সকল মেনু

নন-লাইফ বীমা শিল্পের বিকাশে কিছু সুপারিশ

আহমেদ সাইফুদ্দীন চৌধুরী: নন-লাইফ বীমা শিল্পের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করলে অনকে সমস্যা চোখে পড়ে। সেসব সমস্যাকে সম্ভাবনায় রুপ দিতে কিছু নিয়ম-নীতি সংশোধন করা প্রয়োজন। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের বীমাখাত জাতীয় অর্থনীতিতে তার কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক নয়। যা ভবিষ্যৎ বীমা শিল্পের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

(বীমা খাতের সফল ব্যক্তিত্ব আহমেদ সাইফুদ্দীন চৌধুরী। কর্মজীবনের শুরু থেকে বেছে নিয়েছেন বীমা পেশাকে। দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছেন বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে। বর্তমানে এই কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন।)

নন-লাইফ বীমা শিল্পের বিকাশে সমস্যা-

  1. নির্ধারিত এজেন্ট কমিশনের অতিরিক্ত কমিশন প্রদান
  2. বিশ্ব বীমা বাজারের সঙ্গে বীমার প্রিমিয়াম হার অনেক বেশী
  3. নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ক্ষেত্রে এজেন্ট প্রথা বিলুপ্ত করা প্রয়োজন
  4. নন-লাইফ বীমা খাতে পণ্যের স্বল্পতা
  5. নন-লাইফ বীমার ক্ষেত্র বা পরিধি বিস্তারে বীমার খাতগুলো চিহ্নিত করে বাধ্যতামূলক করা

নন-লাইফ বীমা আইনের কিছু ধারা সংশোধন করে শিল্পের উন্নয়নে বাস্তবমূখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। সমস্যা সমাধান এবং নন-লাইফ বীমা শিল্পের বিকাশে কিছু সুপারিশ করছি-

  • বে-সরকারি খাতের নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স শিল্প বিকাশে সরকারি সম্পত্তির বীমা শুধুমাত্র সাধারণ বীমা করপোরেশনের ওপর অর্পিত করা প্রয়োজন। এতে বীমা ক্ষেত্রে সুষ্ঠু শৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে। সরকারি সম্পত্তির বীমার প্রিমিয়াম অর্থাৎ ৫০ শতাংশ সব বে-সরকারি নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মধ্যে সমহারে বিতরণ করার যে প্রচলন রয়েছে তা বিলুপ্ত করা প্রয়োজন।
  • নন-লাইফ বীমা শিল্পের সুষ্ঠু এবং স্বচ্ছ বাজার সৃষ্টির লক্ষ্যে বাংলাদেশে নন-ট্যারিফ মার্কেট বিবেচনা করা সময়োপযোগী হবে। কারণ বাংলাদেশে ট্যারিফ মার্কেটের হার বিশ্ববাজার থেকে অনেক বেশি। যার ফলে অতিরিক্ত কমিশন প্রদানের প্রবণতার সৃষ্টি হয়। তাছাড়া নন-ট্যারিফ মার্কেটের ফলে বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক বীমা সেবা প্রদানে সক্ষম হবে।
  • পুন:বীমার ক্ষেত্রে বর্তমানে প্রচলিত আইন অর্থাৎ ৫০% বাধ্যতামূলক সাধারণ বীমা করপোরেশনের সাথে পুন:বীমা করতে হবে বাকি ৫০% ওভারসিস মার্কেটে করা যায়, তা হ্রাস করে ৩০% সাধারণ বীমা করপোরেশনের সাথে এবং ৭০% ওভারসিস মার্কেটে করার বিবেচনা করা যেতে পারে। তবে ৭০% এর ক্ষেত্রে বিকল্প থাকতে পারে, যেকোন কোম্পানি তা সাধারণ বীমা করপোরেশন অথবা বিদেশি পুন:বীমাকারীদের সঙ্গে পুন:বীমা করতে পারবে।
  • যে কোন নন-লাইফ বীমার নতুন পণ্য যে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি উদ্ভাবন করবে তাকে প্রথমে বাজারজাত করার সুযোগ দিতে হবে এবং যদি সফলতা আসে তবে বীমা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ থেকে সেই কোম্পানিকে নতুন উদ্ভাবিত পণ্যের অনুমোদন দেবে। এতে যেমন নিয়ম-নীতির বাধ্যবাধকতা হ্রাস পাবে। অন্যদিকে, অনেক কোম্পানি নতুন পণ্য উদ্ভাবনে উৎসাহ পাবে।

মূলত বীমা দাবি যে কোন নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির স্বক্ষমতা পরিমাপের প্রধান মানদণ্ড। তাই বর্তমানে প্রচলিত বীমা দাবি নিস্পত্তির ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরণের তথ্যাদি ও নথিপত্র প্রদানে যে প্রক্রিয়া রয়েছে তা সহজীকরণ প্রয়োজন এবং তা সম্ভব।

  • নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির বীমাপত্র প্রসারে প্রিমিয়াম পরিশোধে কিছু পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। প্রিমিয়াম পরিশোধের পরবর্তী দিনে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকরণের যে আইন আছে তা কিছুটা শিথিল করে নূন্যতম ০১ (এক) মাস করা প্রয়োজন। এক মাসের পরও যদি প্রিমিয়াম পরিশোধ না হয়, তবে প্রতিদিনের জন্য বিবেচনাযোগ্য জরিমানা আরোপ করা যেতে পারে।

বিষয়াগুলো পর্যালোচনা ও বিবেচনা করে সুষ্ঠ ও বাস্তবসম্মত বীমা কর্মকাণ্ড পরিচালনায় নিয়ম-নীতি সংশোধন করে আমরা আরো সক্ষমতা আনতে পারি- তাহলে নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ওপর গ্রাহকের আস্থা বাড়বে এবং বীমা শিল্পের অভূতপূর্ব বিকাশ ঘটবে। যা জাতীয় অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকার প্রতিফলন ঘটাবে।

আমি মনে করি সবার সম্মিলিত বাস্তব চিন্তাধারা নন-লাইফ বীমা শিল্পের বিকাশ ঘটাতে সম্ভব।

  • লেখক: মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, বাংলাদেশ জেনারেল ইনসিওরেন্স কোম্পানি লিমিটেড

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top