সিনিয়র রিপোর্টার: শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) শর্তসাপেক্ষে ওয়াইজ স্টার টেক্সটাইল মিলস এবং সিঙ্গাপুর-ভিত্তিক পাঁচটি প্রাইভেট কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত রিং শাইন টেক্সটাইল অধিগ্রহণের অনুমতি দিয়েছে।
চলতি আগস্ট মাসের শুরুর দিকে বিএসইসি কোম্পানিটি অধিগ্রহণ করার একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। তবে এখনও এই বিষয়ে কোনো চিঠি দেয়নি বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।
প্রস্তাব মোতাবেক, ছয়টি কোম্পানি রিং শাইনের ৩৭.৯৮ শতাংশ শেয়ার অধিগ্রহণ করবে, যার মধ্যে স্পনসর এবং পরিচালকদের হাতে থাকা শেয়ার রয়েছে।
আলোচ্য শেয়ারের মধ্যে ওয়াইজ স্টার ২ শতাংশ এবং বাকি ২৫.৯৮ শতাংশ শেয়ার সিঙ্গাপুর-ভিত্তিক কোম্পানিগুলি গ্রহণ করবে। শেয়াররের বিনিময় মূল্য আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ করা হবে বলে জানা গেছে।
শেয়ারগুলি স্পন্সর এবং পরিচালকদের জন্য পাবলিক ক্যাটাগরিতে রাখা হবে। কারণ মালিকরা কোম্পানিটির শেয়ারহোল্ডার-পরিচালক হবেন, স্পনসর নয়।
ওয়াইজ স্টার প্রতিষ্ঠানটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কুইন সাউথ টেক্সটাইল মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ওয়াং জেমির মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। নতুন মালিকরা রিং শাইনের দায়ভার এবং অন্যান্য পাওনা গ্রহণ করবে এবং রিং শাইনের ব্যাংক ঋণ নিয়মিত করবে মর্মে নতুন একটি গ্যারান্টি প্রদান করবে।
রিং শাইন বস্ত্র খাতে বৃহত্তম উৎপাদনকারী কোম্পানি যেটি ২০১৯ সালে অভিহিত মূল্যে শেয়ারবাজার থেকে ১৫০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছিল। কিন্তু তালিকাভুক্তির পর নানা সমস্যার কারণে এটি সঠিকভাবে ব্যবসা করতে পারেনি।
কোম্পানিটি বিদ্যমান স্পনসর, পরিচালক এবং ৭৩ জন শেয়ারহোল্ডারদের কাছে প্লেসমেন্ট শেয়ার বা প্রাক-আইপিও শেয়ার ইস্যু করার মাধ্যমে পরিশোধিত মূলধন ৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা থেকে ২৮৫ কোটি ৫ লাখ টাকায় বৃদ্ধি করেছিল।
তবে, ১১ জন স্পনসর ও পরিচালক এবং ৩৩ জন শেয়ারহোল্ডার তাদের বরাদ্দকৃত শেয়ারের বিপরীতে কোনো অর্থ প্রদান করেননি।
২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে মহামারি করোনার প্রার্দুভাব দেখা দিলে কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। প্রয়োজনীয় মূলধন ঘাটতি, বিদেশী ক্রেতাদের কাছ থেকে অর্ডার কমে যাওয়া এবং কাঁচামালের অভাবে মূলত কারখানাটি বন্ধ হয়ে যায়।
এরপর ২০২১ সালের জানুয়ারী মাসে বিএসইসি কোম্পানিকে উৎপাদনে ফেরানোর জন্য এর বোর্ড পুনর্গঠন করে। কোম্পানিটির সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে এবং কীভাবে এটি পরিচালনা করতে হবে, তার একটি পরিকল্পনা করতে সাত জন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০২১ সালের জুন মাসে কারখানাটিতে উৎপাদনও শুরু হয়।
কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোম্পানিটির নতুন পরিচালনা পর্ষদ পরিশোধিত মূলধন বিবেচনা করবে। তবে কোম্পানির নতুন পর্ষদ আগের পর্ষদের কোন আইনি দায়ভার নেবে না।
প্রস্তাব অনুযায়ী, কোম্পানিটি সঠিকভাবে চালানোর পর কমিশন প্রাথমিক পাবলিক অফার (আইপিও) তহবিলের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে। সংস্থাটির জন্য বেশ কয়েকজন স্বতন্ত্র পরিচালক মনোনীত করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এই বিষয়ে বিএসইসি কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, কোম্পানিটি যাতে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হতে পারে, সেজন্য সব দিক বিবেচনা করে কমিশন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অনিয়মের জন্য আগের উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
কোম্পানির একজন কর্মকর্তা বলেন, রিং শাইন অধিগ্রহণকারী কোম্পানিগুলোর নতুন কোনো বিনিয়োগ পরিকল্পনা নেই। তিনি জানান, সিঙ্গাপুর ভিত্তিক পাঁচটি প্রাইভেট কোম্পানির বাংলাদেশে কোনো কার্যক্রম নেই।
বর্তমানে রিং শাইন টেক্সটাইলের ব্যাংক ঋণ দাঁড়িয়েছে ৫৫০ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) ৮০ কোটি টাকা বেশি।
রিং শাইন প্রধানত স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারের জন্য রঙ্গিন সুতা এবং ধূসর এবং বিভিন্ন গুণাবলী সম্পন্ন ফ্লিস কাপড় তৈরি করে।
সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই’২২০মার্চ’২৩) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ১ টাকা ৪৯ পয়সা। যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৯৪ পয়সা।
আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য দাঁড়িয়েছে নেগেটিভ ৩ টাকা ৯৪ পয়সা। যা আগের বছর একই সময়ে ছিল নেগেটিভ ২ টাকা ৫০ পয়সা।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।