সকল মেনু

ঐতিহ্য ধরে রাখা জিকিউ বলপেন লভ্যাংশ পরিশোধ করতে পারবে?

শাহীনুর ইসলাম: চরম সংকটে থাকা জিকিউ বলপেন লিমিটেড লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। বিএনপির শীর্ষ নেতা ইকোনো কামালের কোম্পানির কর্তৃপক্ষ আলোচিত বছরের শেয়ারহোল্ডারদের ২.৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেবে। লোকসানে থাকা জিকিউ বলপেন বর্তমানে সিকিউরিটি বিজনেস করে আয় করছে।

বর্তমানে কোম্পানির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেই চরম সঙ্কটে রয়েছে, তার ওপরে লভ্যাংশ ঘোষণা কোম্পানির টিকে থাকার পথ আরো সংকীর্ণ করবে। সরকার পরিবর্তনের পর থেকে লোকসানে রয়েছে কোম্পানি। তবে ঘোষিত লভ্যাংশ পরিশোধ করতে পারবে কি না, তা নিয়ে শংসয় প্রকাশ করেছেন অনেক বিনিয়োগকারী।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা, সর্বশেষ বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি ২ টাকা ৬৫ পয়সা লোকসান দিয়েছে। আগের বছর শেয়ারপ্রতি ৭ টাকা ৫৬ পয়সা লোকসান হয়েছিল।

আগামী ২৯ ডিসেম্বর ডিজিটাল প্ল্যাটফরমের মাধ্যমে কোম্পানিটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) এবং রেকর্ড তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭ নভেম্বর।

১৯৮৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির পর জিকিউ বলপেন প্রায় ৩০ বছর ভালো ব্যবসা করে। তবে ২০১২ সালে রাজনীতিক পট পরিবর্তনের পরে নানামুখী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয় বিএনপি নেতা ইকোনো কামালের এই প্রতিষ্ঠাটি। বিভিন্ন কারণে ব্যবসা ভালো করতে না পারায় কোম্পানি মার্কেট শেয়ারে দর হারাতে শুরু করে।

গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিক লোকসান গুনছে কোম্পানিটি। তবে সম্প্রতি কোম্পানিটি তাদের মূল ব্যবসা ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এরই মধ্যে নতুন ধরনের পণ্য বাজারজাত করা হয়েছে।

 

২০১৫-১৬ হিসাব বছরে কোম্পানিটির বলপেন বিক্রি হয়েছিল ২২ কোটি ২৮ লাখ টাকা। তবে আগের বছরের তুলনায় পণ্য বিক্রি কমে যাওয়ায় কোম্পানির নিট লোকসান হয়েছিল ১ কোটি ৪ লাখ টাকা। ওই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ১.১৭ টাকা। সেই হিসাব বছরে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের ১২ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রদান করে।

২০১৬-১৭ হিসাব বছরে কোম্পানিটির বলপেন বিক্রি নেমে আসে ১০ কোটি ৭৪ লাখ টাকায়। তারপরেও ওই বছর কোম্পানিটির নিট মুনাফা হয়েছিল ১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। ওই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় ছিল ১.৬৬ টাকা। ওই বছর কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদান করেছিল।

২০১৭-১৮ হিসাব বছরে কোম্পানিটির বলপেন বিক্রি নেমে আসে ৭ কোটি ৯২ লাখ টাকায়। ফলে কোম্পানিটির নিট লোকসান হয় ৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। ওই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান দাঁড়ায় ৫.১২ টাকা। ওই বছরও কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদান করে।

২০১৮-১৯ হিসাব বছরে কোম্পানিটির বলপেন বিক্রি হয় ৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকার। সেই বছর কোম্পানির নিট লোকসান হয় ১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। ওই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান দাঁড়ায় ১.৭২ টাকা। ওই বছরও কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদান করে।

সর্বশেষ ২০১৯-২০ হিসাব বছরে কোম্পানিটির বলপেন বিক্রি নেমে আসে ৭ কোটি ৩২ লাখ টাকায়। সেই সময় কোম্পানিটির নিট লোকসান হয় ৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা। তখন কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান দাঁড়ায় ৭.৬৪ টাকা। ওই বছর কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদান করে। গত পাঁচ বছরের মধ্যে কোম্পানিটির সবচেয়ে বেশি আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়েছে আলোচ্য হিসাববছরে।

জিকিউ বলপেন শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ১৯৮৬ সালে। ৫০০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনের কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন রয়েছে ৮ কোটি ৯২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। ‘এ’ ক্যাটাগিরির কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৮৯ লাখ ২৮ হাজার ৯১টি।

এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে ৪১.৮৮ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ১.৪৭ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে ০.০৫ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ৫৬.৬০ শতাংশ। সোমবার (১১ অক্টোবর) ডিএসইতে জিকিউ বলপেনের শেয়ার সর্বশেষ ১২৪.১০ টাকায় লেনদেন হয়েছে।

আমার স্টক থেকে নেয়া গ্রাফ

রোববার (৩০ অক্টোবর) ডিএসইতে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি ছিল ১০২ টাকা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top