সকল মেনু

ডাইং শিল্পে ২ বছর ধরে নতুন বিনিয়োগ নেই

বিশেষ প্রতিনিধি: পোশাক রপ্তানিকারকদের কাছ থেকে কাপড়ের চাহিদা বেশি থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের ডাইং সেক্টরে বিনিয়োগ কমেছে। কারণ, টেক্সটাইল ও অ্যাপারেল সাপ্লাই চেইনের গুরুত্বপূর্ণ এই শিল্পে প্রয়োজন অনুযায়ী গ্যাসের সরবরাহ নেই।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মনসুর আহমেদ বলেন, জ্বালানি সংকট ও ব্যয় বৃদ্ধির কারণে এই খাতে বিনিয়োগ বাড়েনি। ফলে, গত ২ বছরে দেশে কোনো নতুন ডাইং কারখানা স্থাপিত হয়নি।

এই শিল্পে জ্বালানির চাহিদা বাড়লেও স্থানীয়ভাবে উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়েনি। ফলে, টেক্সটাইল মিলারদের জন্য অপর্যাপ্ত গ্যাস দীর্ঘ দিনের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে ২০১৮ সালে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দিকে ঝুঁকে বাংলাদেশ।

কিন্তু, মার্কিন ডলারের ঘাটতির কারণে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা বন্ধ করতে বাধ্য হয় সরকার। এতে গ্যাসের সরবরাহ কমে যায় এবং ডাইং শিল্পে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

সরকার ২০২৩ সালের শুরুতে আন্তর্জাতিক স্পট মার্কেট থেকে আবার এলএনজি কেনা শুরু করলেও, এই শিল্প এখনো জ্বালানি ঘাটতি পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি।

টেক্সটাইল মিলাররা বলছেন, এখানে নতুন বিনিয়োগের অভাব আছে। এছাড়া, স্থানীয় নিট ও ওভেন ফ্যাব্রিকস নির্মাতাদের কাছ থেকে অর্ডার থাকলেও জ্বালানি বিদ্যমান ডাইং কারখানাগুলো অর্ধেক সক্ষমতায় চলছে।

এদিকে বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে আন্তর্জাতিক খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলো তাদের লিড টাইম ৯০-১২০ দিন থেকে কমিয়ে ৩০-৪৫ দিন করেছে। এতে বাংলাদেশের তৈরি কাপড়ের ব্যবহার বাড়ছে।

এর অর্থ পোশাক রপ্তানিকারকদের দেশীয় কাপড় ব্যবহার করা ছাড়া অন্য কোনও উপায় নেই। কারণ চীন ও অন্যান্য দেশ থেকে কাপড় আমদানি করতে সময় লাগে। আর যদি তারা টেক্সটাইল পণ্যের জন্য বাইরের বাজারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, তাহলে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে পণ্য উৎপাদন করে সরবরাহ করা কঠিন হয়ে পড়বে।

বর্তমানে দেশীয় স্পিনাররা প্রায় ৯০ শতাংশ কাপড় সরবরাহ করতে পারে এবং তাঁতিরা কাপড়ের চাহিদার ৪০ শতাংশের বেশি পূরণ করতে পারে। গত অর্থবছরে এই খাতে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ছিল ৫৫ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার, যা রপ্তানি আয়ের ৮৫ শতাংশের বেশি।

বাংলাদেশে প্রায় ৪০০টি বড় ডাইং ইউনিট নিট ও বোনা কাপড়ের পুরো চাহিদা মেটাতে সক্ষম।

নারায়ণগঞ্জের টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান মিথেলা গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. আজাহার খান বলেন, পোশাক প্রস্তুতকারক ও সরবরাহকারীদের কাছ থেকে আমাদের প্রচুর ওয়ার্ক অর্ডার আছে। বর্তমান অর্ডার দিয়ে ৮০০ ডায়িং নির্বিঘ্নে চলতে পারবে।’

তিনি বলেন, অনেক সুযোগ থাকা সত্ত্বেও গ্যাস সংকটের কারণে স্থানীয় ডাইয়াররা ধারণক্ষমতার ৫০ শতাংশ ব্যবহার করতে পারছেন। ডাইং ইউনিট ও বয়লার পরিচালনার জন্য প্রচুর গ্যাসের চাপ প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, কিছু ডাইং ইউনিট চালের তুষ ব্যবহার করে চলছে। কিন্তু, এতো বেশি পরিমাণ তুষের রক্ষণাবেক্ষণ করা মিলারদের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং।

নারায়ণগঞ্জের টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস ইউনিট এনজেড টেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সালিউদ জামান খান জানান, তিনি আগে ডাইংয়ের জন্য কয়লা দিয়ে বয়লার চালাতেন। কিন্তু, আন্তর্জাতিক পোশাক বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলোর পরিবেশগত শর্তের কারণে এখন তা সম্ভব হচ্ছে না।

‘কখনো কখনো ডিজেলও ব্যবহার করা হয়, তবে এটি ব্যয়বহুল,’ বলেন তিনি।

এনজেড টেক্স বর্তমানে ২ লাখ মিটার ধারণ ক্ষমতার বিপরীতে প্রতিদিন ১ দশমিক ২৫ লাখ মিটার ডাইং করছে।

তিনি পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, টেক্সটাইল খাতে গ্যাস পোড়ানোর জন্য ২ ডলার ব্যয় করলে ৩৮ ডলার আয় হতে পারে। তাই ডাইং খাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্যাস সরবরাহ করা না হলে পোশাক রপ্তানি কমতে পারে।

মনসুর আহমেদ বলেন, ‘কয়েক বছর আগে ডাইং ইউনিট স্থাপনে ২০০ থেকে ২৫০ কোটি টাকা খরচ হতো, এখন ৫০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকা প্রয়োজন। কারণ ডাইং ইউনিটগুলোর জন্য আধুনিক বর্জ্য শোধনাগার প্রয়োজন, যা ব্যয়বহুল।’

বিটিএমএ’র সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, ‘যেখানে গ্যাস সরবরাহ অপ্রতুল, সেখানে বড় বিনিয়োগের পরিকল্পনা করা বেশ কঠিন। গ্যাসের সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় কেউ ঝুঁকি নিতে চায় না। গ্যাসের বর্তমান চাপ দিয়ে বয়লার ও জেনারেটর চালানো সম্ভব নয়।’

তিনি মন্তব্য করেন, বর্তমান আর্থিক সংকটে ডাইং ইউনিট স্থাপনে ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা সম্ভব নয়।

এই শিল্পে পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ করা না হলে ২০৩০ সালের মধ্যে ১০ হাজার কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top