সিনিয়র রিপোর্টার: মিথুন নিটিং অ্যান্ড ডায়িং লিমিটেডের উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা তাদের ধারণকৃত ১৩.১৮ শতাংশ শেয়ার বেসিক ব্যাংকের কাছে বন্ধক রেখে ঋণ নিয়েছে। পরবর্তীতে তা পরিশোধ করতে না পারায় খেলাপি হলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কাছে বন্ধক রাখা শেয়ার অধিগ্রহণের অনুমতি চেয়ে আবেদন জানায় ব্যাংকটি।
আর কোম্পানিটির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের এমন কার্যক্রম সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন হতে পারে বলে মনে করছে বিএসইসি। তাই বিষয়টি খতিয়ে দেখে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের বিরুদ্ধে কমিশন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে জানা গেছে।
এরই ধারাবাহিকতায় মিথুন নিটিং অ্যান্ড ডায়িংকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রাসঙ্গিক নথির সঙ্গে অবস্থান ব্যাখ্যা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে কোম্পানিটিকে একটি প্রস্থান পরিকল্পনা জমা দিতে বলা হয়েছে। সম্প্রতি এ বিষয়ে জানিয়ে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর চিঠি দিয়েছে বিএসইসি।
এর আগে, খেলাপি ঋণগ্রহীতা কোম্পানিটির ১০ শতাংশের বেশি বন্ধক শেয়ার অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের আইনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শেয়ার অর্জন, অধিগ্রহণ ও কর্তৃত্ব গ্রহণের বিষয়ে প্রাসঙ্গিক শর্ত মেনে চলার বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন জানায় বেসিক ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
আর ওই আবেদনের বিষয়ে উল্লেখ করে কোম্পানিকে দেওয়া চিঠিতে বিএসইসি উল্লেখ করেছে, দেখা যাচ্ছে যে পরিচালনা পর্ষদ এবং উদ্যোক্তারা ৩ জুলাই ২০১১ থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ পর্যন্ত তাদের ধারণকৃত মোট ১৭.২০ শতাংশ শেয়ারের মধ্যে ১৩.১৮ শতাংশ শেয়ার বন্ধক রেখে সময় সময়ে মিথুন নিটিং এবং এর সহযোগী কোম্পানির জন্য ঋণ নিয়েছে।
বর্তমানে উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা ঋণ খেলাপি হওয়ার কারণে সেই শেয়ার বাজেয়াপ্ত করার জন্য ডিএসই এবং বিএসইসির কাছে আবেদন জানিয়েছে বেসিক ব্যাংক। আবেদন অনুযায়ী বাজেয়াপ্তকরণের ফলে উদ্যোক্তা এবং পরিচালকদের সব শেয়ার বাজারে চলে যাবে এবং পর্ষদের কাছে কোম্পানির বাকি ৪.২ শতাংশ শেয়ার থাকবে।
কোম্পানির উদ্যোক্তা এবং পরিচালকদের এই ধরনের কার্যকলাপে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ এর ধারা ১৭ (এ) লঙ্ঘন হতে পারে। ফলে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ এর ধারা ২৪ এর অধীনে কমিশন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, তাই এই বিষয়ে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদকে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর ধারা ১১ (২) এর অধীনে প্রাসঙ্গিক নথির সঙ্গে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে নির্দেশ দেওয়া হলো। একই সঙ্গে এ চিঠি জারির সাত কার্যদিবসের মধ্যে একটি এক্সিট পরিকল্পনা জমা দিতে বলা হলো।
প্রসঙ্গত, মিথুন নিটিং অ্যান্ড ডায়িং পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ১৯৯৪ সালে। ‘জেড’ ক্যাটাগরির এ কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন ৮০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ৩২ কোটি ৪৯ লাখ ১০ হাজার টাকা।
সে হিসেবে কোম্পানিটির মোট শেয়ার ৩ কোটি ২৪ লাখ ৯১ হাজার ১৬২টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে ১৭.২০ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ১৬.৯৩ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৬৫.৮৭ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
দেনার দায়ে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়া মিথুন নিটিং অ্যান্ড ডায়িং লিমিটেডের যন্ত্রপাতিসহ পুরো কারখানা নিলামে বিক্রি করে দিয়েছে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেপজা)।
সোমবার (৫ জুন) শেয়ার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ১৫.৬০ টাকায়।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।