স্টাফ রিপোর্টার: এবার ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির পরিচালনা পর্ষদ থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে সৌদি আরবের কোম্পানি আরবসাস ট্রাভেল অ্যান্ড টুরিস্ট এজেন্সি। তবে কোম্পানিটি এখনো শেয়ার বিক্রি করেনি। এর আগে ইসলামী ব্যাংকের পুরো শেয়ার ছেড়ে দিয়ে পরিচালনা থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছিল সরকারি প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)।
তারও আগে বেশ কিছু বিদেশি প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার বিক্রি করে দেয়। ২০১৭ সালে চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপ ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ হাতে নেওয়ার পর এই শেয়ার বিক্রি শুরু হয়। এসব শেয়ার কিনে ব্যাংকটির একক নিয়ন্ত্রণ হাতে নেয় এস আলম গ্রুপ। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে যে নানা অনিয়মের কারণে ব্যাংকটি এখন তারল্য সংকটে ভুগছে।
এ সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে পাঠানো ইসলামী ব্যাংকের এক চিঠিতে বলা হয়, সৌদি আরবভিত্তিক কোম্পানি আরবসাস ট্রাভেল অ্যান্ড টুরিস্ট এজেন্সি গত ৫ জুলাই একটি চিঠি পাঠিয়ে জানায়, তারা ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক পদে থাকবে না।
এরপর ২৬ জুলাই পরিচালনা পর্ষদের সভায় তা অনুমোদিত হয়। মুসাইদ আবদুল্লাহ এ আল-রাজি আরবসাসের পক্ষে দীর্ঘদিন ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আরবসাস ট্রাভেল ইসলামী ব্যাংকের ৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ শেয়ারের মালিক।
এ ছাড়া এস আলম গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানি নিজেদের মধ্যে শেয়ার হাতবদল করেছে এবং পর্ষদে প্রতিনিধি পরিবর্তন করেছে। জুলাইয়ে ইসলামী ব্যাংক আরমাডা স্পিনিং মিলস মনোনীত আবু সাঈদ মোহাম্মদ কাসেম, কিংসওয়ে এনডেভার্স মনোনীত শওকত হোসেন ও ইউনিগ্লোব বিজনেস রিসোর্সেস মনোনীত জামাল মোস্তফা চৌধুরীকে শেয়ারহোল্ডার পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়। ইসলামী ব্যাংকে এই ৩ প্রতিষ্ঠানের ১১ শতাংশ শেয়ার আছে।
এর আগে জুনে এসব কোম্পানি ব্যাংকটির পরিচালনা থেকে সরে দাঁড়ায়। ওই সময় ব্যাংকের পর্ষদে এই তিন কোম্পানির মনোনীত পরিচালক ছিলেন অধ্যাপক নাজমুল হাসান, অধ্যাপক সেলিম উদ্দিন ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা আবদুল মতিন।
জুনেই এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমের ছেলে আহসানুল আলমকে জেএমসি বিল্ডার্সের মনোনীত প্রতিনিধি হিসেবে ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডার পরিচালক ও চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
জানা গেছে, ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে জামায়াতে ইসলামী সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ২০১১ সাল পর্যন্ত একরকম নির্বিঘ্নেই ব্যাংকটি পরিচালনা করেছে। ২০১১ সালের নভেম্বরে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি নতুন নিয়ম করে, তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে পরিচালক হতে হলে ওই পরিচালকের হাতে কোম্পানিটির ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার থাকতে হবে। এই বিধান করার পর ব্যাংকটিতে জামায়াত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের একচ্ছত্র আধিপত্যে কিছুটা ভাটা পড়ে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানাচ্ছে, ২ শতাংশ শেয়ার ধারণের সুযোগ কাজে লাগিয়ে ২০১৭ সালে বাজার থেকে শেয়ার কিনে ব্যাংকটির মালিকানায় চলে আসে চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপ। এরপর দেশি-বিদেশি অনেক কোম্পানি ও ব্যক্তি শেয়ার ছেড়ে দিতে শুরু করে।
তবে পরবর্তীকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে ইসলামী ব্যাংকে ঋণ অনিয়মের নানা ঘটনা উঠে এলেও কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো টাকা ধার দিয়ে ব্যাংকটির কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানতে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলাকে ফোন করা হলে তিনি সাড়া দেননি।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।