সকল মেনু

এমারেল্ড অয়েল ও ফু ওয়াং ফুডসের দুরন্ত ছুটে চলা

স্টাফ রিপোর্টার: মিনোরি বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে থাকা দুটি কোম্পানি পুঁজিবাজারে একেক সময় একেক খাতের শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের মধ্যে বিস্ময় জাগাচ্ছে। গত তিন মাসে এমারেল্ড অয়েলের শেয়ারদর বেড়ে হয়েছে পাঁচ গুণ। এবার যোগ হয়েছে আরেক কোম্পানি ফু ওয়াং ফুডস।

ঈদের আগেও ফ্লোর প্রাইসে এই কোম্পানির ক্রেতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। সেই কোম্পানির শেয়ার পরপর তিন দিন লেনদেন হল দর বৃদ্ধির সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়ে। কেবল চার দিনে দর বেড়েছে ৩৬ শতাংশের বেশি।

বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে এই একটি কোম্পানির শেয়ারদরই সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়ে লেনদেন হয়েছে। দর বাড়ছে এমারেল্ডেরও। এপ্রিলের শুরুতে যে কোম্পানির শেয়ারের দর ছিল ৩০ টাকা, সেটি এখন দাঁড়িয়েছে ১৬৫ টাকা ২০ পয়সায়। দর বৃদ্ধির শীর্ষ দশে এদিন ফু ওয়াং ফুডসের অবস্থান ছিল প্রথমে আর এমারেল্ডের পঞ্চমে।

৮৫টি কোম্পানির শেয়ারের দর বৃদ্ধি এবং ১১৮টির পতনের দিন সূচক অনেকটা আগের দিনের অবস্থানেই ছিল। কমেছে কেবল ১.৩৫ পয়েন্ট। লেনদেন কিছুটা বাড়লেও তা আগের দিনের কাছাকাছিই ছিল। দিনভর হাতবদল হয়েছে ৮৯৯ কোটি ২৫ লাখ ৪ হাজার টাকা। আগের দিন লেনদেন কয়েক লাখ টাকা কম ছিল।

দুই কোম্পানির দুরন্ত ছুটে চলা: বেসিক ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারিতে বন্ধ হয়ে যাওয়া এমারেল্ড অয়েলের পর্ষদে এসে গত বছর কোম্পানিটি চালু করে মিনোরি বাংলাদেশ। চলতি বছর গত পাঁচ বছরের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।

চার বছরের বিপুল পরিমাণ লোকসানের কারণে লভ্যাংশ দেয়নি কোম্পানিটি। তবে ২০২২ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য শেয়ারপ্রতি ২০ পয়সা এবং সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে মার্চ পর্যন্ত তৃতীয় প্রান্তিকের জন্য ৫০ পয়সা অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে কোম্পানিটি।

এর আগে আগে এপ্রিলের শুরু থেকে দর বাড়া শুরু হয়। এই সময়ে অন্য অনেক কোম্পানির দর বেড়ে আবার কমেছে। তবে এমারেল্ডের দর বৃদ্ধি থামছে না।

খাদ্য খাতের আরেক কোম্পানি ফু ওয়াং ফুডসেরও নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে মিনোরি। গত বছর শেয়ারপ্রতি ২ টাকা ২৬ পয়সা লোকসান দিয়েছিল কোম্পানিটি। গত মার্চে তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত তারা মুনাফা দেখিয়েছে শেয়ারপ্রতি ১৭ পয়সা।

গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর থেকে কোম্পানির শেয়ারদর তার ফ্লোর প্রাইস ২৩ টাকা ৫০ পয়সা থেকে উঠতে পারেনি। এই দরে শেয়ারের ক্রেতা ছিল খুবই কম। বরং ব্লক মার্কেটে ১০ শতাংশ ছাড়েও শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

গত ৩ জুলাই হঠাৎ করে ২ কোটি ৩৬ লাখ শেয়ার হাতবদল হয় কোম্পানিটির। সেদিন দর বাড়ে ৬০ পয়সা। এর পরের তিন দিন যথাক্রমে ১ কোটি ৬৫ লাখ ২ কোটি ২ লাখ ও ১ কোটি ৭২ লাখ শেয়ার লেনদেন হল।প্রতিদিনই দাম বাড়ল ১০ শতাংশ ছুঁই ছুঁই। তিন দিনই দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় উঠে আসে কোম্পানিটি।

লেনদেনের শীর্ষে ফের বস্ত্র, বীমা এবার তৃতীয়: আগের দিনের তুলনায় কিছুটা কমলেও লেনদেনে বস্ত্র খাতের অবস্থান এদিনও ছিল শীর্ষে। মোট লেনদেনের ২৫ শতাংশের বেশি হয়েছে এই একটি খাতেই। সারাদিনে হাতবদল হয়েছে ১৮৮ কোটি টাকার শেয়ার। আগের দিন লেনদেন ছিল দুইশ কোটি টাকার কিছু বেশি।

তবে আগের দুই দিনের মত দর বাড়েনি এই খাতে। সাতটি কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে দর হারিয়েছে ২৭টি কোম্পানি। আগের দিনের দরে হাতবদল হয়েছে ২৪টি কোম্পানি। দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাত। হাতবদল হয়েছে ১০৭ কোটি টাকা। দর বেড়েছে আটটি কোম্পানির, কমেছে ১১টির। দুটি কোম্পানি লেনদেন হয়েছে আগের দিনের দরে।

দুই মাসের বেশি সময় লেনদেনের শীর্ষে থাকা বীমা খাত এবার নেমেছে তিনে। এই খাতের দুই ধরনের কোম্পানির মধ্যে জীবন বীমায় আগ্রহ এদিনও ছিল বেশি। তবে শেয়ারদর বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির।

জীবন বীমার ১৫টি কোম্পানিতে হাতবদল হয়েছে ৭২ কোটি টাকার বেশি। বেড়েছে ৯টির দর, কমেছে দুটির আর চারটি কোম্পানি হাতবদল হয়েছে আগের দিনের দরে। সাধারণ বীমার ৪২টি কোম্পানিতে হাতবদল হয়েছে ১৭ কেটি ৮০ লাখ টাকা। দর বেড়েছে ২৬টি কোম্পানির, কমেছে ৯টির আর আগের দিনের দরে হাতবদল হয়েছে ছয়টি কোম্পানি। ক্রেতা ছিল না একটির।

প্রকৌশল খাতে ৭৪ কোটি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে হাতবদল হয়েছে প্রায় ৬৪ কোটি টাকা। অন্য কোনো খাতে ৫০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়নি।

দর বৃদ্ধির শীর্ষে একক খাতের প্রাধান্য নেই: আগের দিনের মত এই তালিকায় বস্ত্র খাতের প্রাধান্য দেখা যায়নি। কেবল একটি কোম্পানি ছিল এ খাতের।

শীর্ষ দশে মিনোরির দুই কোম্পানি ছাড়া বাকিগুলো হল হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, প্রগ্রেসিভ লাইফ, জেনারেশন নেক্সট, আফতাব অটো, জিকিউ বলপেন, প্রাইম লাইফ, আরামিট সিমেন্ট ও প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স। এগুলোর দর ৪.১৩ শতাংশ থেকে ৯.৯৬ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

পতনের শীর্ষে বস্ত্র কোম্পানি: সবচেয়ে বেশি ৮.৬৪ শতাংশ দর হারিয়েছে সোনারগাঁও টেক্সটাইল। ফ্লোর প্রাইসে মাসের পর মাস ক্রেতা খুঁজে না পাওয়ার পর হঠাৎ তিন কর্মদিবসে ৩৩ টাকা ১০ পয়সা থেকে ৪০ টাকা ৫০ পয়সায় উঠে গিয়েছিল কোম্পানিটির শেয়ারদর। এক দিনে সাড়ে তিন টাকা কমে দর দাঁড়িয়েছে ৩৭ টাকায়।

দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ঢাকা ডায়িং দর হারিয়েছে ৬.৮৯ শতাংশ। বস্ত্রের আরও দুই কোম্পানি অলটেক্স ও প্রাইম টেক্সও দর হারিয়েছে ছয় শতাংশের বেশি। দরপতনের শীর্ষে থাকা অন্য কোম্পানিগুলো হলো ফুওয়াং সিরামিকস, খুলনা পেপার মিলস, ডোমিনেজ স্টিলস, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, মাইডাস ফাইন্যান্স ও শ্যামপুর সুগার। এর মধ্যে ফুওয়াং সিরামিকস দর হারিয়েছে ৬ শতাংশের বেশি, বাকিগুলো দর হারিয়েছে ৫ শতাংশের বেশি। 

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top