সকল মেনু

মূলধন সংকটে লুব-রেফ, বিএসইসির নীতি সহায়তা কামনা

স্টাফ রিপোর্টার: ব্যবসায়িক মলূধন ঘাটতিতে পড়েছে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের কোম্পানি লুব-রেফ (বাংলাদেশ)। সমস্যা মোকাবেলায় নানা চেস্টার পরেও প্রষ্ঠিানটি ঋণ নিতে পারছে না কোনো ব্যাংক থেকে। এ অবস্থায় নীতিগত সহায়তা প্রার্থনায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) দ্বারস্থ কোম্পানিটি।

লুব-রেফের এমডি প্রষ্ঠিানটির বর্তমান পরিস্থিতি তলে ধরে ইতোমধ্যে বিএসইসির কাছে চিঠি পাঠিয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়।

কমিশনের কাছে পাঠানো চিঠির তথ্য অনুসারে, উদ্যোক্তা এবং আইপিওর মাধ্যমে বর্তমানে কোম্পানির ইক্যুইটি শেয়ারের পরিমাণ ১৪৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা। আর, ৫২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা দীর্ঘ এবং ৭৪ কোটি ২১ লাখ টাকা স্বল্পমেয়াদী ঋণ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।

তথ্যে আরো জানা যায়, অন্তত ১৪০ কোটি টাকার ব্যবসায়িক মূলধন প্রয়োজন প্রতিষ্ঠানটির দায় পরিশোধে। বিপরীতে, অর্থায়ন এবং অর্থায়ন ছাড়া ৭০ কোটি টাকার ব্যবসায়িক মূলধন রয়েছে কোম্পানিটির। কাঁচামালজনিত ব্যয় বহুগুণ বেড়ে যাওয়ায় ২০২২ ও ২০২৩ সালের বিক্রয় বিক্রয় লক্ষ্যমাত্রা পূরণে যথেষ্ট নয় এই টাকা।

অন্যদিকে, করোনাকালীন কোম্পানির মোটরগাড়ি খাতের বাজার চাহিদা বন্ধ হয়েছিল। ওই সময় বেশ খারাপ অবস্থায় ছিল শিল্প খাতের কার্যক্রমও।

নানা প্রতিকূলতায় কোম্পানির অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলায় বিভিন্ন ব্যাংকে প্রতিষ্ঠানটির সব স্থায়ী সম্পদ বন্ধক রেখে ঋণ নেয়া হয়। যেকারণে, নষ্ট হয়ে যায় কোম্পানির ব্যবসায়িক মূলধনের অধিকাংশই।

পাশাপাশি, করোনা মহামারিতে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে কোম্পানিকে অতিরিক্ত ব্যবসায়িক মূলধন দিতে ব্যর্থ হয় সংশ্লিষ্ট ব্যাংক। এ ক্ষেত্রে কেবল ১০ কোটি টাকার মধ্যে থাকা ঋণের সুদের হারে ছাড় দিয়েছে কোম্পানিটি। যেকারণে পূরণ হয়নি কোম্পানির চাহিদা।

আবার, মহামারি-পরবর্তী সময়ে প্রতিষ্ঠানটি যখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেস্টা করছিল, তখন পুরো পেট্রোলিয়াম খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয় ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে। এতে আগের তুলনায় কাঁচামালের দাম বেড়ে যায় দুই থেকে তিন গুণ। সঙ্গে যোগ হয় অন্যান্য পণ্য-মূল্যের ঊর্ধ্বগতি। এ অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায়িক মূলধন নেমে আসে এক-তৃতীয়াংশে।

প্রদত্ত চিঠির তথ্যে আরো জানা যায়, কোম্পানির ব্যবসায়িক মূলধনের সীমা অবিলম্বে বৃদ্ধি করা অপরিহার্য হওয়া সত্ত্বেও অতিরিক্ত জামানত ছাড়া অর্থ দিতে রাজি হচ্ছেনা কোনো ব্যাংক। সব স্থায়ী সম্পদ বন্ধক রেখে ঋণ নেয়ার কারণে জামানত দিতেও অক্ষম প্রতিষ্ঠানটি।

এদিকে, ২০২২ সালের ২৩ জুন সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক থেকে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডে ট্রান্সফার করা হয় প্রতিষ্ঠানটির আইপিওর ৩৭ কোটি টাকা। ফলে, আইপিও অর্থ থেকে ব্যাংকের সামান্য দায় পরিশোধের পর নতুন প্রকল্পের সাইট উন্নয়নে প্রতিষ্ঠানটির ২০ কোটি টাকা রয়েছে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে। এতে কোম্পানির নতুন প্রস্তাবের প্রতি কঠোর হয় সংশ্লিষ্ট ব্যাংক।

এলসি মার্জিনের জন্য বিশেষ অ্যাকাউন্টে রাখা উল্লেখিত আইপও অর্থ বিএমআরই প্রকল্পের যন্ত্রপাতি আমদানিতে অপর্যাপ্ত। আবার, অগ্রণী ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ব্যর্থ হয়েছে প্রতিশ্রুত সিন্ডিকেট ঋণ দিতে। সেইসঙ্গে, দুই বছরের জন্য কোম্পানির ঋণ প্রস্তাবও বাতিল করেছে ব্যাংক দু’টি।

তবে, অগ্রণী ব্যাংকে প্রস্তাবিত একটি সিন্ডিকেটেড ঋণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে। যদিও কোম্পানির বিএমআরই প্রকল্প শেষ হতে অনেকটাই দেরি হবে। পাশাপাশি, বিশ্ব অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে কোম্পানি ওপর এর প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করছে কোম্পানি-কর্তৃপক্ষ। লুব-রেফের এমন সঙ্কট উত্তরণে বিএসইসির নীতিগত সহায়তা চেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

এ বিষয়ে কোম্পানির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) মফিজুর রহমান বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যাংক কোনো সহয়োগিতা করছেনা। আবার, এলসি বন্ধ করে দিয়েছে প্রায় ছয় মাস আগে থেকেই। তবে, এখন কিছু কিছু এলসি খোলা হচ্ছে ১০০ থেকে ১৫০ শতাংশ মার্জিনে।

তিনি বলেন, ক্ষেত্রবিশেষে এলসির বিপরীতে ২০০ শতাংশও মার্জিন দিতে হয়। তাও আবার সুযোগ বুঝে করে থাকে ব্যাংকগুলো।

তিনি আরো বলেন, আগে ৫ থেকে ১০ শতাংশ মার্জিনে এলসি খোলা যেতো। শতাংশের হার বৃদ্ধি পাওয়ার পরও টার্গেট পূরণ করতে হচ্ছে। আর, টার্গেট পূরণে ব্যর্থ হলে কোম্পানি বকেয়ায় পড়ে যাবে অথবা খেলাপি হয়ে যাবে। এসব কারণে কমে যাচ্ছে কোম্পানির ব্যবসায়িক মূলধন।

মফিজুর রহমান বলেন, বড় আকারে প্রকল্প করার কথা থাকলেও ব্যাংক তাতে রাজি না থাকায়, ছোট আকারে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রকল্পের জন্য নেয়া আইপিও অর্থের একটি অংশ স্বল্প সময়ের জন্য ব্যবসায়িক মূলধন হিসেবে ব্যবহার করতে নীতিগত সহায়তা চাওয়া হয়েছে কমিশনের কাছে।

পুঁজিবাজারে ২০২১ সালে তালিকাভুক্ত লুব-রেফের এমন অর্থনৈতিক বিপর্যয় সত্ত্বেও ২০২১-এর সমাপ্ত হিসেব বছরে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। ২০২২-এর  সমাপ্ত হিসেব বছরেও তা অব্যহত থাকবে বলে কোম্পানির প্রত্যাশা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top