সিনিয়র রিপোর্টার: আরও খারাপ হচ্ছে শেয়ারবাজার পরিস্থিতি। প্রতিদিনই দর হারাচ্ছে সিংহভাগ শেয়ার। গতকালও দরপতন হয়েছে। লেনদেন নেমেছে তলানিতে। দরপতন থেকে বাঁচতে সব শেয়ারের দরে ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন দরসীমা আরোপ করেছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।
গুঞ্জন উঠেছে, ফ্লোর প্রাইস তুলে দিতে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। যদিও নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়নি।
একাধিক শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউস কর্মকর্তা জানান, ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া হচ্ছে- এমন গুঞ্জন বহুদিনের। তবে গত কিছুদিনে গুঞ্জনটি বেশ ডালপালা মেলেছে। শীর্ষস্থানীয় এক ব্রোকারেজ হাউসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, এবারের গুঞ্জনটি অন্যবারের তুলনায় আলাদা।
জানা গেছে, সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিএসইসির চেয়ারম্যানের সাক্ষাৎ হবে। সম্ভাব্য এ বৈঠক ঘিরে বাজারে নানা আলোচনা ছিল।
কয়েকজন ব্রোকার জানান, ‘রক্ষাকবচ’ হবে ভেবে বিএসইসি ফ্লোর প্রাইস দিয়েছিল। এখন এই ফ্লোর প্রাইসই সবার জন্য ‘মরণফাঁদ’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শোনা যাচ্ছে, ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করা হলেও আদর্শ বা স্ট্যান্ডার্ড সার্কিট ব্রেকার কার্যকর করা হবে না। এর পরিবর্তে সব শেয়ারের সার্কিট ব্রেকার ৩ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হতে পারে।
প্রসঙ্গত, অব্যাহত দরপতনের মুখে গত বছরের ২৮ জুলাই তালিকাভুক্ত সব শেয়ারের দরে দ্বিতীয় দফায় ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে বিএসইসি। এতে হিতে বিপরীত হওয়ায় চার মাস পর গত ২৮ নভেম্বর ১৬৭ শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের দর থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয় বিএসইসি। এর পর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।
ফ্লোর প্রাইসের কারণে সিংহভাগ শেয়ারের লেনদেন তলানিতে নামায় আয় ব্যাপক হারে কমেছে ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের। ফলে সংশ্নিষ্ট পক্ষগুলো থেকে বিএসইসির ওপর ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার চাপ বেড়েছে। বৃহস্পতিবার একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক খবরে বিএসইসির চেয়ারম্যান জানিয়েছিলেন, বাজার নিয়ে এ সপ্তাহে কিছু পদক্ষেপ নেবেন। তবে কী পদক্ষেপ নেবেন, তা তিনি পরিস্কার করেননি।
এ বিষয়ে জানতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার একাধিক শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ফোন করা হয়। তবে তাঁরা সাড়া দেননি।
অবশ্য বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম বলেন, এটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত হওয়ার আগে এ বিষয়ে কিছু জানার সুযোগ নেই। সোমবার কমিশন সভা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তিনি।
আর কমিশন চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা রাশেদুল আলম জানান, সকাল সাড়ে ৯টায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতের সাক্ষাৎ হওয়ার কথা রয়েছে।
বর্তমানে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড ৩৯০টি। গত ২৮ নভেম্বর কিছু শেয়ার থেকে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের পর এখনও ২২২ শেয়ারে ফ্লোর প্রাইস কার্যকর আছে। গতকাল ১৭৯ শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে আটকে ছিল। অনেক দিন ধরে এসব শেয়ারে তেমন লেনদেন নেই।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিনই ডিএসইতে প্রায় ৩০০ কোম্পানির শেয়ার কেনাবেচা হচ্ছে। তবে লেনদেনের সিংহভাগ ঘিরে থাকছে ২০ থেকে ২৫টি শেয়ার। রোববার ডিএসইতে ২৮৪ শেয়ারের ২৩১ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। তবে এর মধ্যে শীর্ষ ২০ শেয়ারের লেনদেন মূল্য ছিল ১৬৯ কোটি টাকা, যা মোটের ৭৩ শতাংশ।
আর ক্রেতার অভাবে ডিএসইতে রোববার ১০৬ শেয়ার ও ফান্ডের কোনো কেনাবেচাই হয়নি। যে ২৮৪ শেয়ারের কেনাবেচা হয়েছে, তার মধ্যে লেনদেনের শেষাংশে এসে ২২৭টির ক্রেতা ছিল না। সিএসইতে তালিকাভুক্ত ৩৭০ শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ২৭০টিরই কেনাবেচা হয়নি।
শেয়ারবাজারে দরপতন এমন মাত্রায় পৌঁছেছে, দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০ তালিকাও করা যায়নি গত দুই কার্যদিবস। গেল বৃহস্পতিবার ঢাকার শেয়ারবাজারে মাত্র সাতটি শেয়ারের দর বেড়েছিল। রোববার তা চারটিতে নেমেছে।
বিপরীতে দর হারিয়েছে ১৪৯টি এবং অপরিবর্তিত ছিল ১৩১টির দর। সিএসইতে কেনাবেচা হওয়া ১০০ শেয়ারের মধ্যে মাত্র দুটির সামান্য দর বেড়েছে, কমেছে ৫২টির দর। এ বাজারে মোটে ৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে, যার ২ কোটি ২৯ লাখই ছিল ব্লক মার্কেটে।
অব্যাহত দরপতনের মুখে রোববার প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ২৩ পয়েন্ট হারিয়ে ৬১৮২ পয়েন্টে নেমেছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।