেয়ারম্যান করে নতুন পর্ষদে পরিচালক হিসেবে রাখা হয় মোহাম্মদ সানাউল্লাহ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের সিইও মোহাম্মদ সানাউল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও বিমা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব মো. মোফাজ্জল হোসেন, অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল গাজী মো. খালিদ হোসেন।

আরো আছেন- স্নেহাশীষ অ্যান্ড কোম্পানির পার্টনার স্নেহাশীষ বড়ুয়া, একাত্তর মিডিয়ার প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মোজাম্মেল হক, জি সেভেন সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান সাজেদুর রহমান, জনতা ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জিকরুল হক এবং নর্দান ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের সাবেক চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম চৌধুরীকে।

বিএসইসি থেকে এমন পদক্ষেপ নেওয়ার ১৫ দিনের মাথায় কোম্পানির সিইও পদ থেকে হেমায়েত উল্লাহকে বহিষ্কার করে বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ।

আইডিআরএ’র এ সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়, কোম্পানি পরিচালনার ক্ষেত্রে হেমায়েত উল্লাহর বিভিন্ন অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, আর্থিক অনিয়ম, বিমা পলিসি গ্রাহক ও বিমাকারীর স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর এবং নিয়ম পরিপন্থি কার্মকাণ্ডের তথ্য বিভিন্ন মাধ্যমে আইডিআরএ’র নজরে এসেছে। বিমা গ্রাহকদের অভিযোগসহ অনিয়মের তথ্য-প্রমাণ রয়েছে।

এছাড়া হেমায়েত উল্লাহর বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে নিজ ভোগদখলে রেখে এবং মিথ্য তথ্য সংবলিত সম্পদ বিবরণী দাখিলের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলা করেছে এবং তার বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এ সংক্রান্ত তথ্য কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) কাছে রয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

এরপর গত বছরের ২১ ডিসেম্বর হেমায়েত উল্লাহকে কোনো বিমা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ না দিতে নির্দেশ দেয় আইডিআরএ। সব বিমা কোম্পানির চেয়ারম্যান ও সিইও বরাবর পাঠানো এ সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়, ‘হেমায়েত উল্লাহ ২০১১ থেকে ২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে উক্ত বিমা কোম্পানিতে (ফারইস্ট ইসলামী লাইফ) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন।

তিনি বিমা আইন, ২০১০ ও বিমা আইনের বিভিন্ন বিধিবিধান অনুযায়ী কোম্পানি পরিচালনার জন্য দায়ী থাকবেন মর্মে তার নিয়োগপত্রে সুস্পষ্টভাবে শর্ত আরোপ করা হয়েছিল। কিন্তু দায়িত্বকালে কোম্পানিতে ব্যাপক অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে মর্মে সম্প্রতি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়। এজন্য তিনি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দায়ী।

জানা গেছে, ফারইস্ট লাইফের সাবেক পরিচালনা পর্ষদের সভার কার্যবিবরণীতে উল্লেখ করা আলোচ্যসূচি ও সিদ্ধান্তের ব্যত্যয় ঘটিয়ে এক্সট্রাক্ট বা প্রতিলিপি তৈরি ও ইস্যু করে কোম্পানির বিভিন্ন ব্যাংকে রাখা এমটিডিআর/আমানত সাবেক পরিচালক এম এ খালেক এবং সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম তাদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের লোনের বিপরীতে জামানত দিয়ে এবং ওই জামানত বাবদ কোম্পানির মোট এমটিডিআর ৮১৬ কোটি টাকা ব্যাংক কর্তৃক সমন্বয়ের মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে। এই এমটিডিআর হালনাগাদ মুনাফাসহ ১ হাজার ৩৩২ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে।

এই দুই সাবেক পরিচালক ও চেয়ারম্যান তাদের নিকট আত্মীয়দের মাধ্যমে কম মূল্যে জমি ক্রয় করে সেই জমি কোম্পানি বরাবর বেশি দামে বিক্রয় করে প্রায় ৬৬৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। পাশাপাশি বিভিন্ন স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ ও ঋণ দেওয়ার মাধ্যমে ২৮৭ কোটি টাকা এই পরিচালকরা আত্মসাৎ করেছে। এছাড়া কোম্পানির বিভিন্ন ক্রয় লেনদেনের মাধ্যমে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top