সকল মেনু

নির্ধারিত সময়ে লভ্যাংশ দিচ্ছে না কিছু কোম্পানি

সিনিয়র রিপোর্টার: সর্বশেষ আর্থিক বছর শেষ হয়েছে সাড়ে আট মাস আগে গত জুনে। অথচ আগের আর্থিক হিসাব বছরের লভ্যাংশ পাননি কিছু কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার। এর মধ্যে নামিদামি কোম্পানি আছে। এক বা আধা শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণাকারী কোম্পানিও রয়েছে। সং

স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভুক্তি আইনে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে লভ্যাংশ বিতরণের বাধ্যবাধকতা আছে। এ সময়ের মধ্যে লভ্যাংশ বিতরণ করে সাত দিনের মধ্যে স্টক এক্সচেঞ্জকে কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট জমা দিতে হয়।

স্টক এক্সচেঞ্জের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগে সব ব্যাংক অনলাইন লেনদেনের আওতায় ছিল না। তখন হাজার হাজার ডিভিডেন্ড ওয়ারেন্ট ইস্যু ও বিতরণ করতে অনেক সময় লাগত এবং নগদ লভ্যাংশ বিতরণে এক মাস সময় যৌক্তিক ছিল না। এখন সব ব্যাংকের লেনদেন অনলাইনের আওতায়।

এ ছাড়া নগদ লভ্যাংশ সরাসরি শেয়ারহোল্ডারদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠানোর নির্দেশনা আছে। এ অবস্থায় চাইলে এজিএমের এক সপ্তাহের মধ্যে লভ্যাংশ বিতরণ করা সম্ভব। কিন্তু কিছু কোম্পানি দুই মাস পরও লভ্যাংশ দিচ্ছে না। আবার এমন ঘটনাও আছে, যেখানে লভ্যাংশ বিতরণ না করেই লভ্যাংশ দিয়েছে বলে কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট দিচ্ছে; যা পরিস্কার জালিয়াতি।

লভ্যাংশ দিচ্ছে না, এমন কোম্পানির মধ্যে রয়েছে এএফসি এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ। এর পরিচালনা পর্ষদ ৩০ জুন, ২০২২ তারিখে সমাপ্ত আর্থিক বছরের জন্য শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ বা ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতি শেয়ারের বিপরীতে ৫০ পয়সা হারে নগদ লভ্যাংশ প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়। কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ১১৫ কোটি টাকা। সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে দরকার ছিল মাত্র ১ কোটি ২৮ লাখ টাকা। গত ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত এজিএমে তা পাসও হয়। এর দেড় মাস পার হওয়ার পরও কোম্পানি এ অর্থ বিতরণ করেনি। এ কোম্পানির উদ্যোক্তাদের একজন মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর সংগঠন বিএমবিএর সভাপতি ছায়েদুর রহমান।

তিনি গত ২৫ জানুয়ারি ডিএসইর ব্লক মার্কেটে নিজের ধারণ করা কোম্পানির প্রায় সাড়ে ২৫ লাখ শেয়ার বিক্রি করেছেন। এ ধরনের কোম্পানির তালিকায় আছে অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন, আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিং, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, প্যাসিফিড ডেনিম, ন্যাশনাল ফিড মিলস ও সিলকো ফার্মা।

নির্ধারিত সময়ের পরও যেসব কোম্পানির লভ্যাংশ বিতরণের কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট পাওয়া যায়নি, তার মধ্যে রয়েছে- ফরচুন সুজ, ইন্দোবাংলা ফার্মা, বিকন ফার্মা, ক্রাউন সিমেন্ট, রানার অটোমোবাইলস, ল্যুব রেফ বাংলাদেশ, অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন, সাফকো স্পিনিং, আরামিট সিমেন্ট, মোজাফফর হোসেন স্পিনিং মিলস, কনফিডেন্স সিমেন্ট, ন্যাশনাল ফিড মিলস, ঢাকা ডায়িং অ্যান্ড এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিল। আবার নামিদামি কোম্পানিও নির্ধারিত সময়ের পর বা অনেকটা বিলম্বে লভ্যাংশ দেওয়ার নজির সৃষ্টি করেছে।

ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা জানান, কিছু কোম্পানি শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ বা আধা শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করছে। ‘নো ডিভিডেন্ড’ বা শূন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করলে কোম্পানি মন্দ শেয়ারের ক্যাটাগরিভুক্ত (জেড) হয় এবং এমন কোম্পানির শেয়ার লেনদেন নিষ্পত্তিতে বাড়তি সময় লাগে বিধায় কিছু কোম্পানি এভাবে লভ্যাংশের ঘোষণা দিচ্ছে। কিন্তু ওই সামান্য লভ্যাংশও দিতে পারছে না।

ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত এমডি সাইফুর রহমান মজুমদার বলেন, এজিএমের প্রায় এক মাস আগেই শেয়ারহোল্ডারদের তালিকা ও ব্যাংক হিসাবের তথ্য কোম্পানি পেয়ে যায়। সব ব্যাংক শাখা অনলাইনের আওতায় বলে চাইলে এক সপ্তাহের মধ্যে নগদ লভ্যাংশ বিতরণ করা সম্ভব। এ অবস্থায় কেন কোম্পানিগুলো বেশি সময় নিচ্ছে, তা বোধগম্য নয়। হয়তো লভ্যাংশের জন্য নগদ অর্থের সংস্থান না রেখেই লভ্যাংশ ঘোষণা করছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে অনুরোধ করা হবে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা সমকালকে জানান, আধা শতাংশের মতো লভ্যাংশ প্রদানকারী কোম্পানির বিষয়ে কমিশন বিশেষ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। এগুলো জেড ক্যাটাগরিভুক্ত হবে। এখন শূন্যের থেকে বেশি, তবে ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ প্রদানকারী কোম্পানি ‘বি’ ক্যাটাগরিভুক্ত শেয়ার হিসেবে বিবেচিত হয়।

ফলে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদানকারী যেমন বি ক্যাটাগরিতে পড়ে, তেমনি ৫ থেকে ৯ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদানকারী কোম্পানির ক্যাটাগরিও ‘বি’। এ ও বি ক্যাটাগরিভুক্ত শেয়ারের লেনদেন নিষ্পত্তির সময় একই। কিছু কোম্পানির মূল মালিকপক্ষ এর সুযোগ নিচ্ছে।

জ্বালানি খাতের ল্যুব রেফের কোম্পানি সচিব মশিউর রহমান বলেন, ২৬ জানুয়ারি থেকে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ বিতরণ শুরু হয়েছে। ধাপে ধাপে দেওয়া হচ্ছে। আইপিও-পূর্ব প্লেসমেন্ট শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ বিতরণে দুই থেকে তিন মাসের সময় চাওয়া হয়েছে। বিলম্বের কারণ সিএফও ভালো বলতে পারবেন বলে জানান তিনি। তবে সিএফও হেলাল উদ্দিনের মোবাইল ফোনে কল করে বন্ধ পাওয়া গেছে।

বিকন ফার্মার কোম্পানি সচিব খলিলুর রহমান জানান, ২৬ জানুয়ারি থেকে নগদ লভ্যাংশ বিতরণ শুরু হয়। কার কত লভ্যাংশ দিতে হবে, সে হিসাবে গরমিল হওয়ায় একটু দেরি হয়। এরপর নগদ অর্থের সংকুলানের অভাবে ২৬ জানুয়ারি থেকে ধাপে ধাপে লভ্যাংশ বিতরণ হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top