সকল মেনু

হুন্ডিতে লেনদেন করায় ২৩০ এমএফএস থেকে ক্যাশ আউট স্থগিত

ডেস্ক রিপোর্ট: সিআইডি জানিয়েছে, হুন্ডি ‘ব্যবসায়ীদের’ একটি সিন্ডিকেট গত এক বছরে দেশের বিভিন্ন এমএফএস অপারেটরের মাধ্যমে প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে।

হুন্ডিতে রেমিট্যান্স আসায় ৪টি মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানের ২৩০টি গ্রাহক একাউন্ট থেকে ক্যাশ আউট স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স আসা প্রতিরোধে নতুন এই উদ্যোগ বিএফআইইউ।

পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এসব একাউন্ট থেকে কোনো টাকা তুলতে পারবেন না সংশ্লিষ্ট গ্রাহকেরা। তবে এসব একাউন্টে টাকা পাঠানো যাবে। তথ্য সূত্র : টিবিএস

একাউন্টধারীরা তাদের বিদেশে অবস্থানকারী আত্মীয়-স্বজনদের বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে উদ্বুদ্ধ করবেন – এমন শর্তে একাউন্টগুলো আবার পুরোপুরি সচল করে দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

স্থগিত হওয়া একাউন্টগুলো বিকাশ, নগদ, উপায় এবং রকেটের।

বিএফআইইউ এর ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য তাদেরকে আতঙ্কিত করা, তাদের টাকাটা ব্লক করে রাখা নয়। আমরা চাই, তারা নিজেরা সচেতন হোক ও তাদের আশেপাশের মানুষজন সচেতন করুক। আমরা চাই তারা বুঝুক যে এভাবে হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স নিলে শাস্তি হতে পারে।

ক্যাশ আউট স্থগিত করা গ্রাহকদের আমরা পাশের সংশ্লিষ্ট এমএফএস এর কলসেন্টারে যেতে বলেছি। সেখান থেকে তাদেরকে হুন্ডিতে রেমিট্যান্স সংগ্রহ না করার জন্য উৎসাহিত করা হবে। তাদের বলা হবে, যারা রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন তাদেরকে যেন বোঝানো হয় যে, প্রোপার চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠালে দেশেরও লাভ হয় এবং সবাই নিরাপদে থাকতে পারে, যোগ করেন তিনি।

বুধবার এক প্রেস বিবৃতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, হুন্ডির মাধ্যমে লেনদেন শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

এতে বলা হয়েছে, যে কোনো অনানুষ্ঠানিক মাধ্যমে রেমিটেন্স পাঠানোর সাথে জড়িত সকলের বিরুদ্ধে বিএফআইইউ ব্যবস্থা নিচ্ছে। ডিজিটাল হুন্ডি মোকাবেলা করতে এমএফএস অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সন্দেহজনক লেনদেন শনাক্ত করার জন্য কিছু প্যারামিটার সেট করেছে বিএফআইইউ। ইউনিটের এক সিনিয়র এক্সিকিউটিভ জানিয়েছেন এ তথ্য।

প্যারামিটারগুলো হলো- মধ্যরাতের পরে লেনদেন, যে অ্যাকাউন্টগুলো শুধুমাত্র ক্যাশ-ইন বা শুধুমাত্র ক্যাশ-আউট দেখায়, এক অ্যাকাউন্টে এক মিনিটে সর্বোচ্চ চারটি লেনদেন এবং ৩ কোটি টাকার যেসব এজেন্ট অ্যাকাউন্ট শুধুমাত্র ক্যাশ আউট বা শুধুমাত্র ক্যাশ ইন দেখায়।

অপারেটরদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, এ প্যারামিটারগুলো অনুসরণ করে এমএফএস অ্যাকাউন্ট ফিল্টার করতে এবং বিএফআইইউ কে রিপোর্ট করতে।

বিএফআইইউ কর্মকর্তা আরও বলেন, ডিজিটাল হুন্ডির প্রসার রোধে ইউনিট এবং পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) একসঙ্গে কাজ করছে।

বিএফআইইউ-এর গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সিআইডি এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এ বিষয়ে পাঁচটি মামলা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

বিএফআইইউ-এর প্রধান মাসুদ বিশ্বাস এর আগে বলেছিলেন, তাদের ইউনিট ৫ হাজারটিরও বেশি অত্যন্ত সন্দেহজনক এমএফএস অ্যাকাউন্ট চিহ্নিত করেছে। তিনি আরো জানান, সেসব অ্যাকাউন্টের বিবরণ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে পাঠানো হয়েছে।

সিআইডি জানিয়েছে, হুন্ডি ‘ব্যবসায়ীদের’ একটি সিন্ডিকেট গত এক বছরে দেশের বিভিন্ন এমএফএস অপারেটরের মাধ্যমে প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে।

গত চার মাসে ৫ হাজার এমএফএস এজেন্ট হুন্ডির মাধ্যমে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে বলে জানিয়েছে সিআইডি। এ বছরের সেপ্টেম্বরে মানি লন্ডারিংয়ের পিছনে মাস্টারমাইন্ডসহ একটি গ্যাংয়ের ১৬ সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর এ তথ্য জানায় সিআইডি।

যোগাযোগ করা হলে, বিকাশের হেড অব কর্পোরেট কমিউনিকেশনস শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, তাদের একটি আলাদা টিম রয়েছে, যারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সন্দেহজনক লেনদেন এবং লেনদেনে সন্দেহজনক কার্যকলাপ সনাক্ত করে।

তিনি আরও বলেন, আমরা প্রতিবেদনটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠাই। এছাড়া, যখন আইন প্রয়োগকারী বাহিনী এই লেনদেন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য চায়, তখন আমরা তাও দিয়েছি।

যদিও বছরের শুরু থেকে জনশক্তি রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, কিন্তু রেমিট্যান্স প্রবাহে দেখা যাচ্ছে সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র। প্রবাহ কম থাকায় চাপের মধ্যে পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও।

বাংলাদেশ চলতি বছরের প্রথম আট মাসে ৭.৮৪ লাখ কর্মী পাঠিয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ে পাঠানো ২.৭৬ লাখের প্রায় দ্বিগুণ। এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতির জন্য দায়ী করা হয় দুটি বিষয়কে- রেমিট্যান্স রেটে সীমা নির্ধারণ এবং ডিজিটাল হুন্ডি।

বর্তমানে, ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোর জন্য ডলার রেট ১০৭ টাকা, সঙ্গে আছে ২.৫% সরকারী প্রণোদনা। অন্যদিকে হুন্ডিতে ডলার রেট প্রায় ১১৪-১১৫ টাকা।

হুন্ডি প্রতিরোধে বিএফআইইউ এর সিদ্ধান্ত সঠিক উল্লেখ করে পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমাদের হুন্ডি বাণিজ্যের হোতাদের ধরতে হবে। তা না হলে এসব পদক্ষেপ কোনো কাজেই আসবে না। বৈধ ও অবৈধ চ্যানেলে ডলারের রেটের পার্থক্য সাধারণত ২ থেকে ৩ টাকা। কিন্তু এখন এই পার্থক্য কমপক্ষে ৫ টাকা।

পার্থক্য যত বাড়বে হুন্ডিও তত বাড়বে বলে মন্তব্য করেন এই অর্থনীতিবিদ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top