সকল মেনু

সুকুক বন্ড ছাড়বে সরকার

স্টাফ রিপোর্টার: স্বল্পমেয়াদি সুকুক বন্ড ইস্যু করবে সরকার। এর মাধ্যমে ট্রেজারি বিলের চেয়ে কম খরচে অর্থ সংগ্রহ করা হবে। তবে এসব বন্ডের মেয়াদ ঠিক কত দিন হবে, সে বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

এ ছাড়া সুকুক ইস্যুর সঙ্গে সম্পৃক্ত অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বাস্তবভিত্তিক জ্ঞান না থাকায় এ কার্যক্রমের সফলতা নিয়ে সংশয়ে রয়েছে সরকারের নগদ ও ঋণ ব্যবস্থাপনা কমিটি (সিডিএমসি)। তাই সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তাদের বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্তও হয়েছে।

সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সিডিএমসির বৈঠকে অর্থ বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়, সরকার অর্থ সংগ্রহে বর্তমানে দীর্ঘমেয়াদি সুকুক ইস্যু করছে। এর মাধ্যমে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডোগুলো সরকারি এই সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করতে পারছে। দীর্ঘমেয়াদি সুকুকের পাশাপাশি স্বল্পমেয়াদি সুকুক ইস্যু করা সম্ভব হলে ট্রেজারি বিলের চেয়ে কম খরচে তাৎক্ষণিকভাবে সরকারের অর্থের সংস্থান হবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বৈঠকে স্বল্পমেয়াদি সুকুক ইস্যুর নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বাজেটের ঘাটতি মেটাতে সাধারণত ব্যাংক ঋণ, ট্রেজারি বিল-বন্ড ইস্যু, সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভর করে সরকার। বিভিন্ন সময় দেশের নাগরিক বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে এর বিপরীতে তাদের নামে ট্রেজারি বিল ও বন্ড ইস্যু করা হয়। ট্রেজারি বিলের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৩৬৪ দিনের জন্য ঋণ নেওয়া হয়। আর ট্রেজারি বন্ডগুলোর মেয়াদ দুই থেকে ২০ বছর।

গত জানুয়ারি মাসে ট্রেজারি বিলের সর্বোচ্চ সুদহার ছিল ৮ শতাংশ। আর ট্রেজারি বন্ডে ৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এগুলো সুদভিত্তিক হওয়ায় দেশের ইসলামী ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করতে পারে না। তাই শরিয়াহভিত্তিক ইসলামী বন্ড ‘সুকুক’ ইস্যু করে সরকার। সুকুকে বিনিয়োগকারীও লভ্যাংশ পান। এই বিনিয়োগের বিপরীতে সুদ থাকে না।

প্রসঙ্গত, ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকার নিরাপদ পানি সরবরাহের একটি প্রকল্পে আট হাজার কোটি টাকার সুকুক বন্ড ইস্যু করেছিল। পরের বছর আরও ১০ হাজার কোটি টাকার সুকুক বন্ড ইস্যু করা হয়। যার মধ্যে পাঁচ হাজার কোটি টাকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হয়।

বর্তমানে ইস্যু করা সুকুকের ৮৫ শতাংশে বিনিয়োগ করতে পারে শরিয়াহভিত্তিক ইসলামী ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বীমা কোম্পানি। ১০ শতাংশে বিনিয়োগ করতে পারে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ইসলামিক শাখা ও উইন্ডোজ। বাকি ৫ শতাংশে বিনিয়োগের সুযোগ থাকে সাধারণ মানুষের।

সিডিএমসির বৈঠকে বলা হয়, বর্তমানে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোতে নগদ অর্থের সংকট দেখা যাচ্ছে। তাই সুকুক বন্ডে বিনিয়োগ আশানুরূপ নাও হতে পারে। এমন প্রেক্ষাপটে ইসলামী ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডোগুলোর পাশাপাশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে সরাসরি সুকুক বন্ড কেনার সুযোগ দেওয়ার বিষয়েও আলোচনা হয়। কিন্তু সরকারের অন্যান্য বন্ডে ইসলামী ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগে সুযোগ না থাকায় সুকুকে অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের সরাসরি বিনিয়োগের সুযোগ রাখা হয়নি। তবে ইসলামী ব্যাংকগুলো যদি ইস্যু করা সুকুকে বিনিয়োগ না করে তাহলে ওই অংশে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগে সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশি-বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে সরকারকে ব্যয় করতে হয়েছে ৭৭ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকা, যা পরিচালন বাজেটের ২৭ শতাংশ। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৮০ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা।

অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে দেশি-বিদেশি ঋণে সরকারের সুদ পরিশোধ আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৫ শতাংশ বেড়ে ২৮ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। আগামীতে তা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই সরকার কম খরচের স্বল্পমেয়াদি সুকুক ছেড়ে অর্থ সংগ্রহের কথা ভাবছে।

সিডিএমসির বৈঠকে বলা হয়, অর্থ বিভাগের ঋণ ব্যবস্থাপনা অধিশাখা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেট ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তাদের সুকুক বিষয়ে বাস্তবিক কোনো জ্ঞান নেই। তাঁরা বইয়ের তাত্ত্বিক জ্ঞানে সুকুক ইস্যুর যাবতীয় কার্যক্রম সম্পাদন করছেন। তাই সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তাদের সুকুক কার্যক্রমে ব্যবহারিক জ্ঞান আহরণের জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top