সকল মেনু

ব্যাংকের অর্থ লোপাট করায় বিপাকে কর্মকর্তারা

সিনিয়র রিপোর্টার: ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠানকে ঋণ, তথ্য গোপন, খেলাপি নিয়ে নয়ছয়, এবং জামানত ছাড়াই অর্থ ছাড়ে মত্ত উত্তরা ব্যাংক লিমিটেড। নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছেন উত্তরা ব্যাংকের চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে মাঝারি মানের কর্মকর্তারাও।

বেনামি প্রতিষ্ঠানকে ঋণ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের অবৈধ সুবিধা, চেয়ারম্যানের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে গাড়ি কেনাসহ নানা অনিয়মের কারণে আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে বেসরকারি খাতের ব্যাংকটি। এর প্রমাণও পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন দল। এ জন্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে উত্তরা ব্যাংকের এমডির মাসিক বেতন ১৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে মূল বেতন, বাসা ভাড়া, বাবুর্চি, গার্ড, সার্ভিস চার্জ, পুনঃ ভরণ ভাতা, বাসা মেরামত, আসবাবপত্র, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, টেলিফোন বিল, ঈদের ভাতা এবং জিপ গাড়ির খরচ অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু এর বাইরেও তিনি ২০১৮, ’১৯, ’২০, ’২১ ও ’২২ সালে করোনাকালীন ভাতা, স্পেশাল বোনাস এবং বৈশাখী বোনাস গ্রহণ করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাননি।

এ ছাড়া ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত চিকিৎসা বাবদ তিনি ২৪ লাখ ২৯ হাজার ৪৫৩ টাকা ব্যাংক থেকে গ্রহণ করেছেন। কিন্তু আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী যত টাকা রাজস্ব দেওয়ার কথা তা পরিশোধ করেননি। শুধু তাই নয়, বাসায় কুক, গার্ড, সার্ভিস ইত্যাদির জন্য ব্যাংক থেকে নেওয়া ২ লাখ ৬৩ হাজার ৫৩৮ কোটি এবং লিভ ফেয়ার অ্যাসিস্ট্যান্স বাবদ নেওয়া ১৭ লাখ ৬০ হাজার টাকার বিপরীতে কোনো রাজস্ব দেননি এমডি।

তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে হাতিয়া শাখা ও উপ-শাখার যাচাই, আগস্ট মাসে হাতিয়া বাজার উপ-শাখা উদ্বোধন, অক্টোবরে শাখা ব্যবস্থাপক সম্মেলনে উপস্থিত ও বিরিঞ্চী শাখা স্থানান্তর, ডিসেম্বর মাসে পাবনার আট ঘরিয়া উপ-শাখা ও হাতিয়া শাখা উদ্বোধনের বিল সমন্বয়ে জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে উত্তরা ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, এক্সিকিউটিভ কমিটির অনুমোদন এবং ব্যাংকটির এইচআর পলিসি অনুযায়ী এসব ক্ষেত্রে হোটেলে অবস্থান করার জন্য হোটেল ভাড়া বাবদ ৬ হাজার টাকা সর্বোচ্চ বা প্রকৃত খরচ পাবেন কর্মকর্তারা। এ ক্ষেত্রে বিল সমন্বয়ের জন্য অবস্থানকৃত হোটেলের বিলের মূল কপি জমা দিতে হবে। কিন্তু উত্তরা ব্যাংকের জোনাল অফিসের কর্মকর্তারা কম্পিউটার প্রিন্টের কপি গ্রহণ করে বিলটি সমন্বয় করেছেন।

এটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি পরিপন্থী। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে ওই সব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি ভবিষ্যতে এ ধরনের অনিয়মের পুনরাবৃত্তি রোধে সতর্কও করা হয়েছে।

এসব অনিয়মে কি ধরনের শাস্তি হতে পারে জানতে চাইলে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ও মেঘনা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল আমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, এটি একটি নৈতিকস্থলন।

ঘটনায় যদি প্রমাণসহ ধরা পড়ে যে তারা এই অনৈতিকতার সঙ্গে জড়িত, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে যে কোন প্রশাসনিক ব্যবস্থা ব্যাংক নিতেই পারে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংক টাকা সঙ্গে সঙ্গে ফিরত পাওয়া বা তার বেতন থেকে কেটে রাখতে পারে। পাশাপাশি অন্য ব্যবস্থাও গ্রহণ করতে পারে।

এদিকে, উত্তরা ব্যাংকের সিএফওর আয়কর পরিশোধে অনিয়মের বিষয়টিও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরে এসেছে। নিয়োগের শর্ত অনুযায়ী, উত্তরা ব্যাংকের সিএফও ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত ইউটিলিটি বিল ও ড্রাইভারের ভাতা বাবদ তিনি ব্যাংক থেকে ৩ লাখ টাকা নিয়েছেন। এসব অর্থের বিপরীতে তিনি কোন আয়কর পরিশোধ করেননি। পাশাপাশি আয়কর হিসাবে এসব তথ্যও উল্লেখ করেননি। এটি আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর ধারা ২১ এবং আয়কর বিধিমালা, ১৯৮৪ এর বিধি ৩৩ স্পষ্ট লঙ্ঘন।

যদিও এর জবাবে তিনি পরবর্তী অর্থবছরে ইউটিলিটি বিলের আয়কর সমন্বয়ের বিষয়ে আইনজীবীকে অবহিত করেছে বলে জানিয়েছেন। আর প্রতিষ্ঠান থেকে গাড়ি প্রদান করায় ড্রাইভারের মূল বেতনের ৫ শতাংশ করযোগ্য আয় দেখিয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ জন্য ড্রাইভারের বেতন আয়কর যোগ্য নয় বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উত্তরা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রবিউল হোসেন বলেন, জোনাল অফিস থেকে যেসব বিল দেওয়া হয়েছে সেগুলো গ্রহণ করা হয়েছে। যদি হেড অফিস থেকে এ ধরনের বিল করা হতো তাহলে সেটি অন্যায় হতো। তবুও ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের বিল না গ্রহণ করা হয় সেই দিকে নজর দেওয়া হবে।

এছাড়া এমডি হিসেবে তার অন্যান্য ভাতা গ্রহণের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বৈশাখী ভাতা সরকার ঘোষণা করা একটি ভাতা। আমি ওই ভাতা নেওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রশ্ন করা হয়েছিল। কারণ এমডিরা কোন ভাতা নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকে জানাতে হয়। সরকার ঘোষিত ভাতা বলে আমরা জানাইনি। সব এমডিরাই এই ভাতা গ্রহণ করেছেন। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রশ্ন তোলায় আমি সে ভাতার অর্থ ফেরত দিয়েছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top