Homeঅর্থনীতিবিভক্ত হচ্ছে তিতাস গ্যাস

বিভক্ত হচ্ছে তিতাস গ্যাস

স্টাফ রিপোর্টার: দেশের সবচেয়ে বড় গ্যাস বিতরণ প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (টিজিটিডিসিএল)-কে ভেঙে আলাদা করার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছেন জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান। ইতোমধ্যে বিভক্তির কাজ অনেক দূর এগিয়েছে।

ভার্চুয়াল আলোচনায় গত বছরে আনিছুর রহমান বলেন, এতো বড় পরিসরে তিতাসকে দিয়ে ‘গুড গভর্নিং’ হবে না। এটা অসম্ভব। অবশ্যই সময় এসেছে তিতাসকে এক বা একাধিক কোম্পানীতে রূপান্তর করার, এছাড়া কোনো গুড গভর্নিং হবে না। এটা নিয়ে কাজ করার জন্য বলা হয়েছে। আরেকটু বড় পরিসরে আলাপ করে বাকি কাজগুলো করবো।

বৃহত্তর ঢাকা ও বৃহত্তর ময়মনসিংহ এলাকাজুড়ে তিতাস গ্যাসের কার্যক্রম বিস্তৃত। একদিকে মুন্সিগঞ্জ থেকে শেরপুর, আরেকদিকে ভৈরব থেকে কেরানীগঞ্জ। এতো বিশাল এলাকা কোনোভাবেই বর্তমান কাঠামোর মাধ্যমে পরিচালনা এবং নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না।

এ কারণেই আমরা তিতাস গ্যাসকে বিভক্ত করতে চাই, তিনি যােগ করেন।  এসময় কিভাবে তিতাসকে বিভক্ত করা যায়, তা জানতে খাত বিশেষজ্ঞদের কাছে পরামর্শ চান জ্বালানি সচিব।

আলোচনা সভায় উপস্থিত পেট্রোবাংলার সাবেক পরিচালক অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী খোন্দকার সালেক সুফি জ্বালানি সচিবকে জানান, ২০০২ সালে পেট্রোবাংলার এক প্রতিবেদনে তিতাস গ্যাসকে ঢাকা মেট্রো, নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী, ময়মনসিংহ- এই তিন ভাগে বিভক্ত করার একটি সুপারিশ তারা করেছিলেন।

জ্বালানি মন্ত্রণালয় চাইলে সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারে বলে পরামর্শ দেন তিনি।

জবাবে জ্বালানী সচিব জানান, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগও অন্তত তিনভাগে তিতাস গ্যাসকে বিভক্ত করার পরিকল্পনা করছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান জ্বালানি সচিব।

বর্তমানে দেশে ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানী রয়েছে। এগুলোর মধ্যে তিতাস গ্যাস সবচেয়ে বড়। এই কোম্পানীর মোট ২৮.৭৪ লাখ গ্রাহক রয়েছে।

পাক্ষিক ‘এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার’ পত্রিকা  এ ভার্চুয়াল আলোচনার আয়োজন করে। পত্রিকাটির সম্পাদক মোল্লাহ আমজাদ হোসেন আলোচনা পরিচালনা করেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জ্বালানি সচিব আরও জানান, তিতাস গ্যাসের আওতায় থাকা এলাকাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অবৈধ সংযোগ রয়েছে নারায়ণগঞ্জে। আর ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জে গ্যাস পাইপলাইনের ওপর সবচেয়ে বেশি স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। তবে গ্যাসের অবৈধ সংযোগ বন্ধে অভিযান চলছে। যেহেতু বৈধ-অবৈধ সংযোগ মিলে গেছে, আমরা এখন উৎসে লাইন কেটে দিচ্ছি। এতে বৈধ গ্রাহকের কিছু অসুবিধা হচ্ছে। তবে তারা আমাদের সহায়তা করছেন।

গ্যাস বিতরণ কোম্পানীর অসাধু কর্মকর্তাদের বিষয়ে সচিব বলেন, এক্ষেত্রে গ্যাস কোম্পানির অসাধু কর্মকর্তাদেরও ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। শুধু বদলি না, বিভাগীয় ব্যবস্থা, প্রয়োজনে ফৌজদারী মামলা পর্যন্ত করা হচ্ছে। এসব কাজ কঠিন, তবুও আমরা করছি। যে কোনো উপায়ে আমরা গ্যাসের অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদ করবো।

এই মুহুর্তে বাসাবাড়িতে গ্যাস সংযোগ দেওয়া সম্ভব নয় বলেও জানান আনিছুর রহমান।

আলোচনা অনুষ্ঠানে মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন টিজিটিডিসিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী ইকবাল মোহাম্মদ নুরুল্লাহ।

তিনি বলেন, তিতাস গ্যাসে কি পরিমাণ অবৈধ লাইন রয়েছে তা চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। এ বিষয়টি এখন তিতাস গ্যাস এবং জ্বালানি বিভাগের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। কোনো প্রকার হিসাব ছাড়াই অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদে অভিযান চালাতে হচ্ছে আমাদের।

অনেক এলাকায় বৈধ লাইনের পর ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত অবৈধ লাইন চলে গেছে। এসব এলাকায় কিছু বৈধ গ্রাহক থাকলেও তাদের অনেকে লাইন চালুর পর একবারও বিল জমা দেননি। গজারিয়া এলাকায় প্রতিদিন ১৫ লাখ ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ হয়, যার মধ্যে সাড়ে ১৩ লাখ ঘনফুট গ্যাসের বিল আমরা পাইনা। কেবল নারায়ণগঞ্জ এলাকায় সরবরাহ করা গ্যাসের মধ্যে ছয় থেকে সাত কোটি ঘনফুট গ্যাসের বিল আমরা পাচ্ছি না।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)-এর সদস্য (গ্যাস) মকবুল-ই-এলাহি চৌধুরী, বাখরাবাদ গ্যাস বিতরণ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শঙ্কর মজুমদার, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মান্নান পাটওয়ারী, জালালাবাদ গ্যাস বিতরণ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুনুর রশীদ মোল্লাহ্, সুন্দরবন গ্যাস বিতরণ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মো. নাসির উদ্দিন, বিইআরসির সাবেক সদস্য আবদুল আজিজ খান এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আলী আহমেদ খান।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সাত দিনের সর্বাধিক পঠিত