সিনিয়র রিপোর্টার: বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) ২০১৭ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে আমরা নেটওয়ার্কস লিমিটেড। প্রোসপেক্টাস অনুসারে, শেয়ারের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৫০ লাখ ৪১ হাজার ২০৯টি। তার রিপরীতে আইপিওতে পুঁজিবাজার থেকে ৫৬ কোটি ২৫ লাখ ৭ টাকা তুলে নেয়।
২০১৭ সালে তালিকাভুক্ত হওয়া পারিবারিক কোম্পানিটির ৬ বছরে শেয়ারের পরিমাণ হয়েছে ৫গুণ।
অর্থাৎ ১ কোটি ৫০ লাখ ৪১ হাজার ২০৯টি শেয়ারের বিপরীতে ২০২৩ সালে হয়েছে ৬ কোটি ১৯ লাখ ৮৬ হাজার ৬০৮টি। বোনাস শেয়ারের নামে কোম্পানির কর্তৃপক্ষ মুলধন বৃদ্ধি করেছে ৫ গুণ। তবুও মুনাফা করতে না পারায় বোনাস শেয়ারের নামে শুধুই ‘বিনিয়োগকারী ঠকিয়েছে।’
সেই আমরা নেটওয়ার্কস নতুন করে ফাঁদ পেতেছে। কোম্পানির কর্তৃপক্ষ ২:১ হারে রাইট শেয়ার রাইট শেয়ার ইস্যু করবে বলে সোমবার (২১ আগস্ট) পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
২০১৭ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পরে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেয়ার ইতিহাস খুব ভালো নয়। তালিকাভুক্তির ৬ বছরে নগদ এবং বোনাস মিলে ১০ শতাংশ করে লভ্যাংশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
প্রবল তারল্য সংকটে থাকা কোম্পানির কর্তৃপক্ষ ৩০ জুন, ২০২৩ তারিখে সমাপ্ত হিসাব বছরের সোমবারের ভেটকে ১১ শতাংশ হারে লভ্যাংশের ঘোষণা করে। কোম্পানির বর্তমান ৬ কোটি ১৯ লাখ ৮৬ হাজার ৬০৮টি শেয়ারের বিপরীতে শেয়ারহোল্ডাররা মোট ৬ কোটি ৮১ লাখ ৮৫ হাজার ২৬৮ টাকা লভ্যাংশ পাবেন। বাকি টাকা কোম্পানির রিজার্ভে জমা হবে।
পারিবারিক এই গ্রুপের আমরা টেকনোলজি নামে আরো একটি কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৬ বছরে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি দরে বিশেষ উত্থান দেখা যায়নি। যদিও গত দুই বছরের মধ্যে চলতি বছরের ২৬ এপ্রিল সর্বোচ্চ দর ছিল ৮৬ টাকা। সোমবার (২১ আগস্ট) ছিল ৬৩ টাকা।
কোম্পানির তথ্য মতে, ২০২২-২৩ সমাপ্ত বছরে শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) দাঁড়িয়েছে ৩ টাকা ৬৪ পয়সা। সেখান থেকে ১ টাকা ১০ পয়সা বা ১১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পর্ষদ।
২০২২ সালে শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছিল। এর মধ্যে ৫ শতাংশ নগদ এবং ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দেয়। আগের বছরগুলোতে লভ্যাংশ দেয়ার প্রবণতা নেই। প্রবল তারল্য সংকটের কারণে নতুন করে বিপুল পরিমাণ টাকা যোগানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানির কর্তৃপক্ষ।
আইপিওতে আসা এবং রাইট শেয়ারের সিদ্ধান্ত প্রায় একই বলে মনে করছেন অনেক বিনিয়োগকারী।
তথ্যানুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০১৭ সালে আইপিওতে ৫৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা তুলে নেয়। সেই টাকায় আমরা নেটওয়ার্কের বিএমআরই (আধুনিকায়ন), ডাটা সেন্টার প্রতিষ্ঠা, দেশের বিভিন্ন স্থানে ওয়াইফাই হটস্পট প্রতিষ্ঠা, আইপিওর খরচ ও ঋণ পরিশোধ করা হবে প্রোসপেক্টাসে উল্লেখ করা হয়।
যদিও সেই টাকায় কোম্পানি বিশেষ মুনাফা করতে পারেনি। যার কারণে ২০২২ সালের জুলাইয়ে প্রায় ৩৪ কোটি টাকা রাজস্ব বকেয়া পড়ে। রাজস্ব পরিশোধ না করায় ৫০ শতাংশ ব্যান্ডউইথ ব্লকের নির্দেশ বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।
বিটিআরসির সেই চিঠিতে বলা হয়, ‘সরকারের বকেয়া রাজস্ব যথা সময়ে না দেওয়ায় ৫০ শতাংশ ব্যান্ডউইথ ব্লক করে বিটিআরসিকে অবহিতকরণের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।’
আবারো রাইট শেয়ারের মাধ্যমে তুলে নেবে টাকা। সেই টাকায় বিএমআরই (নেটওয়ার্কিং সিস্টেম আপডেট, নেটওয়ার্কের আওতাধীন এলাকা সম্প্রসারণ) ও আংশিক ব্যাংক ঋণ পরিশোধে ব্যয় করবে বলে ঘোষণা দেয় আমরা নেটওয়ার্কস কর্তৃপক্ষ।
সিদ্ধান্ত অনুসারে, ২:১ হারে রাইট শেয়ার অর্থাৎ বিদ্যমান প্রতি ২টি শেয়ারের বিপরীতে ১টি রাইট শেয়ার ইস্যু করা হবে। রাইট শেয়ারের অফার মূল্য হবে ৩০ টাকা। অর্থাৎ ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ারের বিপরীতে ২০ টাকা করে প্রিমিয়াম নেয়া হবে।
রাইট শেয়ার ইস্যুর সিদ্ধান্তের বিষয়ে শেয়ারহোল্ডারদের সম্মতি নিতে আগামী ৪ অক্টোবর বার্ষিক সাধারণ সভায় উত্থাপন করা হবে। শেয়ারহোল্ডাররা সম্মতি দিলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) আবেদন করবে আমরা নেটওয়ার্কস। বিএসইসির অনুমোদন পেলে সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।
সরকারের প্রভাবশালী কোম্পানির কর্তৃপক্ষ; যে কারণে রাইট শেয়ার অনুমোদনের বিশেষ সম্ভাবনাও রয়েছে।
পুঁজিবাজারে তারল্য সংকটকালে রাইট শেয়ারের মাধ্যমে নতুন অর্থের যোগানকে ভিন্ন চোখে দেখছেন বিনিয়োগকারীরা। অন্যদিকে, মুনাফায় ব্যর্থ কোম্পানির শেয়ারপ্রতি ২০ টাকা প্রিমিয়াম দাবি বাস্তবসম্মত কি না, সে নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা।
তথ্যানুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০১৭ সালে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে ১ কোটি ৫০ লাখ ৪১ হাজার ২০৯টি শেয়ারের মধ্যে ৬০ লাখ ২৬ হাজার ৭৮৬টি ছিল সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য নির্ধারিত। ৩৫ টাকা নির্ধারিত দরে মোট শেয়ারের ৪০ শতাংশ বিক্রি করে ২১ কোটি ৯ লাখ ৩৭ হাজার ৫১০ টাকা নেয় কর্তৃপক্ষ।
বাকি ৬০ শতাংশ বা ৯০ লাখ ১৪ হাজার ৪২৩টি শেয়ার গ্রহণ করেন মিউচ্যুয়াল ফান্ডসহ বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী। শেয়ারপ্রতি ৩৯ টাকা দরে ৩৫ কোটি ১৫ লাখ ৬২ হাজার ৪৯৭ টাকা তুলে নেয় আমরা নেট।
আমরা নেটওয়ার্কসের মার্কেট লট ১০০ শেয়ারের বিপরীতে আবেদন ফি ছিল ৩৫০০ টাকা।
ইস্যু ম্যানেজার ছিল লংকাবাংলা ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড এবং রেজিস্টার টু দ্য ইস্যুর দায়িত্বে আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।