স্টাফ রিপোর্টার: প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) বিশেষ সুবিধা পাওয়া ২৬ বীমা কোম্পানির প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। শেয়ারবাজারের তারল্য সংকট কাটাতে বীমা কোম্পানিগুলোর সহায়তা চেয়ে এ বৈঠক করা হয়।
বিএসইসি কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে বুধবার (৭ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে তিনটায় কমিশনের মাল্টিপারপাস হলে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী হিসেবে পোর্টফলিও ম্যানেজ করা বীমা কোম্পানিগুলোকে বাজারে সাপোর্ট দেয়ার আহবান জানানো হয়েছে।
বৈঠকে শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠানকে এখানে ডাকা হয়েছে, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে ইতোমধ্যে তাদেরকে বেশ কিছু সুযোগ, সুবিধা দেয়া হয়েছে। -যাতে তারা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
তিনি বলেন, ব্যাংক স্বল্পমেয়াদি আমানত গ্রহণ করে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেয়। আর বীমা কোম্পানি দীর্ঘমেয়াদি ফান্ড পেয়ে থাকে। যদি তারা এই ফান্ড পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করে, তবে অনেক বেশি রিটার্ন পাবে। আর, বিনিয়োগ সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য তাদের বিনিয়োগ শিক্ষার প্রয়োজন পড়লে কমিশন থেকে ওয়ার্কশপ, সেমিনার, ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে।
তিনি আরো বলেন, অর্থনীতির উন্নয়নে বীমা খাতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আগামীতে এ গুরুত্ব আরো বাড়বে। এর জন্য কমিশনের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হলে যথাযথভাবে তা করা হবে। পাশপাশি, আইডিআরএ’র দিক থেকে কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হলেও সে বিষয়ে নজর দিতে কমিশনের পক্ষে আইডিআরএ’কে অনুরোধ করা হবে।
বিএসইসির বৈঠকে ২৬টি বিমা কোম্পানির মধ্যে যে সকল কোম্পানি এখনো তালিকাভুক্ত হয়নি তাদেরকে তালিকাভূক্ত হতে আইপিও আবেদন করার আহ্বান জানানো হয়েছে। কোম্পানিগুলো মূলধনের ২০ শতাংশ বিনিয়োগ করলে আইপিও’র মাধ্যমে কোম্পানিগুলোর শেয়ারবাজারে আসতে সহায়তা করা হবে বলে বিএসইসি আশ্বস্ত করে। সেইসঙ্গে, যাদের বিনিয়োগ বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে, তাদেরকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য আহবান করা হয়েছে।
পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকার কম থাকা ২৬টি বীমা কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে তাদের ইকুইটির ২০ শতাংশ অর্থ বিনিয়োগ করার শর্তে নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে ছাড় দিয়ে ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল বলে জানায় বিএসইসি। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বীমা কোম্পানিগুলো ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতির আইপিওর মাধ্যমে ন্যূনতম ১৫ কোটি টাকার তহবিল উত্তোলন করতে পারবে। এক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোকে তাদের ইকুইটির ন্যূনতম ২০ শতাংশ অর্থ শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করতে হবে।
কোম্পানিগুলো ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তি ও ইকুইটির ২০ শতাংশ অর্থ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ- এ দু’টির কোনোটিই এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন করেনি। এ অবস্থায় এসব বীমা কোম্পানিকে তালিকাভুক্তি ও ইকুইটির ২০ শতাংশ অর্থ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য উৎসাহিত করতে বৈঠকের উদ্যোগ নেয় বিএসইসি।
চলমান মন্দা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যানকে থাকার অনুরোধ জানানো হলেও আইডিআর এর পক্ষ থেকে একজন নির্বাহী পরিচালক উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে বিএসইসির ক্যাপিটাল ইস্যু ডিপার্টম্যান্টের সকল কর্মকর্তাসহ হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স, গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সানফ্লাওয়ার লাইফ ইন্স্যুরেন্স, বায়রা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, বেস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স, চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স, প্রোটেক্টিভ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, এনআরবি গ্লোবাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আরো উপস্থিত ছিলেন- আলফা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ডায়মন্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স, গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স, যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, স্বদেশ লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, এলআইসি (বাংলাদেশ), মেঘনা ইন্স্যুরেন্স, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স, সাউথ এশিয়া ইন্স্যুরেন্স, ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স, ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স, দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স ও সিকদার ইন্স্যুরেন্সের প্রতিনিধিবৃন্দ।