শাহীনুর ইসলাম: এমারেল্ড ওয়েল কোম্পানি বছরে তিন হাজার টন অপরিশোধিত তেল জাপানে রফতানি করবে। এই রফতানি করতে জাপানী একটি কোম্পানির সঙ্গে সম্প্রতি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছে এমারেল্ড ওয়েল কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, বেসিক ব্যাংকের মোট ১৪০ কোটি টাকা ঋণ খেলাপী হওয়ায় এমারেল্ড ওয়েল ইন্ডাস্ট্রিজের ফ্যাক্টরি নিলামে তোলার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। চলতি সপ্তাহের মধ্যে নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।
আদালতের এ নির্দেশনার পরই রাষ্ট্রয়ত্ব বেসিক ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে রোববার সমঝোতার বৈঠকে বসেন এমারেল্ড ওয়েল কর্তৃপক্ষ। তবে আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়ায় সোমবার আবারো বৈঠকে বসবেন তারা। রোববার বিকালে কোম্পানির বিশেষ একটি সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
বিশেষ সূত্র জানায়, মিনোরি কোং লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান মিনোরি বাংলাদেশের এমারেল্ড ওয়েল লিমিটেডের ফ্যাক্টরিসহ সব সম্পদ ব্যাংকের কাছে দায়বদ্ধ। সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ হাসিবুল গনি গালিব ব্যাংকের কাছে দায়বদ্ধ রেখে কোম্পানি থেকে বিদায় নেন।
মিনোরির সব মিলে ঋণ প্রায় ১৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু এমারেল্ড ওয়েল লিমিটেডের ঋণ নিয়ে আমরা আলোচনা করছি। ব্যাংক নিলামে তুললে ফ্যাক্টরির দাম হবে ১০ কোটি টাকা। অন্যদিকে সুনাম ক্ষুণ্ন হবে। তাই আমরা ঋণ পরিশোধে সমঝোতার পথে অগ্রসর হচ্ছি। কাল (সোমবার) কোম্পানির এমডিসহ আলোচনা হবে।
বিশেষ সূত্র আরো জানায়, পুরনো মালিক ও বেসিক ব্যাংক থেকে ঋণ সম্পর্কে জানতে চাইলে এমারেল্ড অয়েলের লিগ্যাল অ্যাডভাইজার আবদুল হাই বলেন, আমি সেখানে এখন চাকরি করি না। পুরনো মালিকের ঋণ ছিল, ব্যাংকের কাছে দায়বদ্ধ ছিল; জানতাম। নতুন মালিকপক্ষ এসে কি করেছে এবং নতুন দায় কি- এতো কিছুই জানি না।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি এমারেল্ড ওয়েল গত বৃহস্পতিবার জাপানিজ কোম্পানি বি-বর্ন কোং লিমিটেডের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে চুক্তি অনুযায়ী এমারেল্ড ওয়েল বছরে তিন হাজার টন অপরিশোধিত তেল রপ্তানি করবে। এমারেল্ড ওয়েলের পক্ষে স্বাক্ষর করেন কোম্পানির প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আশরাফুল আলম এবং বি বর্ন কোং -এর পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী শিঙ্গো মিয়াউচি।
এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, তেল রপ্তানিতে চুক্তি করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় সব অনুমোদনের পর তেল রপ্তানি শুরু হবে। আগামী ৩-৪ মাসের মধ্যে রপ্তানি শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে, ২০১৭ সালে বেসিক ব্যাংকের অর্থঋণ আদালতে দায়ের করা একটি মামলার প্রেক্ষিতে মেনোরির সম্পদ নিলামে তোলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নিলামে তোলার অংশ হিসাবে আদালতের নির্দেশে গত ১৭ জুলাই কোম্পানির ফ্যাক্টরি এলাকায় ঘোষণা দেয়া হয়। এরপর সম্পদ নিলামের বিষয়ে চলতি সপ্তহে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে বেসিক ব্যাংক।
এমারেল্ড অয়েলের পুরনো মালিকরা বেসিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করে বিদেশ চলে যান। খেলাপী ঋণ আদায়ে সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ হাসিবুল গনি গালিবসহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা চলছে।
২০২১ সালে জাপানিজ কোম্পানি মিনোরি কোং লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান মিনোরি বাংলাদেশ, ৪০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগে কোম্পানিটিকে পুনরায় উৎপাদনে ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) থেকে অনুমোদন পায়।
ঋণ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে গালিবসহ পুরনো মালিকপক্ষ বিদেশে পালিয়ে যাওয়ায় পরে দেশের প্রথম বৃহৎ রাইস ব্র্যান অয়েল ‘স্পন্দন’ এর উৎপাদক বন্ধ হয়। প্রায় পাঁচ বছর উৎপাদন বন্ধ থাকার পরে নতুন পরিচালকরা কোম্পানির ফের উৎপাদন চালু করে।
উল্লেখ্য, তিন মাস ধরে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। গত ২৪ এপ্রিল কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার দাম ছিল ৪৩.৩ টাকা, তবে গত ১২ জুলাই শেয়ার দাম বেড়ে দাঁড়ায় ১৮২ টাকা। এরপর শেয়ার দাম কিছুটা কমলেও রোববার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৬৩.৪০ টাকায়।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।