শাহীনুর ইসলাম: মালিকানা বদল হওয়ার পাঁচ বছর পরে কোম্পানি ফিরেছে তেল উৎপাদনে। ইতোমধ্যে জাপানের একটি কোম্পানির সঙ্গে তেল রফতানি চুক্তিও করেছে কর্তৃপক্ষ। তারপরে আবারো উঠে এলো এমারেল্ড ওয়েল কোম্পানি লিমিটেডের সব সস্পত্তি নিলামে উঠছে।
যদিও ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসের শুরুতে আরো একবার নিলামের দরপত্র প্রকাশ করা হলেও সে যাত্রায় ঠেকানো হয়। দ্বিতীয় ধাপে নিলাম নিয়েই আশা-নিরাশায় দুলছে কোম্পানির কর্তৃপক্ষ ও বিনিয়োগকারীদের ভবিষ্যৎ।
চলতি বছরের ২৫ জুলাই জাতীয় একটি দৈনিকে প্রকাশিত দরপত্র অনুযায়ী ১৬ আগস্ট, আগামী সপ্তাহের বুধবার নিলামে উঠছে। ঋণের দায়ে আদালতের নির্দেশে নিলাম ঠেকাতে এমারেল্ড ওয়েল কোম্পানির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ চেষ্টা করেও ঠেকাতে পারছে না বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
তবে একটি পক্ষ জানিয়েছে, নিলাম শেষে তৃতীয়পক্ষের কাছ থেকে শুধুমাত্র তেল কারখানার জরুরি স্থাপনা কিনবে কোম্পানির পর্ষদ। তারা শেরপুরে অবস্থিত কোম্পানিটির মোট ৫০৮ শতাংশ জমি এবং এর উপর নির্মিত যাবতীয় স্থাপনা নিলাম গ্রহণকারী তৃতীয় ব্যাক্তির কাছ থেকে কেনার চিন্তাভাবনা করছে।
পাশাপাশি জামালপুরে অবস্থিত ২২৪ শতাংশ জমি এবং এর উপর নির্মিত যাবতীয় স্থাপনাও নিলামে বিক্রি করা হলেও তা নিতে চায় না নতুন পরিচালনা পর্ষদ। কেননা, কোম্পানির দায়বদ্ধ সব সম্পদ কিনতে হলে বেসিক ব্যাংককে ১৪০ কোটি টাকা প্রদান করতে হবে।
এই ঋণের গ্যারান্টার এবং বন্ধক দাতারা ছিলেন কোম্পানির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ হাসিবুল গণি গালিব, চেয়ারম্যান সৈয়দ মনোয়ারুল ইসলাম, পরিচালক সজন কুমার বসাক এবং অমিতাভ ভৌমিক। সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ হাসিবুল গনি গালিব ব্যাংকের কাছে দায়বদ্ধ রেখে কোম্পানি থেকে বিদায় নেন এবং দেশান্তরিত হন। তাই বেসিক ব্যাংক কোম্পানিটির বিরুদ্ধে অর্থ ঋণ আদালতে মামলা করেছে। আর আদালতের রায় অনুযায়ী ঋণের টাকা উদ্ধারে কোম্পানিটির বন্ধকী সম্পত্তি নিলামে বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে ব্যাংকটি।
ঋণের বিপরীতে ব্যাংকের কাছে কোম্পানির স্থাপনা এবং কারখানাসহ ৭৩২ শতাংশ জমি বন্ধক রয়েছে। বেসিক ব্যাংকের আরোপিত ও অনারোপিত সুদসহ এখন মোট ১৪০ কোটি টাকার ঋণ খেলাপী এমারেল্ড ওয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ। অনাদায়ী হওয়ায় ফ্যাক্টরি নিলামে তোলার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
নিলাম সম্পর্কে এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, আমরা নিলাম ঠেকাতে একাধিকবার চেষ্টা করেছি, ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনায় বসেছি। ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে ঋণের প্রিন্সিপাল মানি ফেরতের আশ্বাস দিয়েও কিছু করতে পারছি না। তবুও চেষ্টা চলছে।
একদিকে জাপানি কোম্পানির সঙ্গে তেল রফতানির চুক্তি এবং অন্যদিকে কোম্পানির নিলাম। দুটি ভিন্ন ইস্যুতে দেশের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে কি না -এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, পুরো কোম্পানির সম্পদ ৫০ কোটি হবে না। তাকে কেন আমি শত কোটি টাকার কিনব। আর গালিব সাহেবের সব সম্পদ তো ফ্যাক্টরির কাজে আসবে না। যা কাজে আসবে তাই আমরা কিনতে চাই।
এমন সংকটময় মুহূর্তে জাপানিজ কোম্পানি বি-বর্ন কোং লিমিটেড নতুন করে ১১ লাখ শেয়ার কিনতে চায়। বিষয়টি সম্পর্কে আফজাল হোসেন আরো বলেন, জাপনিজ কোম্পানির আগ্রহকে আমরা স্বাগত জানিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিকে জানিয়েছি। তারা বাজার থেকে এই শেয়ার কিনবে।
বিশেষ একটি সূত্র জানায়, মিনোরি কোং লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান মিনোরি বাংলাদেশের এমারেল্ড ওয়েল লিমিটেডের ফ্যাক্টরিসহ সব সম্পদ বেসিক ব্যাংকের কাছে দায়বদ্ধ। সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ হাসিবুল গনি গালিব ব্যাংকের কাছে দায়বদ্ধ রেখে কোম্পানি থেকে বিদায় নেন।
মিনোরির সব মিলে ঋণ প্রায় ১৪০ কোটি টাকা। ঋণ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে গালিবসহ পুরনো মালিকপক্ষ বিদেশে পালিয়ে যাওয়ায় পরে দেশের প্রথম বৃহৎ রাইস ব্র্যান অয়েল ‘স্পন্দন’ এর উৎপাদক বন্ধ হয়। প্রায় পাঁচ বছর উৎপাদন বন্ধ থাকার পরে নতুন পরিচালকরা কোম্পানির ফের উৎপাদন চালু করে।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি এমারেল্ড ওয়েল ২০ জুলাই জাপানিজ কোম্পানি বি-বর্ন কোং লিমিটেডের সঙ্গে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে চুক্তি অনুযায়ী এমারেল্ড ওয়েল বছরে তিন হাজার টন অপরিশোধিত তেল রপ্তানি করবে। এমারেল্ড ওয়েলের পক্ষে স্বাক্ষর করেন কোম্পানির প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আশরাফুল আলম এবং বি বর্ন কোং -এর পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী শিঙ্গো মিয়াউচি।
তেল রফতানি সম্পর্কে এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, তেল রপ্তানিতে চুক্তি করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় সব অনুমোদনের পর তেল রপ্তানি শুরু হবে। আগামী ৩-৪ মাসের মধ্যে রপ্তানি শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।