সকল মেনু

কার কর অডিট হবে, বাছাই করবে বিশেষায়িত সফটওয়্যার

স্টাফ রিপোর্টার: একটি বিশেষায়িত সফটওয়্যার তৈরি করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। কর্মকর্তাদের মতে, এ সফটওয়্যার ব্যবহারের ফলে কর অডিট প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আসবে, কর কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচার ক্ষমতা কমবে, কর ফাঁকি চিহ্নিত করা যাবে এবং করদাতাদের অডিট-ভীতি দূর হবে।
এ লক্ষ্যে এনবিআর ‘রিস্ক ম্যানেজমেনট ইঞ্জিন’ নামে একটি সফটওয়্যার তৈরি করেছে। এ সফটওয়্যার তথ্য সংগ্রহের জন্য অন্যান্য সরকারি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে; পাশাপাশি করদাতা, ব্যক্তি ও কোম্পানির জমা দেওয়া রিটার্ন স্ক্যান করার পর ব্যক্তিগত অডিটের জন্য ফাইল বাছাই করবে।

একটি বিশেষায়িত সফটওয়্যার তৈরি করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। কর্মকর্তাদের মতে, এ সফটওয়্যার ব্যবহারের ফলে কর অডিট প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আসবে, কর কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচার ক্ষমতা কমবে, কর ফাঁকি চিহ্নিত করা যাবে এবং করদাতাদের অডিট-ভীতি দূর হবে।

এ লক্ষ্যে এনবিআর ‘রিস্ক ম্যানেজমেনট ইঞ্জিন’ নামে একটি সফটওয়্যার তৈরি করেছে। এ সফটওয়্যার তথ্য সংগ্রহের জন্য অন্যান্য সরকারি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে; পাশাপাশি করদাতা, ব্যক্তি ও কোম্পানির জমা দেওয়া রিটার্ন স্ক্যান করার পর ব্যক্তিগত অডিটের জন্য ফাইল বাছাই করবে।

একজন এনবিআর কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চলতি মাসের শেষের দিকে কিংবা আগামী মাসে কর অঞ্চল-৬-এর এক বা একাধিক সার্কেল অফিসে এ কার্যক্রমের পাইলটিং শুরু হবে। এরপর আগামী বছর থেকে সফটওয়্যারটি পুরোদমে কার্যক্রম শুরু করবে।

এনবিআর এই প্রথমবারের মতো অডিট ম্যানুয়ালও তৈরি করছে। ওই ম্যানুয়ালের আওতায় এই কার্যক্রম চলবে। ট্যাক্স ম্যানুয়াল না থাকায় ট্যাক্সম্যানরা এখন ইচ্ছামতো ফাইল বাছাই করেন। অভিযোগ রয়েছে, এ প্রক্রিয়ায় অনেক করদাতা প্রায়ই হয়রানির শিকার হন।

এ কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত এনবিআরের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘নতুন অটোমেটেড সিস্টেম চালু হলে কর কর্মকর্তারা ইচ্ছামাফিক কর ফাইল অডিটের জন্য বাছাই করতে পারবেন না। কারণ তখন কোন করদাতার ফাইল অডিট করা হবে, তা নির্দিষ্ট মানদণ্ডের ভিত্তিতে সফটওয়্যারটিই বেছে নেবে।’

তথ্যের জন্য সরকারের অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ করবেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেকেন্ডারি সোর্সের (বিভিন্ন সরকারি সংস্থা) কাছে খুঁজলে করদাতার সম্পদের অনেক পাওয়া যাবে। যেমন, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) যে তথ্য আমাদের কাছে আছে, তাতে প্রায় আড়াই লাখ ফাইলের অডিট কার্যক্রম এখনই চালু করা সম্ভব।

‘তবে সব সেকেন্ডারি সোর্সের ডাটাবেজে অনেকটুকু অগ্রগতি হয়েছে। এখন করদাতার ডাটাবেজের ভিত্তিতে প্রোফাইলিং করা হবে। এরপর কার্যক্রম শুরু হবে।’

তিনি আরও বলেন, এ প্রক্রিয়া কেবল কর নয়, দেশের সার্বিক আর্থিক ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনতে বিরাট ভূমিকা পালন করবে।

করদাতাদের তিন বছরের ডাটা সংগ্রহের কাজ এখন চলমান আছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা। কর বিভাগ সরকারের অন্যান্য সংস্থার ডাটাবেজে প্রবেশাধিকার নিচ্ছে। এর ফলে কর ফাইলে দেখানো আয়, ব্যয় ও সম্পদের তথ্যের সঙ্গে সফটওয়্যার অন্যান্য বিভাগের তথ্য মিলিয়ে দেখে নির্দিষ্ট মানদণ্ডের ভিত্তিতে সন্দেহভাজন ফাইল চিহ্নিত করতে পারবে।

তিনি জানান, এরপর ওইসব ফাইল এনবিআরের ট্যাক্স রিস্ক ইউনিটে পাঠানো হবে। সেই ইউনিট চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে মাঠ পর্যায়ের অফিসগুলোকে অডিটের জন্য নির্দেশনা দেবে।

কোন ধরনের ফাইল অডিটের ক্ষেত্রে তারা সন্দেহের তালিকায় রাখবেন—এমন প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এই ক্রাইটেরিয়া এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে আয়-ব্যয় কিংবা সম্পদে বড় ধরনের গরমিল রয়েছে, এমন ব্যক্তি এর আওতায় আসতে পারেন।’

কর অব্যাহতিপ্রাপ্ত কিন্তু বড় আয় আছে, শেয়ারবাজারে বড় ধরনের মুনাফা করছেন, বড় অঙ্কের রেমিট্যান্স আনছেন, আমদানি বা রপ্তানিকারক—এ ধরনের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান অডিটের জন্য বিবেচিত হতে পারে বলে জানিয়েছে এনবিআরের আরেকটি সূত্র।

তবে নতুন করে যারা আয়কর রিটার্ন দেবেন, তাদের ক্ষেত্রে বড় ধরনের অনিয়ম না পেলে তারা এর আওতার বাইরে থাকার সম্ভাবনা বেশি বলে জানায় ওই সূত্র।

সংশ্লিষ্ট এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যে আয়কর বিভাগ গত পাঁচ বছরের আমদানি-রপ্তানির তথ্য এনবিআরের কাস্টমস বিভাগের স্বয়ংক্রিয় সফটওয়্যার অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড থেকে সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণ করছে। এর ফলে কর ফাইলের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানির তথ্য সহজেই যাচাই করার সুযোগ তৈরি হবে।

দেশে বর্তমানে ট্যাক্সপেয়ার আইডেন্টিফিকেশন নাম্বারধারী (টিআইএন) ৮৬ লাখ মানুষের মধ্যে গত বছর ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিয়েছেন প্রায় ২৮ লাখ করদাতা। এর মধ্যে ট্যাক্স রিটার্ন জমাদাতা কোম্পানি ৩০ হাজারের মতো, আর বাকিরা ব্যক্তি করদাতা।

কিছু করদাতার অভিযোগ, কর ফাইল অডিটের জন্য কিছু নির্দেশনা থাকলেও মাঠ পর্যায়ে তার বাস্তবায়ন হয় না। একজন কর কর্মকর্তা সাধারণত তার ইচ্ছামাফিক কর ফাইল অডিটের জন্য বাছাই করে করদাতাকে চিঠি পাঠান। এ প্রক্রিয়া করদাতাদের মধ্যে ভীতি তৈরি করে, পাশাপাশি হয়রানির সুযোগও বাড়ায়।

বর্তমানে কোন কর অফিসের কত শতাংশ ফাইল অডিটের জন্য নির্ধারণ করা হবে, তার কোনো আইনি কাঠামোও নেই। তবে এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে ২ শতাংশের মত কর ফাইল অডিট হয়।

৯ ফেব্রুয়ারি এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম এনবিআর ভবনে এক আলোচনা সভায় স্বীকার করেন, করদাতাদের অডিট-ভীতি দূর না হলে কর জাল সম্প্রসারিত হবে বাড়বে না।

আবু হেনা বলেন, ‘অডিটের এই ভীতি দূর করতে এনবিআর ম্যানুয়াল তৈরি করা হচ্ছে। সেকেন্ডারি ডাটা এবং অন্যান্য প্রমাণ হাতে পাওয়ার পর অডিট করা হবে।’

এনবিআরের এমন উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। ইন্সটিটিউট অভ চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস অভ বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি মো. শাহাদত হোসেন বলেন, ‘এটি ভালো উদ্যোগ। তবে যে ক্রাইটেরিয়া সেট হবে, তা যাতে করদাতাদের মধ্যে ভীতি তৈরি না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’

সূত্রমতে, এনবিআরের এই সফটওয়্যার তৈরিতে সহায়তা করছেন অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী একদল বাংলাদেশি প্রযুক্তিবিদ।

নারায়ণগঞ্জভিত্তিক তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক মোহাম্মদ হাতেম এনবিআরের এমন উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, ‘ক্রাইটেরিয়া ঠিক করে অটো সিস্টেমে অডিটের ফাইল ঠিক করা হলে করদাতাদের হয়রানি হয়তো কমবে। আশা করি এতে অডিটের সময়ও কমে আসবে।’

তবে তিনি মনে করেন, হয়রানি করতে চাইলে সফটওয়্যার পদ্ধতি আসার পরও করা সম্ভব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top