স্টাফ রিপোর্টার: শেয়ারপ্রতি আয় কমেছে হাইডেলবার্গ সিমেন্ট বাংলাদেশ লিমিটেডের। প্রতিষ্ঠানটির তিন প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। পাশাপাশি, আয় কমলেও প্রতিষ্ঠানটির সাথে যোগ হয়েছে ‘মাল্টি পারপাস সিমেন্ট’ উৎপাদনের সুসংবাদ।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রকাশিত হাইডেলবার্গ সিমেন্টের তিন প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্র্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি থেকে মার্চ/২০২২) প্রতিষ্ঠানটির ইপিএস হয়েছে ২ টাকা ৯৭ পয়সা। আগের বছর একইসময়ে যা ৮ টাকা ২৩ পয়সা ছিল। অর্থাৎ, আগের তুলনায় আলোচ্য সময়ে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারপ্রতি ৫ টাকা ২৬ পয়সা আয় কমেছে। যা প্রায় সাড়ে ৬৪ শতাংশ।
আবার, দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল থেকে জুন/২০২২) হাইডেলবার্গের ইপিএস হয়েছে ৬৬ পয়সা। আগের বছর একইসময়ে যা ৩ টাকা ৫৬ পয়সা ছিল। অর্থাৎ, আগের তুলনায় প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারপ্রতি আয় ২ টাকা ৯০ পয়সা বা প্রায় সাড়ে ৮১ শতাংশ কমেছে।
একইভাবে, তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর/২০২২) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস হয়েছে ৬৪ পয়সা। আগের বছর একইসময়ে যা ১ টাকা ৯১ পয়সা ছিল। অর্থাৎ, আগের তুলনায় এ সময় প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারপ্রতি আয় কমেছে ১ টাকা ২৭ পয়সা। যা প্রায় সাড়ে ৬৬ শতাংশ।
অন্যদিকে, প্র্রথম প্রান্তিকে হাইডেলবার্গ সিমেন্টের শেয়ারপ্রতি নগদ অর্থ প্রবাহ বা এনওসিএফপিএস হয়েছে ১৯ টাকা ৮৪ পয়সা। আগের বছর একইসময়ে যা ৩৩ টাকা ১৭ পয়সা ছিল। এ সময় আগের তুলনায় প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারপ্রতি নগদ অর্থ প্রবাহ কমেছে।
কোম্পানিটির ৩১ মার্চ-২০২২ শেষে শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য বা এনএভিপিএস ৬৩ টাকা ৬৪ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। যা ৩১ ডিসেম্বর-২০২১ শেষে ৬৬ টাকা ৬০ পয়সায় ছিল।
আবার, দ্বিতীয় প্রান্তিক শেষে অর্ধবার্ষিক বা ৬ মাসে (জানুয়ারি থেকে জুন/২০২২) হাইডেলবার্গের শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ৩ টাকা ৬৩ পয়সা। আগের বছর একইসময়ে যা ১১ টাকা ৭৯ পয়সা ছিল। অর্থাৎ, আগের তুলনায় এ সময় প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারপ্রতি আয় কমেছে ৮ টাকা ১৬ পয়সা। যা ৬৯ শতাংশেরও বেশি।
আলোচ্য সময়ে (জানুয়ারি থেকে জুন/২০২২) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নগদ অর্থ প্রবাহ হয়েছে ৫ টাকা ৩৪ পয়সা। আগের বছর একইসময়ে যা ৫ টাকা ৭৩ পয়সা ছিল। সে হিসেবে আগের তুলনায় প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারপ্রতি নগদ অর্থ প্রবাহ কমেছে।
কোম্পানিটির ৩০ জুন-২০২২ শেষে শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য বা এনএভিপিএস ৬০ টাকা ৩৭ পয়সায় দাঁড়িয়েছে।
ততীয় প্রান্তিক শেষে অর্থাৎ, ৯ মাসে (জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর/২০২২) প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ৪ টাকা ২৭ পয়সা। আগের বছর একইসময়ে যা ৯ টাকা ৮৮ পয়সা ছিল। এ সময় আগের তুলনায় প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারপ্রতি আয় কমেছে ৫ টাকা ৬১ পয়সা বা প্রায় ৫৭ শতাংশ।
প্রতিষ্ঠানটির তিন প্রান্তিক মিলে (জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর/২০২২) শেয়ারপ্রতি নগদ অর্থ প্রবাহ হয়েছে ২ টাকা ৮৩ পয়সা। আগের বছর একইসময়ে যা ২২ টাকা ৫৭ পয়সা ছিল। সে হিসেবে আগের তুলনায় প্রতিষ্ঠানটির কমেছে শেয়ারপ্রতি নগদ অর্থ প্রবাহ।
৩০ সেপ্টেম্বর-২০২২ শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য বা এনএভিপিএস ৫৯ টাকা ৭৩ পয়সায় দাঁড়িয়েছে।
ইপিএস কমে যাওয়ার পেছনে কাঁচামালের উচ্চ মূল্যের বিপরীতে কম মূল্যে পণ্য বিক্রি এবং বিক্রয়-স্বল্পতাকে দায়ী করে প্রতিষ্ঠানটি। সেইসঙ্গে, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন, কোম্পানির প্লান্ট মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বেড়ে যাওয়ায় ইপিএস কমেছে বলে জানায় হাইডেলবার্গ।
প্রতিষ্ঠানটি আরো জানায়, কাঁচামালের উচ্চ মূল্যসহ সরবরাহজনিত পেমেন্ট বা খরচ বেড়ে যাওয়ায় শেয়ারপ্রতি নগদ অর্থ প্রবাহ কমেছে। পাশাপাশি- প্র্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রান্তিক শেষে নেট ক্ষতির নেতিবাচক প্রভাব এবং বর্তমান আর্থিক দায় বা ঋণের উচ্চ ভারসাম্যের কারণে শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য কমেছে বলেও জানায় এ কোম্পানি।
তবে, ইপিএস কমলেও ২০২১ সালে কোম্পানিটির নিট মুনাফা হয়েছে ৪৭ কোটি ৫২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এর বিপরীতে, ২০২০ সালে ৪৯ লাখ ২০ হাজার টাকার নিট লোকসানে ছিল প্রতিষ্ঠানটি।
সিমেন্ট খাতের এ কোম্পানির স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী মিলে ৭৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ব্যাংক ঋণ রয়েছে। এরমধ্যে স্বল্পমেয়াদী ঋণের পরিমাণ ৩১ কোটি ৩২ লাখ টাকা। আর, দীর্ঘমেয়াদী ঋণের পরিমাণ ৪৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।
প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারদর ২০২২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর থেকে অপরিবর্তিত রয়েছে। অর্থাৎ, চলতি ২০২৩ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দীর্ঘ ৫ মাস ধরে ১৭৯ টাকা ১০ পয়সায় আটকে আছে শেয়ারটির দর।
হাইডেলবার্গের শেয়ারদরের গত ৬ মাসের গ্রাফ বিশ্লেষণে এমনটা দেখা গেছে।
তবে, পুঁজিববাজারে ১৯৮৯ সালে তালিকাভুক্ত হাইডেলবার্গ সিমেন্ট কোম্পানির গত ১ বছরের গ্রাফ অনুযায়ী, ৭ মাসের ব্যাবধানে ১২১ টাকা ৭০ পয়সা দর কমেছে শেয়ারটির। অর্থাৎ, ২০২২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি শেয়ারটির সর্বশেষ দর বা ক্লোজিং প্রাইস ছিল ৩০০ টাকা ৮০ পয়সা। একই বছরের ২১ সেপ্টেম্বর তা ১৭৯ টাকা ১০ পয়সায় নেমে আসে। যদিও ২৮ জুলাই শেয়ারটির দর সর্বনিম্ন ১৭৩ টাকা ৫০ পয়সায় নেমেছিল।
এদিকে, হাইডেলবার্গ সিমেন্টের স্বনামধম্য ব্র্যান্ড রুবি সিমেনেন্টর নতুন ক্যাটাগরি ‘মাল্টি পারপাস সিমেন্ট’ বাজারে আনার ঘোষণা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। অর্ডিনারি পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট ও পোর্টল্যান্ড কম্পোজিট সিমেন্টের সঙ্গে বাজারে পাওয়া যাবে প্রতিষ্ঠানটির মাল্টি পারপাস সিমেন্টও।
নতুন ক্যাটাগরির মাল্টি পারপাস সিমেন্ট মূলত একটি কার্যকরী সিমেন্ট। স্থাপনার ফাউন্ডেশন, ঢালাই, বিম, কলাম, প্লাস্টারসহ সিমেন্টের নানা কাজে ব্যবহার করা যায় এই মাল্টি পারপাস সিমেন্ট।
মাল্টি পারপাস সিমেন্টের স্ট্রেংথ ২.৫ এমপিএ থেকে ৬২.৫ এমপিএ হওয়ায় সার্বিকভাবে কংক্রিটকে এটি দীর্ঘমেয়াদী করে তোলে।
হাইডেলবার্গ কর্তৃক চট্টগ্রামের পেনিনসুলা হোটেলে সম্প্রতি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে রুবি মাল্টি পারপাস সিমেন্টের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। কোম্পানির সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং ডিরেক্টর সায়েফ নাসির, ডিভিশনাল সেলস হেড জনাব মীর শামসুদ্দিন আহমেদ, প্রতিষ্ঠানটির অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
কোয়ালিটির জন্য রুবি সিমেন্ট সর্বদাই মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য এবং সুপরিচিত একটি নাম বলে অনুষ্ঠানে সায়েফ নাসির জানান। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলের ব্যবহারকারীদের একটি আস্থার নাম হিসেবে রুবি সিমেন্ট রয়েছে দীর্ঘ ৫০ ধরে। এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে চট্টগ্রামবাসীর বিশ্বাস এবং ঐতিহ্য।
সায়েফ নাসির বলেন, যেকোনো স্থাপনা বিনির্মাণে এটি ব্যবহারযোগ্য। আর, নির্মাণ-শক্তি ক্রমাগত বাড়তে থাকাটা রুবি সিমেন্টের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।