Homeডিএসই/সিএসইদরপতনের প্রতিবাদ, ১২ দফা দাবিতে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি

দরপতনের প্রতিবাদ, ১২ দফা দাবিতে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি

স্টাফ রিপোর্টার: শেয়ারবাজারে ভয়াবহ দরপতনের প্রতিবাদে মতিঝিলের রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। মতিঝিলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) আগের কার্যালয়ের সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান করে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ।

শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরুর পর দরপতন দেখা দিলে দুপুর পৌনে ১টার দিকে ব্রোকারেজ হাউজ ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসেন বিনিয়োগকারীরা। শেয়ারবাজারে চলমান দরপতনের প্রতিবাদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর ১২ দফা দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

‘বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ’র পক্ষ থেকে রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে এ স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিবের কার্যালয়ে দায়িত্বরত একজন কর্মকর্তা স্মারকলিপি গ্রহণ করেছেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক।

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, গত কয়েক বছরে রাজস্ব খাতের আয়, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিপুল মুনাফা অর্জন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে পুঁজিবাজার যে বিশেষ অবদান রেখেছে সেজন্য আপনার সরকার বিশ্বব্যাপী সুনাম অর্জন করেছে। কিন্তু আজ সেই পুঁজিবাজার অবহেলিত এবং গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার।

প্রধানমন্ত্রী বরাবর দেওয়া স্মারকলিপিতে যেসব দাবি জানানো হয়েছে-

  • অনিয়ম ও দুর্নীতিমুক্ত স্মার্ট পুঁজিবাজার গঠন করা।
  • পুঁজিবাজারের চলমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সহজ শর্তে অর্থাৎ ৩ শতাংশ সুদে ১০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া, যা আইসিবি (ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ) বিভিন্ন মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকার হাউজিংয়ের মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ৫ শতাংশ হার সুদে ঋণ হিসেবে বিনিয়োগের সুযোগ পাবেন।
  • পুঁজিবাজারের বন্ড ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগ এক্সপোজার লিমিটেডের বাইরে রাখার বিষয়ে দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারি করা।
  • বাজার স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত চলমান ফ্লোর প্রাইজ বহাল রাখা, ফোর্সসেল বন্ধ রাখা এবং সব প্রকার আইপিও ও রাইট শেয়ার ইস্যু বন্ধ রাখা।
  • লভ্যাংশের ওপর থেকে ট্যাক্স সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা। কোম্পানিগুলো লভ্যাংশ ঘোষণার আগে সরকারকে অগ্রিম যে ট্যাক্স দিয়ে থাকে সেটাকে চূড়ান্ত ট্যাক্স হিসেবে গণ্য করা।
  • পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত অনেক কোম্পানি ভালো মুনাফা করা সত্ত্বেও উপযুক্ত লভ্যাংশ দিতে গড়িমসি করে। কোম্পানিগুলোর নিট মুনাফার ন্যূনতম ৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ হিসেবে শেয়ারহোল্ডারদের দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া।
  • তালিকাভুক্ত কোম্পানি এবং অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হারের পার্থক্য ১৫ শতাংশ করা।
  • পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতার বৃহত্তর স্বার্থে ‘বাইব্যাক আইন’ পাস করা। কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদকে ইস্যুমূল্যে অথবা এনএভি’র ৫ শতাংশের কম এ দুটির মধ্যে যেটি বেশি হবে সেই মূল্যে শেয়ার বাইব্যাক করতে হবে।
  • অপ্রদর্শিত অর্থ ৫ শতাংশ কর প্রদান করে বিনা শর্তে শুধু পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া।
  • মহামান্য হাইকোর্ট কর্তৃক নির্দেশিত কোম্পানি আইনের টুসিসি ধারা মোতাবেক শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিটি কোম্পানির পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ এবং ব্যক্তিগতভাবে ২ শতাংশ শেয়ার ধারণে বাধ্য করা।
  • পুঁজিবাজারের সুশাসন ও স্থিতিশীলতার জন্য ভবিষ্যতে কোনো কোম্পানিকে আইপিওর মাধ্যমে টাকা তুলতে হলে কমপক্ষে পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশ শেয়ার আপলোড করার বিধান রাখা।
  • কারসাজি বন্ধে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে বিএফআইইউয়ের মতো একটি নতুন ইউনিট চালু করা। যেখানে ডিজিএফআই, এনএসআই, এসবির কর্মকর্তারা সংযুক্ত থাকবেন এবং যা সরাসরি কমিশনের চেয়ারম্যান নেতৃত্বাধীন থাকবে।

‘বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ’র ব্যানারে এ কর্মসূচি পালিত হয়। মতিঝিলের রাস্তায় শান্তিপূর্ণ অবস্থান শেষে বিনিয়োগকারীদের একটি প্রতিনিধি দল ১২ দফা দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উদ্দেশে রওয়ানা হয়।

এদিন সূচকের সঙ্গে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দরপতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এ নিয়ে টানা পঞ্চম দিন দরপতন অব্যাহত আছে।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ২৩ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ১৮২ পয়েন্টে অবস্থান করছে। ডিএসই শরিয়া সূচক ৫ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৩৫০ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ৬ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ২১৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

ডিএসইতে মোট ২৮৪টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে শেয়ারের দাম বেড়েছে ৪টি কোম্পানির। দরপতন হয়েছে ১৪৯টি কোম্পানির। অপরিবর্তিত আছে ১৩১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দর। ডিএসইতে মোট ২৩১ কোটি ৪১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২২২ কোটি ৯৯ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট।
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সাত দিনের সর্বাধিক পঠিত